ঢাকা, ১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

ডেঙ্গু সারা দেশে ছড়াচ্ছে

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২৮ মে ২০২৩, রবিবারmzamin

বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু হানা দিয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শুধু রাজধানী নয়, জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। চলতি বছর ডেঙ্গুরোগী বাড়তে পারে এমনই শঙ্কাও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। গ্রামে-গঞ্জে এ রোগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা সেভাবে তৈরি না হওয়ায় শঙ্কা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে গতকাল পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৯ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এ বছর এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩ জন ঢাকার বাইরের।

রোগীর চাপ কমাতে এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বুধবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম এ আশঙ্কার কথা জানান। তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা (অন্য বছরের এ সময়ের তুলনায়) বেশ কয়েকগুণ বেশি। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়নি। সেজন্য আমরা মনে করি আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। সেটি আমরা এরইমধ্যে শুরু করেছি। আমরা দেশবাসীকে সচেতন করতে চাই, যাতে সবাই এই মৌসুমে নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা মেনে চলি। ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশক ব্যবস্থাপনার কাজ আরও জোর দিয়ে করা গেলে এই বছর যে ভয়ভীতি সেটি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো। গত বছর যে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু হয়েছে তাও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি জেলায় সারা বছর পাঁচজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে ধরে নেয়া যায় আক্রান্ত রোগী অন্য জেলা থেকে এসেছে; কিন্তু এর বেশি হলে ধরে নিতে হবে স্থানীয়ভাবে এ রোগ ছড়াচ্ছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না থাকায় ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু বাড়ছে। তাছাড়া ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল, তাতে মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সরকারি হিসাবে সেবার মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের। মাঝে এক বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম থাকলেও ২০২১ সালে ফের ৫৮ জেলায় ডেঙ্গু ছড়ায়। তাতে ২৮ হাজার ৪২৯ জন এ রোগ নিয়ে হাসপাতালে যায়, মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। দেশে গেল বছর রেকর্ড মৃত্যু হয় ২৮১ জনের। 

এদিকে, এ বছর গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৭০৪ জন। অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসের এই কয়েকদিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭১৮ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, কেবল তাদেরই তথ্য আসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে। আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হননি, এমন ব্যক্তিরা সরকারের হিসাবের বাইরেই থেকে যান।

গত প্রায় পাঁচ মাসে ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা মহানগরেই সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা মহানগর বাদে পুরো বিভাগে এ পর্যন্ত ৯৩ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙ্গামাটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়া এই বিভাগের অন্য জেলাগুলোতে ২৭৪ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর বাদে অন্য জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এ বিভাগে ৪৪  জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঝালকাঠি জেলা বাদে বরিশাল বিভাগের সবগুলো জেলায় এ বছর ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এ পর্যন্ত ১৩২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রাজশাহী বিভাগের ৫ জেলা বাদে অন্য জেলাগুলোতে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহ বিভাগের ৩ জেলা ব্যতীত অন্য জেলায় ইতিমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে রংপুর বিভাগের দিনাজপুর ও রংপুর এই দুই জেলার ডেঙ্গু আক্রান্ত পাওয়া গেছে। সিলেট বিভাগে মাত্র সিলেট জেলায় এ পর্যন্ত ৪ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।

এডিস মশা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, একটি জেলায় যদি সারা বছর পাঁচজন রোগী পাওয়া যায়, তাহলে ধরে নেয়া যায় আক্রান্ত রোগী অন্য জেলা থেকে এসেছে। কিন্তু এর বেশি হলে ধরে নেয়া যাবে ডেঙ্গু স্থানীয়ভাবে ছড়িয়েছে। আর ওই স্থানীয় সংক্রমণ নিয়েই ভয়ে আছেন বিশেষজ্ঞরা। কবিরুল বাশার বলেন, রাজধানীর বাইরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। ফলে ডেঙ্গুর লোকাল ট্রান্সমিশন হলে তা কিছুটা আশঙ্কার। আমরা শুধু সিটি করপোরেশন নিয়ে কথা বলছি। জাতীয় পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে না। সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ, রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সক্ষমতা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেই। ঢাকায় এডিস মশার বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সক্ষমতা আছে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। তা না হলে আক্রান্ত আরও বেশি হতো। অন্য জেলা ডেঙ্গু মোকাবিলায় সক্ষমতা নেই বলেই সেখানে ডেঙ্গু বাড়ছে।  তিনি আরও বলেন, সব জেলায় নগরায়ণ হচ্ছে। এজন্য ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। প্রতি জেলায় প্রস্তুতি রাখতে হবে। সবার সম্মিলিতভাবে এটাকে মোকাবিলা করতে হবে। একার পক্ষে সম্ভব নয়।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ধারা সংশোধন/ ১০ বছর পর্যন্ত সংগঠন নিষিদ্ধের প্রস্তাব

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status