ঢাকা, ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

আঁকা ছবিতে বাবাকে খুঁজছে হৃদি

স্টাফ রিপোর্টার
২৮ মে ২০২৩, রবিবার
mzamin

নিজস্ব ছবি

আদিবা ইসলাম হৃদি। ১২ বছরের শিশু। দুই বছর বয়সে তার বাবাকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারপর থেকে কোনো খোঁজ মেলেনি। প্রতিনিয়ত বাবাকে খুঁজে ফেরে সে। বাবাকে ফেরত চেয়ে দশ বছর ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আওয়াজ তোলে। এবারো দাঁড়িয়েছে  হৃদি। তার প্রতিবাদে স্থান পেয়েছে নিজের আঁকা একটি ছবি। যেখানে  কল্পনায় বাবা ও নিজেকে এঁকেছে সে। ছবিতে বাবার হাত ধরে রাস্তায় হাঁটছে ছোট্ট হৃদি।

বিজ্ঞাপন
তার কথা- আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। আমার বান্ধবীরা যখন বাবার সঙ্গে স্কুলে আসে তখন আমার খারাপ লাগে। স্কুল শেষে ওদের বাবারা ওদের নিয়ে যায়, আমাকে কেউ নিতে আসে না। আমার খারাপ লাগে। আমার একটা ছোট ভাই আছে সেও প্রতিনিয়ত বাবার জন্য কান্না করে। 

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলে গুম হওয়া বংশাল থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনের মেয়ে আদিবা ইসলাম হৃদি। বিশ্ব গুম বিরোধী সপ্তাহ উপলক্ষ্যে ‘মায়ের ডাক’ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে অংশ নেন হৃদির মতো অনেক শিশু-কিশোর, যাদের পরিবারের কেউ না কেউ নিখোঁজ রয়েছেন। স্বজনের খোঁজ চেয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ান আরও অনেকে। সবার একটাই চাওয়া- অবিলম্বে নিখোঁজ ব্যক্তিদের যেন ফিরিয়ে দেয়া হয়। 
মায়ের ডাকের এ আয়োজনে অংশ নেন- নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম, নারী নেত্রী ফরিদা আক্তার প্রমুখ। 

কাউসার হোসেন নামে গুম হওয়া আরেক ব্যক্তির মেয়ে লামিয়া আক্তার মিম বলেন, ১০ বছর হয়ে গেছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাবাকে খুঁজছি। কিন্তু আমি আমার বাবাকে পাই না। আমারো ইচ্ছে করে বাবার হাত ধরে রাস্তায় হাঁটতে। আমার বন্ধুরা বাবার সঙ্গে স্কুলে যায়। আমারো ইচ্ছে করে বাবার সঙ্গে স্কুলে যেতে। আমি কেন পারি না, আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকার বিগত এক দশক ধরে বিরোধী মতের মানুষের ওপর গুম, খুন, হত্যা ও নৈরাজ্য চালাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষকে গুম করেছে। আজও তাদের খোঁজ নেই। আয়না ঘরের নামে নির্যাতন সেল তৈরি করেছে। এ সমস্ত অবিচার বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিতে হবে। দাবি করেন গুম নিয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনেরও। এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবিও উচ্চারিত হয় তাদের কন্ঠে।

আলোকচিত্রী শহীদুল আলম বলেন, আমাকেও গুম করা হয়েছিল। রাতের অন্ধকারে আমাকে জোরপূর্বক তুলে নেয়া হয়েছিল। হাত, মুখ, চোখ বেঁধে ফেলা হয়। আমার পরিবার থানায় অভিযোগ করতে গেলে অভিযোগও নেয়া হয়নি। কিন্তু সবাই আওয়াজ তোলায় বেশিক্ষণ রাখতে পারেনি। তিনি বলেন, আমি যে অপরাধ করেছি, সে অপরাধের বিরুদ্ধে পাঁচ বছরেও তারা চার্জশিট দিতে পারেনি। এখনো আমাকে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয়। আমার সামর্থ রয়েছে আমি আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারি কিন্তু সবাই পারে না। বাংলাদেশে অনেক মানুষ গুম হয় তাদের কথা বলার কেউ থাকে না। 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকার এখন বেশ বিপদে আছে। দেশের মানুষের সমর্থন নেই। বিদেশেও সমর্থন কমে গেছে। ১৪ বছর যাবৎ গুম, খুন, গ্রেপ্তারসহ বিরোধী মতকে নানাভাবে দমন করছে। সারা দুনিয়ায় তাদের বদনাম হয়ে গেছে। তারা একটি ফ্যাসিস্ট সরকার। তারা ভোটের বাক্স চুরি করে। দিনের ভোট রাতে করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন বলছে- যারা ভোটে এ ধরনের কাজ করবে তাদের আর ভিসা দেয়া হবে না। তখন সরকারের মধ্যে জ্বালা তৈরি হয়েছে। তারা বলছে- আমরাতো নির্বাচনে বাধা দিই না। আসলে তারা বাধা দেয় না। বরং নির্বাচন যেন না হয় তার জন্য গুম খুন হত্যা নির্যাতন করে বিরোধীদের দমন করে নির্বাচনই হতে দেয় না। তিনি বলেন, এখন ফরিয়াদ করে কোনো কাজ হবে না। এ সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার দিন আসছে। আমরা জানতে চাই আমাদের স্বজনরা কোথায়। তাদের হিসাব না দিয়ে সরকারকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে দেয়া হবে না। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, বছরের পর বছর গুম ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু সরকারের এ বিষয়ে একটুও ভ্রুক্ষেপ নেই। বাবা হারানো শিশুদের গণমাধ্যমের সামনে কাঁদতে হয়। একটা সভ্য মানবিক দেশে এটা হতে পারে না। এসব মানুষকে অবলম্বে ফিরিয়ে দিতে হবে।

মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, মায়ের ডাকের ভুক্তভোগী পরিবার যতগুলো মামলা করেছে, তার কোনো তদন্ত হয়নি। কোনো ধরনের বিচার হয়নি। আমরা বাধ্য হয়ে বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরেছি। জাতিসংঘে এ নিয়ে কথা হলেও গুম হওয়া কাউকে ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। সাধারণ মানুষ এখন বিচার চায়। যেসব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা গুমের সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে আমরা চিনি। অবিলম্বে এসব বন্ধ করুন। নইলে জনগণ আপনাদের বিচার করবে। 

নারী নেত্রী ফরিদা আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রী কি এসব বাচ্চাদের কান্না শুনতে পান না? একবার ভেবে দেখেন- যদি আপনার পরিবারের কাউকে এমনভাবে রাস্তায় দাঁড়াতে হতো, তাহলে আপনার কেমন লাগতো। আমরা জানি আপনার সেই অনুভূতি নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক একটা আইন আছে-কেউ অপরাধ করলে তাকে কতোক্ষণ আটকে রাখা যায় তা আপনাকে মানতে হবে। আপনি এগুলো করে আর পার পাবেন না। মানুষ জেগেছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের বাচ্চাদের কান্না আপনাদের হাজার হাজার কণ্ঠের চেয়ে শক্তিশালী। যত বাধাই আসুক আমরা থামবো না। অবিলম্বে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিতে হবে।

 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status