প্রথম পাতা
পমপম চক্রের কব্জায় ২০,০০০ তরুণীর নগ্ন ভিডিও
স্টাফ রিপোর্টার
২৩ মে ২০২৩, মঙ্গলবার
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ভয়ঙ্কর এক সাইবার অপরাধী চক্রের সন্ধান পেয়েছে। চক্রের অধিকাংশ সদস্য প্রকৌশলী। দীর্ঘদিন ধরে তারা হাজার হাজার কিশোরী-তরুণীদের গোপন ভিডিও সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল। তাদের কব্জায় প্রায় ২০ হাজার আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া গেছে। এসব ভিডিও দিয়ে তৈরি করা ৩০ হাজার কন্টেন্টও রয়েছে। আপত্তিকর ভিডিও চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন কৌশলে ও ভুক্তভোগীদের আইডি হ্যাক করে সংগ্রহ করে। পরে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি সাইটে ছড়িয়ে ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এছাড়া আপত্তিকর ভিডিও দেশে-বিদেশে বিক্রি করেও বড় অংকের টাকা আয় করেছে। তাদের ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার তরুণীর রাতের ঘুম হারাম হয়েছিল। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিলেন তাদের অভিভাবকরা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- চট্টগ্রামের শ্যামলী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. আবু সায়েম ওরফে মার্ক সাকারবার্গ (২০), বেসরকারি চাকরিজীবী মো. মশিউর রহমান শুভ (২৬), সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. সাহেদ খান (২২), নর্থসাউথ বিশ^বিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী কেতন চাকমা (২০), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাজমুল হাসান সম্রাট (২২), তেজগাঁও কলেজের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. মারুফ হোসেন (৩৪), চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জুনাইদ বোগদাদী শাকিল (২০), বেসরকারি চাকরিজীবী মো. জসিম উদ্দিন (৩৮) ও শাহরিয়ার আফসান অভ্র (২৪)।
গতকাল মালিবাগের নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ভুক্তভোগীরা আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, তাদের ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম আইডি হ্যাক করে পমপম নামের একটি টেলিগ্রাম গ্রুপ গোপন ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা দাবি করছে। টাকা দিতে না পারলে ভিডিও কলে এসে আপত্তিকর কর্মকাণ্ড করতে বাধ্য করছে। আর কোনো প্রস্তাবেই সাড়া না দিলে নাম-পরিচয় আর ব্যক্তিগত তথ্যসহ লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবারের টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে ভাইরাল করে দিচ্ছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি’র সাইবার পুলিশের একটি দল কাজ শুরু করে। আমরা দেখতে পাই, গ্রুপটি আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ভিকটিমের কাছ থেকে যে কেবল টাকা আয় করে তা নয়, চক্রটি ওইসব ভিডিও দেশে-বিদেশে বিক্রি করেও কোটি টাকা আয় করেছে। মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের মতো দেশের অসংখ্য ক্রেতা গ্রুপটির সদস্য হয়েছেন। তারা অল্পবয়সী মেয়েদের আপত্তিকর ওইসব কন্টেন্ট ক্রয় এবং সংরক্ষণ করে থাকেন।
তিনি বলেন, চক্রটির নেতৃত্ব দেয় মার্ক-সাকারবার্গ নামের এক ব্যক্তি। তার আসল নাম আবু সায়েম। বেকার সায়েম থাকে চট্টগ্রামে। তার বিভিন্ন একাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। পরে আরাফাত নামের এক ভুক্তভোগী ও তার প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি পমপম গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়ায় ডিএমপি’র তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মার্ক-সাকারবার্গ চক্রের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে সিআইডি’র একটি টিম চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মার্ক ওরফে সায়েমকে গ্রেপ্তার করে। মার্কের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু শাহরিয়ার আফসান অভ্রকে চট্টগ্রামের হাউজিং এলাকা থেকে এবং বোগদাদী শাকিলকে উখিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, মার্ক ওরফে সায়েমের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে মার্ক-সাকারবার্গ আইডিটি লগইন করা অবস্থায় পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আবু সায়েমই মার্ক সাকারবার্গ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পমপম গ্রুপের যতগুলো চ্যানেল এবং গ্রুপ আছে তার এডমিনদের আসল নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। এডমিনদের কাজ ছিল সায়েমের হয়ে নতুন নতুন কন্টেন্ট যোগাড় করা। নতুন কন্টেন্ট পেতে তারা ফেইক এনআইডি বানিয়ে ভুক্তভোগী তরুণীদের সাবেক প্রেমিকেরাই নতুন নতুন কন্টেন্ট দিচ্ছে।
সম্পর্ক চলাকালীন প্রেমিকার যেসব অন্তরঙ্গ মুহূর্ত প্রেমিকরা ক্যামেরাবন্দি করেছে, প্রতিশোধের নেশায় সেগুলো তুলে দেয় চক্রের কাছে। সায়েম তার এডমিনদের দিয়ে সেগুলোতে মিউজিক বসিয়ে, ফেসবুক আইডি থেকে ছবি নিয়ে ৩০-৪০ সেকেন্ডের প্রমো বানিয়ে আপলোড করে তার গ্রুপগুলোতে। প্রমো দেখে যারা ফুল-ভার্সন দেখতে চায়, তাদের ১ থেকে ২ হাজার টাকার পুরোটা কিনতে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান বলেন, সায়েম, অভ্র এবং শাকিলকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের ডিভাইস তল্লাশি করে সায়েমের বিভিন্ন পেজের এডমিনদের আসল পরিচয় উদ্ধার করা হয়। তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ডিটিআর শুভ ওরফে মশিউর রহমান। মশিউরের দায়িত্ব ছিল গ্রুপ থেকে কৌশলে কন্টেন্ট সেভ করে রাখা এবং নানা প্রলোভনে তরুণীদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও হাতিয়ে নেয়া। মশিউর চট্টগ্রামের একটি ফিশিং কোম্পানিতে চাকরি করে। অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাকে কর্ণফুলী এলাকা থেকে তার সহযোগী জসীমসহ গ্রেপ্তার করা হয়। সায়েম এবং মশিউরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় এই এডাল্ট গ্রুপগুলোর এডমিনদের অনেকেই ঢাকায় অবস্থান করছে। ফলে তাদের বেইলী রোড এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে গেটটুগেদারের ফাঁদ পাতা হয়। ফাঁদে পা দিয়ে একে একে গ্রেপ্তার হয় গুরুত্বপূর্ণ এডমিন ক্যাকটাস ওরফে কেতন চাকমা, এল ডোরাডো ওরফে শাহেদ, তূর্য ওরফে মারুফ এবং মিঞা ভাই ওরফে নাজমুল সম্রাটকে।
সিআইডি আরও জানায়, সায়েম এবং তার সহযোগীদের গ্রুপ ও চ্যানেলগুলোয় সাবস্ক্রাইবের সংখ্যা প্রায় সোয়া চারলাখ। আর সেগুলোতে ২০ হাজার আপত্তিকর ভিডিও এবং প্রায় ৩০ হাজার কন্টেন্ট রয়েছে। মাসিক ফি দিয়ে তাদের প্রিমিয়াম গ্রুপের সদস্য হয়েছেন দেশ-বিদেশের ৭৫০ জন ব্যক্তি। তাদের সম্পর্কে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন। তরুণীদের আপত্তিকর কন্টেন্ট কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, এই কাজটি ছিল ভীষণ স্পর্শকাতর একটি কাজ। ফলে তদন্ত চলাকালে ভুক্তভোগী কিশোরী মেয়েদের কান্না, তাদের আপত্তিকর ভিডিও গ্রুপগুলো থেকে সরিয়ে নিতে এডমিনদের প্রতি করুণ আকুতি, আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আমরা জেনেছি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। বোনের ভিডিও সরিয়ে নিতে ভাইয়ের কান্নাও আমাদের চোখে পড়েছে। ভুক্তভোগী কিশোরীদের অনেকেই এই অসহায়ত্বের কথা কাউকেই বলতে না পেরে ক্রমেই মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হয়েছে। এই চক্রে যারা জড়িত তারা সমাজের জঘন্য এবং ঘৃণিত মানুষ। তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। ফলে আমরা এ ঘটনায় মানিলন্ডারিং তদন্ত করারও পরিকল্পনা করেছি। তাহলে কেবল টেলিগ্রাম চক্রের হোতারাই নয়, তাদের দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সহযোগীদেরও আইনের আওতায় আনা যাবে।
পাঠকের মতামত
এখন সতীত্ব জলের মত বিকিয়ে দেয় সাবধান আবেগে কাপড় খোলার আগে পরিণাম চিন্তা করুন
তরুণীদের সাবেক প্রেমিক যারা এগুলো লিক করতো তাদের ধরতে হবে।
আমার আগের মন্তব্যটিতে "সরকারি" এর স্থলে সরাসরি পড়তে হবে। ধন্যবাদ -------------- অসৎ পন্থায় তথা হারাম (ঘুষ দুর্নীতি, সন্ত্রাস দখলবাজী, চুরি ডাকাতি, লুটপাট ইত্যাদি) উপর্জন দিয়ে যারা সংসার চালাচ্ছে তারা কেউ শান্তি স্বস্তিতে নাই। হয়ত কঠিন মরন রোগে আক্রান্ত, হয়ত নিরাপত্তাহীন, হয়ত সমাজে নিন্দিত, হয়ত অবাধ্য উশৃঙ্খল নেশাখোর ছেলেমেয়ে নিয়ে বিপদগ্রস্ত, হয়ত অপরাধীর খাতায় লিপিবদ্ধ হয়ত পারিবারিক কলহ ইত্যাদি ইত্যাদি কোনো না কোনো অস্থিরতায় কাটছে।
আমািদের সবাইকে ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে সচেতন হতে হবে এবং এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে তার শাস্তির ব্যবস্থা প্রশাসনকে গ্রহন করতে হবে।
আগে প্রাণ দিত, সতীত্ব দিত না। এখন প্রাণ বাঁচাতে সতীত্ব জলের মত বিকিয়ে দেয় সাবধান মা-বোনেরা আবেগে কাপড় খোলার আগে পরিণাম চিন্তা করুন।
এই মেয়ে গুলোর কোন দোষ ছিলনা? এদের বাবা-মা বড় অপরাধী। অল্প বয়সে মেয়ের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেয় কেন? দিলে কেন খোজ-খবর রাখে না কেন?
সামাজিক অবক্ষয়। আজ আবারও শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ সফির কথা মনে পড়ল। নারীর পর্দার বিষয় আহমদ সফি বা অন্য কোনো আলেমের ব্যক্তিগত বিষয় ছিলনা, এটি সরকারি আল্লাহ হকুম, আহমদ সফি সহ দুনিয়ার আলেম সমাজ আল্লাহ্ এবং রাসুলের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন মাত্র। উনারা নিজের ঈমানী দায়িত্ব পালন করেছে, উনাদের এই আহ্বানে সারা দেয়া না দেয়া প্রত্যেকের নিজস্ব তথা এখতেয়ার। যেইসব তরুণীর কথা রিপোর্টে বলা হচ্ছে, নিশ্চিত বলা যায় তাদের অভিভাবকেরা আল্লামা সফির আহ্বানে সারা দেয় নাই সুতরাং এইসব তরুণী এবং অভিভাবকদের জন্য আফসোস করারও কিছু নাই। যারা আল্লামা সফিকে কটাক্ষ করেছিল, প্রকাশ্যে বিরোধীতা করে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছিল, খবর নিয়ে দেখুন তাদের পরিবারের তরুণীরা ঐসব তরুণীর চাইতেও ভয়াবহ অবস্থায় আছে। এরা বলতেও পারছেনা সহ্য করতে পারছেনা।
সমাজের যদি উচ্চ শিক্ষিতরা এসব কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে, তবে ধিক্কার জানাই আমাদের এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে, যে শিক্ষা মানুষ কে মনুষ্যত্যের গুণাবলীতে উন্নত করতে পারে না। তা দিয়ে লাভ কি? আজ দেশের বড় বড় শিক্ষিতরাই বড় দুনীর্তি থেকে বড় বড় অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। ধিক্কার, ধিক্কার, ধিক্কার।
পুলিশ ভাইদের এসব ঘৃন্য আর জঘন্য ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় দাবি জানাই।
প্রতারণা ঘুরেফিরে আসতেই থাকে নতুন নতুন রূপে। নিজেদেরই সচেতন থাকতে হবে। ধর্মীয় মূল্যবোধের বিকল্প নেই। নাটক সিনেমা গান বাজনা দিয়ে অনবরত ফ্রি মিক্সিং ও অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে উৎসাহ দেয়, তারা এখন এর সমাধান কিভাবে দিবে? যারা প্রেমের নামে জেনা করতেছেন, যারা এগুলো সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইল করছেন, যারা এগুলো দেখতেছেন দুনিয়ায় পার পেলেও পরকালে কিভাবে পার পাবেন? তওবার রাস্তা খোলা আছে ফিরে আসুন সর্বশক্তিমান রবের দিকে, মেনে চলুন ইসলামি প্রতিটি বিধিনিষেধ। দুনিয়া ও আখিরাত হবে প্রশান্তির।
Appropriate punishment will be death.
কি জঘন্য!!! কোন অনুকম্পা না দেখিয়ে এদের শিকরের শিকর পর্যন্ত খোঁজ করে বাহির করে চীরতরে উপরে ফেলার ব্যাবস্হা করতে হবে। এদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে আর কেউ ভবিষ্যতে এমন জঘন্য কাজে সম্পৃক্ত না হয়।
Ai sob Dossu, Dakat, Bodmash der AZIBON Kara dondo chai.
কিন্তু একটি প্রশ্ন, তাহলো, তরুণীরা নগ্ন হবে কেন?