প্রথম পাতা
এক্সক্লুসিভ
ঝুঁকিতে পোশাক খাত, অর্ডার কমছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট কারখানা
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৭ মে ২০২৩, বুধবার
করোনার ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নতুন করে সংকটের মুখে পড়ে দেশের তৈরি পোশাক খাত। সংকটের মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন গার্মেন্টস মালিকরা। কিন্তু কিছুতেই যেন সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখা এই খাতটি। কমেই চলেছে ক্রয়াদেশ। গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্রয়াদেশ কমেছে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। অর্ডার না থাকায় এবং আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট অনেক কারখানা। বেকার হয়ে পড়ছেন শ্রমিকরা। ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রভাবেই নতুন কার্যাদেশ কমছে বলে দাবি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র। বলা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তৈরি পোশাকশিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নতুন করে সংকটে পড়েছে খাতটি।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, চলতি বছর প্রায় ৩০০ কারখানা বন্ধ হয়েছে। চাকরি হারিয়েছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার শ্রমিক। বন্ধের পথে আরও বেশ কয়েকটি কারখানা। বাংলাদেশ শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে দেশের মোট ৯৭টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এগুলো বন্ধ হওয়ার কারণে ২০ হাজার ২৭৬ শ্রমিক চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত ১৭টি কারখানায় ছয় হাজার ৬৪৭ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বিকেএমইএ’র সাত কারখানায় এক হাজার ৪৮৬ জন, বিটিএমইএ’র তিন কারখানায় দুই হাজার ৮৭ জন, বেপজা’র দুই কারখানায় দুই হাজার ৪৫ জন শ্রমিক বেকার হয়েছেন।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরও সারা দেশে ৫১০টি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে আশুলিয়া এলাকায় ৯৬টি, গাজীপুরে ১৫৭টি, চট্টগ্রামে ৮০টি, নারায়ণগঞ্জে ২০টি, ময়মনসিংহে ছয়টি এবং খুলনায় বন্ধ হয় ১৫১টি কারখানা। ক্রয়াদেশ না পাওয়া ছাড়াও শ্রমিক অসন্তোষের কারণেও অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রোজার ঈদের আগে ও পরে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম সহ বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানায় বেতন না পাওয়ায় আন্দোলনও করে শ্রমিকরা।
তবে শ্রমিক অসন্তোষ নেই দাবি করে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম মানবজমিনকে বলেন, গত বছর যেসব বায়ার যেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন অর্ডার করেছেন, এ বছর সেখানে কোনো অর্ডারই নেই। ক্রয়াদেশ কমেছে ৩০-৩৫ থেকে শতাংশ। এ অবস্থায় পোশাক খাত সংকটের মুখে পড়েছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনো শ্রমিক অসন্তোষ নেই। তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকা থেকে অর্ডার কম আসায় আমরা নতুন বাজার ধরার চেষ্টা করছি। কোরিয়া, জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বিকল্প বাজার খুঁজছি। সেটাও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু পোশাক খাত এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউস এসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন মানবজমিনকে বলেন, বর্তমানে বিক্রি কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এটা পোশাক খাতের জন্য বড় ইফেক্ট। আর এখান থেকে উত্তরণও যে খুব তাড়াতাড়ি ঘটবে তার কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ পুরো পৃথিবীই এই অবস্থার কারণে টালমাটাল অবস্থার মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, আমাদের বাজার যেহেতু ইউরোপ এবং আমেরিকা, কিন্তু সেখানকার বাজারেই আমরা সবচেয়ে বেশি অর্ডার হারাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। তবে ইউরোপ-আমেরিকার বাজার বড় করার সুযোগ রয়েছে। সেখানে আমরা সেভাবে বাজার সৃষ্টির জন্য কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছি না।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত কার্যাদেশ নেই। এ কারণে অনেক কারখানা ক্ষতির মুখে পড়ে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে শ্রমিক অসন্তোষও রয়েছে বলে তার দাবি। জানান, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে রোজার ঈদের পর দু’টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। আরও কয়েকটি কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে।
পোশাক খাত বর্তমানে নানা চাপের কারণে নাজুক অবস্থা দাবি করে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানিয়েছেন, এ অবস্থায় পোশাক শিল্পের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকারের অব্যাহত সহায়তার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আমাদের পোশাক শিল্প নানা কারণে চাপে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, সে তুলনায় পণ্যের দাম বাড়েনি। করোনায় সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়েছিল। রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব প্রণোদনা আছে, তা আরও বাড়ানো দরকার।
ওদিকে, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে দেশের তৈরি পোশাকপণ্য রপ্তানি যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ইউরোপের বাজারে বেড়েছে। তবে কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। ইপিবি’র ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলের তথ্যমতে, প্রথম ১০ মাসের তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.০৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ ৩৮.৫৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত ১০ মাসে তৈরি পোশাকপণ্য যুক্তরাজ্যের বাজারে রপ্তানি বেড়েছে ১০.৮৮ শতাংশ, কানাডার বাজারে বেড়েছে ১৬.০৯ শতাংশ এবং ইউরোপের বাজারে বেড়েছে ৮.৫৮ শতাংশ। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কমেছে ৭.১৩ শতাংশ পণ্য।
এ সময়ে ইইউ’তে বাংলাদেশের রপ্তানি ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইইউ অঞ্চলের প্রধান বাজারগুলোর মধ্যে জার্মানিতে রপ্তানি উল্লিখিত সময়ে পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৩৩ শতাংশ কমে ৫.৫৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ফ্রান্স এবং স্পেনে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিল যথাক্রমে ২.৪০ বিলিয়ন ডলার ও ২.৯৫ বিলিয়ন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ২২.২১ শতাংশ এবং ১৬.৬৯ শতাংশ। ইতালিতে ৪২.৪০ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির প্রবণতা দেখিয়েছে এবং ১.৮৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে বুলগেরিয়া এবং পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রপ্তানি বছরওয়ারিভাবে যথাক্রমে ৪৬.৪৩ শতাংশ এবং ১৭.৫৯ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে।
হতাশাব্যঞ্জক প্রবণতা অনুসরণ করে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানিতে ৭.১৩ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং ৬.৯৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অপরদিকে যুক্তরাজ্য এবং কানাডায়, উভয় বাজারে রপ্তানিতে যথাক্রমে ১০.৮৮ শতাংশ এবং ১৬.০৯ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল মাসে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩০.৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রধান বাজারগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল যথাক্রমে ১.৩২ বিলিয়ন, ৯৬১.৩০ মিলিয়ন, ৮৮৯.০৬ মিলিয়ন এবং ৪৭৭.৮১ মিলিয়ন ডলার।
পাঠকের মতামত
করোনা এবং রাশিয়া/ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কেউ পোষাক পরিধান করা বন্ধ করে দেয় নাই। এই দুই কারণে কেউ না খেয়ে মরেছে এমন খবর পেয়েছেন কখনও? কোনো দেশকে কারায়ত্ব করতে চাইলে তাহা রাতারাতি করা যায়না বরং ধীরে আস্তে সময় নিয়ে চারদিক থেকে ঘিরতে হয়, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ঋণ নির্ভরশীল দেশ, হয়ত ঋণ শোধ কর নয়ত আমাকে সেজদা কর। পোষাক শিল্পকে কেন্দ্র করে পশ্চিমারা বাংলাদেশের তাদের উপর নির্ভরশীল করেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা রঙিন চশমা পড়ে শুধুমাত্র পোষাক শিল্পই দেখেছে একবারও চিন্তা করে নাই যে, পশ্চিমারা যদি পোষাক কিনার গতি কমিয়ে দেয় কিংবা না ভান করে অপ্রত্যাশিত শর্ত জুড়ে দেয় অথবা না কিনে তখন ট্রিলিয়ন ডলারের কারখানা এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের কি অবস্থা হবে। ব্যবসায়ীরা মোটেও চিন্তিত নয় কারণ উনাদের বেশির ভাগই বেগম পাড়ার মালিক। প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কি করছিল, বুদ্ধিজীবীরা কোথায় ছিল। রেমিটেন্স প্রবাহ উত্তর উত্তর কমছে কারণ প্রবাসী এবং দেশে তাদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে, প্রশাসনের হয়রানি তো আছেই একই সাথে স্থানীয় সরকারি মাস্তানকে নিয়মিত চাঁদা দেয়াটা প্রতিমাসে বিদ্যূৎ বিল দেয়ার পর্যায়ে গিয়েছে। প্রবাসীরা বৈধ/অবৈধ পন্থায় শুধুমাত্র সেই পরিমাণ টাকাই পাঠায় যাহা দিয়ে কোনো রকমে পারিবারিক খরচ নির্বাহ করা য়ায়। গার্মেন্টস সেক্টর এবং রেমিটেন্স প্রবাহ বন্ধ হলে জনগন নেতাদের মাংস ছিলে খাওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না।
অনেকেই না জেনে বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার সাথে ভুল বোঝাবুঝির কথা বলছেন। পশ্চিমা দেশে বায়ার দেরকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করেনা। চায়নার সাথে আমেরিকার অহী নকুল সম্পর্ক, এমনকি ভারতের সাথে চিনের। কিন্তু ব্যবসায় কি তা প্রতিফলিত?? মূল কথা রিসেশনের কারণে সেখানে বিক্রি কমেছে। বিশেষত আমেরিকায় । ইউরোপ ঠিক আছে। এখন নতুন বাজার ধরা একান্ত অবশ্যক। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে এদেশের অধিকাংশ মানুষ রাশিয়ার পক্ষে গিয়ে আমেরিকার ধ্বংস চেয়েছে। সেসব মানুষগুলো এখন হয়তো পল্টি মেরে ডিগবাজি খেয়েছে। অথবা নিজেরা স্বেচ্ছা গুমে আছে। তাদের গুরু রাশিয়া র কি অবদান এই পোশাক শিল্পে??
আমরা সেংশান দেওয়া আমেরিকায় কোন পন্য রপ্তানি করবো না এতে যদি তিন বেলা শুকনা মরিচ পানতাভাত খেতে হয় তাও সই - জয় বাংলা জয় শেখ হাসিনা জয় হোক আমাগো অভিমানি প্রধান মন্ত্রির।
Actually our government polici is not good, as its keep great contribution in our national economy so we should more emphasis on this sector, i mean export should be relaxed and give more priority,
অন্য দেশে কমদামে বিক্রি করে।আর আমরা বিদেশ থেকে সেগুলো ই বেশি দামে কিনে আনি।আমাদের কাপড় আমাদের দেশেই বিক্রি হউক।
হয়তোবা এই পোশাক খাত বাঁচাতে এগিয়ে আসবে ভারত,চীন জাপান ও মায়ানমার । তাঁরাই আমাদের সরকারের পরম ভাই ও বন্ধু। আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশ সমূহ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের কাছে খুবই অপ্রয়োজনীয় দেশ। উনাদের কাছে জয় বাংলার পোশাক বিক্রি করাই অসম্মান নয় কি? জয় বাংলা। বাংলাদেশের সরকার প্রধানের মুখের কথা ও মনের আশা পূরণ করা জরুরি। প্রয়োজন হয় সবাই মিলে উপোস করব। জয় বাংলা। ধন্যবাদ।
এটা কোন মতে হতে দেয়া যাবেনা। নতুন সোস (দেশ) খুঁজে পেতে দক্ষতা অজেনর সক্ষমতা নিয়ে ? । তাই দেশের দেড় কোটি পরিবার বাঁচাতে সবাইকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। নো ওয়ে…..