শেষের পাতা
শ্রীপুরে নবজাতককে বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
২৬ মে ২০২৩, শুক্রবার
গাজীপুরের শ্রীপুরে নবজাতককে বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছেন এক দম্পতি। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলা পৌর শহরের শ্রীপুর চৌরাস্তার নিউ এশিয়া ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি হাসপাতালে। অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ওই নবজাতককে টাকার বিনিময়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে বিক্রি করে দেন।
এদিকে এলাকায় প্রচার হয় জাহাঙ্গীর প্রসূতির নবজাতককে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রসূতিকে জানিয়েছেন, ৩০ হাজার টাকায় কন্যাসন্তান বিক্রি হয়েছে এবং হাসপাতালের বিল ১৬ হাজার টাকা রেখে ১৪ হাজার টাকা নবজাতকের মা প্রিয়ার হাতে তুলে দিয়েছেন। নবজাতকের মাতা প্রিয়া আক্তার (২৪) ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার মালিডাঙ্গা গ্রামের মো. রাসেলের স্ত্রী। তিনি উপজেলার শ্রীপুর-কাপাসিয়া সড়কের পাশে বাবুল সরকারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
প্রিয়া আক্তার জানান, তার স্বামী দিনমজুর। স্বল্প আয়ের সংসারে এক মেয়ে ফাতেমা (২) রয়েছে। প্রসব ব্যথা নিয়ে রোববার শ্রীপুর চৌরাস্তার নিউ এশিয়া হাসপাতালে যান। নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর জানান, দ্রুত সিজার না করলে মা-সন্তান দু’জনেরই সমস্যা হবে। অপারেশন করতে ১৫/১৬ হাজার টাকা লাগবে। আমার স্বামী অনেক চেষ্টা করেও টাকা জোগাড় করতে পারেনি। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর সন্তান বিক্রির প্রস্তাব দেন। নবজাতককে তার কথামতো তুলে দিলে নগদ টাকা দেবেন। ছেলে হলে ৫০ হাজার টাকা ও মেয়ে হলে ৩০ হাজার টাকার আশ্বাস দেন। হাসপাতালের বিল পরিশোধের আশ্বাসও দেন তিনি। অসহায় দম্পতি জাহাঙ্গীরের প্রস্তাবে রাজি হলে রাতেই প্রিয়ার সিজারের মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দেন। পরের দিন সোমবার ২২শে মে জাহাঙ্গীর অজ্ঞাত এক ব্যক্তির হাতে প্রিয়ার নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করে দেন। জাহাঙ্গীর কার কাছে নবজাতককে বিক্রি করেছেন শত চেষ্টা করেও জানতে পারেননি অসহায় দরিদ্র রাসেল দম্পতি। পরে জাহাঙ্গীর প্রিয়াকে ১৪ হাজার টাকা দিয়ে জানান, নবজাতক কন্যাসন্তানকে বিক্রি করে ত্রিশ হাজার টাকা পেয়েছি। তা থেকে ১৬ হাজার টাকা হাসপাতালের বিল কেটে রেখেছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি প্রকাশ পেলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তথ্য সংগ্রহ করতে গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতলে গেলে মালিকপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। হাসপাতালের মালিক মো. ফজলুল হক বিষয়টি তার জানা নেই দাবি করে জানান, হাসপাতালে প্রিয়া আক্তারের সিজার হয়েছে। বাহিরে কে তার সন্তান বিক্রি করে দিলো তা জানা নেই। এ ঘটনার সঙ্গে হাসপাতালের কেউ জড়িত নয়। অভিযুক্ত হাসপাতালের পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর সন্তান বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি কোনো নবজাতককে বিক্রি করেননি। রাসেল দম্পতি নিজেরাই তাদের সন্তান দত্তক দিয়ে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে হাসপাতালটির অনুমোদন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, খোঁজ নিয়ে পরে জানানো হবে। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম নাসিম জানান, বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।