শেষের পাতা
সিন্ডিকেটের কবলে মৌলভীবাজারের পুস্তক ব্যবসায়ীরা, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
৩১ মে ২০২৩, বুধবার
নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে গাইড বই (সহায়ক গ্রন্থ) বিক্রি করায় সিন্ডিকেটের চক্ষুশূল হয়েছেন মৌলভীবাজার জেলার একাধিক পুস্তক ব্যবসায়ী। ওই চক্রের খপ্পরে পড়ে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পুস্তক ব্যবসায়ীরা। আর ন্যায্যমূল্যে সহায়ক বইসহ শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। ওই সিন্ডিকেটের এমন আচরণে এ জেলার একাধিক পুস্তক বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা এর প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না।
সূত্র মতে, নির্ধারিত মূল্যের ছয়শ’ টাকার গাইড বই বিশ টাকা কমে বিক্রি করার অভিযোগ এনে কোনো প্রকার প্রমাণ বা শুনানি ছাড়াই বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নাম ব্যবহার করে স্থানীয় গুটিকয়েক ব্যক্তি মৌলভীবাজার শহরের সুনামধন্য পুস্তক বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠান ইসলামিয়া লাইব্রেরিসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিন হাজার টাকা করে জরিমানা করে। জরিমানার বিষয়টি জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রচারিত হলে জেলা প্রশাসকের নামে জাল অভিযোগপত্র দিয়ে ৩০শে জানুয়ারি ব্ল্যাকমেইল করে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আবারো একই কায়দায় ফেব্রুয়ারি মাসেও আর দুই হাজার টাকা জরিমানা করে। অবৈধ পাঁচ হাজার টাকা দেয়ার পরও পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি থেকে বই সরবরাহ পাচ্ছে না ওই প্রতিষ্ঠানসহ জেলা ও উপজেলার একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বরং তাদের প্রতিবন্ধকতায় বই সরবরাহ বন্ধ হওয়াতে ব্যবসা চালু রাখা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস) কেন্দ্রীয় সভাপতির বরাবরে জালিয়াতি তদন্ত করার আবেদন করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি বরং ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মৌলভীবাজার শহরের ইসলামিয়া লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী যোবের আহমদ সালেহ। এ ছাড়াও জেলার ৩০-৩৫ জন পুস্তক ব্যবসায়ীকে একই কায়দায় ওই চক্রটি একাধিকবার ২-৩ হাজার টাকা তাদের মনগড়া জরিমানা করে।
এ বিষয়ে অভিভাবক, বাপার মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক, রাজনৈতিক ও সমাজকর্মী আ স ম ছালেহ সুহেল ও সম্মিলিত সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ মৌলভীবাজার এর সহ-সভাপতি সমাজকর্মী এম মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক কম দামে বিক্রি করাতে জরিমানা করে বই বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সবকিছুতেই কেন এমন সিন্ডিকেট প্রথা। এ বিষয়ে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আমরা শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঠে আন্দোলনে নামবো।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান বলেন, এটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। আমরা শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোর আন্দোলন করছি। আর এখানে দাম কমানোতে সিন্ডিকেটরা ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে।
জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক মো. বেলাল হোসাইন বলেন, শিক্ষাবান্ধব এ সরকার শিক্ষা উপকরণের দাম কমিয়ে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে। আর অতি মুনাফালোভী একটি কুচক্রী মহল সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে তারা নিজেদের আখের গোছাতে তৎপর। ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
জেলা জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি মো. আবদাল হোসাইন বলেন, এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কম দামে বিক্রি করায় জরিমানা করে এখন ওদের ব্যবসা বন্ধ করার পাঁয়তারা। গরিব শিক্ষার্থীরা কীভাবে শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করবে তা কি ওরা ভাবে না। দ্রুত সমাধান না হলে আমরা আন্দোলনে নামবো।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস) সিলেট বিভাগের পরিচালক মো. খলিলুর রহমানের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বর্ণালী পালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।
পাঠকের মতামত
এটা খুবই দুঃখজনক কম দামে বিক্রি করাতে জরিমানা করে বই বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সবকিছুতেই কেন এমন সিন্ডিকেট প্রথা। এ বিষয়ে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহব্বান জানাচ্ছি।
বইয়ের কথা বলে আর কি হবে ২ দিন আগে যেই বই Cambridge এর বই কিনেছি ৪০ টাকা দুইদিন পর তা ৬০ টাকা। আর এই বইগুলো কপি করা আসল নয় তবুও দাম হাতের নাগালের বাইরে।এরকম ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আমরা দোকানদারির সাথে কথার বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হই। ভুক্তভোগী আমরা বই কিনতে হবে কারন এটি আমাদের জরুরি প্রয়োজন। কিন্তু সারাদেশে যে রকম সব কাজে সিন্ডিকেট তেমনি বই ব্যবসায় ও জরিয়েছে।তাই এর সঠিক প্রদক্ষেপ না নিলে আমাদের বই কিনার সেই সার্মথ থাকবেনা। পাশাপাশি ধিক্কার জানাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকম নীতিকে। তাদের মন ইচ্ছা মতো পরিক্ষা এবং রুটিন ফি এবং দিবেন বাড়াবেন। তাহলে কীভাবে ছাত্র ছাত্রীরা লেখাপড়া করবে। কিছু নীতি পরিবর্তন করা জরুরি।
1967 পর্যন্ত মৌলবীবাজার সরকারি স্কুলে পড়েছিলাম । মৌলবীবাজারে লাইব্রেরি গুলি তখন ও বেশি দামে বই বিক্রি করত। একদিন হবিগঞ্জ থেকে বই কিনতে গিয়ে দেখলাম তারা 50% ডিসকাউন্ট দেয়। 1967 -1969 হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে লেখা পড়া করেছিলাম । অর্ধেক দামে বই কিনেছি । তাই অভিভাবক ও শিক্ষক দের কাছে আমার বার্তা হবিগঞ্জ থেকে বই কিনুন, গাড়ি ভাড়া দিয়ে ও লাভ হবে । আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না , মুদ্রিত দামের চেয়ে চেয়ে কমে বই বিক্রি হয় । একজন গিয়ে কয়েক জনের জন্য কিনলে আরো ভাল হবে । খোঁজ নিয়ে দেখুন । মৌলবীবাজার লণ্ডনি ও প্রবাসী এলাকা তাই যথেচ্ছ দাম চায় লাইব্রেরি গুলি । কিন্ত অনেক ছাত্র আছে যার কেউ প্রবাসী নাই ।
মন্তব্য করুন
শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]