বাংলারজমিন
যেভাবে হত্যা করা হয় শিশু লাবিবকে
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
১ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ৫ বছর বয়সী শিশু লাবিব ওরফে রাব্বিকে হত্যার পর পরিত্যক্ত ঘরের চৌকির নিচে লতাপাতা ও টিন দিয়ে চাপা দেয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনার মূলহোতা মো. দিদারুল ইসলাম পায়েল (৩৩) ও তার সহযোগী আব্দুল কাইয়ুম ওরফে তনয় খান (১৯)কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে নিকলী উপজেলার রসুলপুর বাজার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে গতকাল আদালতে পাঠানো হলে হোতা মো. দিদারুল ইসলাম পায়েল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বিকালে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশিকুর রহমান ১৬৪ ধারায় মো. দিদারুল ইসলাম পায়েলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে এবং তার সহযোগী আব্দুল কাইয়ুম ওরফে তনয় খানকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
তাদের মধ্যে মো. দিদারুল ইসলাম পায়েল নিকলী উপজেলার ছাতিরচর দক্ষিণপাড়ার মো. তৈয়ব আলী ওরফে বছিরের ছেলে এবং আব্দুল কাইয়ুম ওরফে তনয় খান উপজেলার কুর্শা মাইজহাটির জমশেদ খানের ছেলে। অন্যদিকে নিহত শিশু লাবিব ওরফে রাব্বি কুর্শা মাইজহাটির আমির হোসেনের ছেলে। সে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে প্লে শ্রেণিতে পড়তো। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিকলী থানার ওসি মো. সারোয়ার জাহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে চাঞ্চল্যকর শিশু রাব্বি হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার)।
ফলে স্বামী-স্ত্রী আলাদা বসবাস শুরু করে। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে স্ত্রী দিনার বড় ভাই আমির হোসেনের সঙ্গে পায়েলের মারামারির ঘটনা ঘটে। পারিবারিক এসব দ্বন্দ্বের জের ধরে আমির হোসেনকে উচিত শিক্ষা দিতে তার শিশুসন্তান রাব্বিকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে পায়েল। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১৯শে মে সন্ধ্যায় সহযোগী তনয় খানকে নিয়ে পায়েল কিলিং মিশনে নামে। তনয় খান তার নিজের মুখে গামছা পেঁচিয়ে শিশু রাব্বিকে স্থানীয় মসজিদের সামনে থেকে স্থানীয় মুখলেছ ডাক্তারের পতিত জমির উত্তর পাশে নিয়ে যায়। সেখানে শিশু রাব্বির ঘাড় মটকে দিয়ে এবং নাকে ও মুখে মাটি ঢুকিয়ে তারা শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর শিশুটির মরদেহ স্থানীয় তুহিন খানের পরিত্যক্ত দোচালা ঘরের বারান্দার চৌকির নিচে লুকিয়ে রেখে পায়েল ও তনয় খান পালিয়ে যায়।
পরদিন ২০শে মে বিকালে শিশুটির মরদেহ উদ্ধারের পর এ ঘটনায় নিহত রাব্বির পিতা আমির হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিকলী থানার ওসি মো. সারোয়ার জাহানের তদন্তে এ হত্যা রহস্যের জট খুলে। এ মামলায় সন্দিগ্ধ হিসেবে পায়েল ও তনয় খানকে আটক করার পর হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে অকপট স্বীকারোক্তি দেয় পায়েল। প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. আল আমিন হোসাইন, হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিকলী থানার ওসি মো. সারোয়ার জাহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।