বাংলারজমিন
একসঙ্গে দুই সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা-বাবা
দাউদকান্দি (প্রতিনিধি) কুমিল্লা
(১ বছর আগে) ২৭ মে ২০২৩, শনিবার, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৫ পূর্বাহ্ন
দাউদকান্দি উপজেলাতে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে আল আমিন ফরাজী (৩৫) ও তার বোন সালেহা বেগমের (৪৫) মৃত্যুর শোকে স্তব্ধ হয়ে আছে তাদের গ্রামের বাড়ি। ছেলে-মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন নিহতদের বাবা-মা সিরাজুল ইসলাম ফরাজী ও আফিয়া বেগম। (গতকাল) শুক্রবার দুপুরে ঢাকা-পেন্নাই-মতলব সড়কের কবিচন্দ্রদি শেখবাড়ির কাছে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে ভাই-বোনসহ তিনজন নিহত ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালকসহ অপর চারজন মারাত্মক আহত হন। নিহত আল আমিন ফরাজীর বাড়ি দাউদকান্দি উপজেলাস্থ দৌলতপুর ইউনিয়নের কাউয়াদি গ্রামে। আল আমিন পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। অপর দিকে দুর্ঘটনায় নিহত তার বড় বোন সালেহা বেগম দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ উত্তরস্থ ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা মরহুম আনু মিয়ার স্ত্রী। এদিকে আল আমিন ফরাজীর বাড়িতে তার বাবা সিরাজ মিয়া ও মা আফিয়া বেগম সন্তানদের হারানো শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন। নিহত আল আমিনের স্ত্রী শিউলী আক্তার জানান যে, স্বামীকে হারিয়ে তার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এখন সংসার কে চালাবে আর আমার দুই সন্তানকে এখন কে দেখে রাখবে। আমরা শ্বশুরের হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য ব্যুরো বাংলাদেশ এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। এখন সে টাকা আমরা কীভাবে পরিশোধ করবো তা বুঝতে পারছি না। সামনের ভবিষ্যৎ জীবন অন্ধকার দেখছি। আল আমিনের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে জুনাইদ চুপচাপ শূন্য দৃষ্টিতে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ভাই-বোনের মৃত্যুতে অঝোরে কেঁদে চলেছেন সিরাজুল ইসলামে অপর দুই মেয়ে সেলিনা আক্তার ও ঝরনা আক্তার। বাড়িতে ছিল প্রতিবেশীদের ভিড়। এ মর্মান্তিক ঘটনায় তারাও যেন সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। ঘটনায় শোকে কাতর সিরাজ মিয়ার চাচাতো ভাই ও এক প্রতিবেশী জানান, সিরাজ মিয়ার থাকার ঘর ছাড়া আর অন্য কোনো সম্পত্তি নেই। (নিহত) আল আমিনের ইনকামে হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবা সিরাজ মিয়ার চিকিৎসার খরচ চলত। ছয় সদস্য পরিবারের ভরণপোষণও চলত আল আমিনের একা ইনকামেই। এখন একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে আল আমিনের বৃদ্ধ মা-বাবা ও তার স্ত্রী দিশেহারা। আল আমিন পরিশ্রমী ও শান্ত স্বভাবের ছিলেন বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে দাউদকান্দি মডেল থানার এসআই সুদর্শন কান্তি দে জানান যে, দুর্ঘটনায় নিহতদের সকলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) এ ঘটনায় এখনো কোন মামলা রুজু করা হয়নি।