ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

বাজারে বিলকিসদের কান্না, আমজাদের আক্ষেপ

তামান্না মোমিন খান
২৭ মে ২০২৩, শনিবার
mzamin

ফাইল ছবি

বিলকিস বেগম। প্রচণ্ড গরমের তপ্ত দুপুরে ব্যাগ হাতে ছুটছেন কাওরান বাজারের এই মাথা থেকে ওই মাথায়। কোথাও একটু সস্তায়, কম দামে সবজি কিনতে পারবেন এ চিন্তা তার। মাত্র ২০০ টাকা নিয়ে বাজার করতে এসেছেন। এই টাকা দিয়েই কিনতে হবে চাল, ডাল, পিয়াজ, মরিচ, তেল এবং সবজি। কিন্তু বাজারে কোনো সবজির দামই পঞ্চাশ টাকার নিচে নেই। এক কেজি বেগুন কিনলেই শেষ ৫০ টাকা। বাকি দেড়শ’ টাকায় চাল, ডাল, পিয়াজ, মরিচ ও তেল কীভাবে কিনবেন? হিসাব মেলাতে পারছে না বিলকিস। একটা সময় সবজি কেনার সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে ৪০ টাকা দিয়ে শুঁটকি কেনেন তিনি। আর ১২০ টাকা দিয়ে দুই কেজি চাল, ২৫ টাকা দিয়ে এক ভাগা পিয়াজ এবং ১৫ টাকার মরিচ কেনেন।

বিজ্ঞাপন
হাতের টাকা শেষ। কিন্তু ভোজ্য তেল কিনতে পারেননি। 

বিলকিস বলেন, শুঁটকি মাছের ছানা আর ভাত আমাগোর প্রতিদিনের খাবার। বেশি ঝাল দিয়া শুঁটকি ছানা করি, অল্প একটু ছানা নিলেই পুরো ভাত খাওয়া হয়ে যায়। সবজির অনেক দাম। আবার রান্না করতেও তেলের প্রয়োজন হয়। আমাগোর শুঁটকি ছানাই ভালো। বিলকিস বলেন, গত বছর কোরবানি ঈদে অল্প মাংস পাইছিলাম। তখন মাংস খেয়েছিলাম। এক বছরের মধ্যে আর গরুর মাংস খাই নাই। ব্রয়লার মুরগি খেয়েছি প্রায় ছয় মাস আগে। বাসা-বাড়িতে কাজ করে মাসে সাত হাজার টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে সকল খরচ চালাতে হয়। অনেক কষ্ট করতে হয়। বলেন, আমি এক সন্তান নিয়ে হাতিরঝিলে থাকি। 

ষাটোর্ধ্ব আফিয়া খাতুন থাকেন তেজকুনী পাড়ার স’মিলের ঢালে। স্বামী পরিত্যক্ত এক মেয়ে আর এক নাতি নিয়ে তার সংসার। মেয়ে অসুস্থ থাকায় আফিয়াকেই ধরতে হয়েছে সংসারের হাল। কাওরান বাজারের সবজি বাজারে কাজ করেন তিনি। চা আর রুটি দিয়ে সকাল শুরু হয় আর রাতে গিয়ে ভাত খান। কেমন আছেন জানতে চাইলে আফিয়া ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, কেমন আছি জাইনা কি করবেন? দিবেন পাঁচশ’ টাকা। পেটে খাওয়ন থাকলে কথা কইতে ভালো লাগে। পেটে খাওয়ন না থাকলে কথা কইতেও কষ্ট হয়। আপনের লগে অভিনয় করতে পারুম না। কাওরান বাজারে পণ্য কিনতে আসা রংমিস্ত্রি সোহেল বলেন, নিয়মিত রংয়ের কাজ করতে পারি না। যা ইনকাম করি তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ডাল-ভাত জোগাড় করাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। মাছ-মাংসের ধারে কাছেও যাওয়া যায় না। আগে ব্রয়লার মুরগি খেতাম এখন খাই ব্রয়লার মুরগির চামড়া ও পা। 

ভাতের সঙ্গে একদিন ডাল খাই আর একদিন ভর্তা খায়। আমাদের মতো গরিবরা এখন মাসে একদিনও ভালো কিছু খেতে পারে না। 
এদিকে বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায় আর গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। খাসির মাংস বিক্রেতা মো. বাবুল বলেন, সাধারণ মানুষ কেউ খাসির মাংস কিনতে আসে না। যারা আসে তারা সবাই ধনী। একবারে পাঁচ কেজি কইরা মাংস নিয়া যায়। তাদের দেইখ্যা বুঝা যায় তাদের টাকার অভাব নাই। কিন্তু আমাদের বেচাকেনা আগের চাইতে অনেক কমছে। আগে মধ্যবিত্তরা এক কেজি হোক আর আধা কেজি হোক সপ্তাহে একদিন মাংস কিনতো। কিন্তু তারা এখন আর আসে না। এখন ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে এবং মধ্যবিত্তরা নিম্নবিত্তে পরিণত হচ্ছে। গরুর মাংস বিক্রেতা আমজাদ বলেন, আগের তুলনায় মাংস বিক্রিতে আমাদের ভাটা পড়ছে। আগে যারা এক কেজি মাংস কিনতেন, তারা এখন আধা কেজি মাংস কেনেন। আর যারা আধাকেজি কিনতো তারা এখন আড়াইশ’ গ্রাম কেনেন। আড়াইশ’ গ্রাম মাংস বিক্রি করা আমাদের জন্য লস। কারণ আড়াইশ’ গ্রাম মাংস বড় টুকরা করলে হয় চার টুকরা। কম মাংস নিলে হাড্ডি দিতে পারি না।

 

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status