শেষের পাতা
বড্ড অকালে চলে গেলেন আজহার মাহমুদ
শামীমুল হক
১৬ মে ২০২৩, মঙ্গলবারএই তো সেদিন। ১৫ই ফেব্রুয়ারি রাতে। বিয়াম মিলনায়তনে দেখা। জড়িয়ে ধরলেন। শামীম ভাই আপনাদের ভুলতে পারি না। সবসময় মনে পড়ে। মানবজমিন আমাকে সাংবাদিক খ্যাতি দিয়েছে। মতিউর রহমান চৌধুরী বাংলাদেশে একজনই। তিনি রিপোর্টের কারিগর। তার দেখানো পথেই এখনো চলছি।
অকালে চির বিদায় পরিবার, স্বজন, আত্মীয় ও বন্ধুমহলকে ভীষণ কাঁদায়। আজীবনের জন্য হৃদয়ে ক্ষত তৈরি করে। এক সময়ের সহকর্মী সাংবাদিক আজহার মাহমুদ এমনই একজন। যার কোনো শক্র ছিল না। যিনি সবসময় হাসিমুখে সবাইকে আপন করে নিতেন। কারও বিপদে আগে দৌঁড়ে যেতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র আজহার মাহমুদ সাংবাদিকতাকে বেছে নেন পেশা হিসেবে। তিনি ছিলেন প্রতিবাদী। অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন তার লেখনিতে। সত্যের পূজারী। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে তা তিনি দেখিয়েও দিয়েছেন। জেল খেটেছেন। ১৯৯৮ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম রঙ্গিন ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিন বাজারে আসে। প্রথম থেকেই সারা দেশে আলোচনার তুঙ্গে মানবজমিন। বছর কয়েক পর আজহার মাহমুদ মানবজমিন পত্রিকায় যোগ দেন ক্রাইম রিপোর্টার হিসাবে। তার বহু রিপোর্ট দেশজুড়ে আলোচনায় আসে।
ঝড় তোলে সর্বত্র। বিশেষ করে আজহার মাহমুদের অনুসন্ধানী চোখ সব সময় সজাগ ছিল। মানবজমিন-এ তখন ক্রাইম বিটে বিশাল বহর। শেষ দিকে ক্রাইম বিভাগের প্রধানও হন আজহার মাহমুদ। মনে হয়, এইতো সেদিন আজহার মাহমুদের বিয়ের অনুষ্ঠান ধানমণ্ডির পালকি কমিউনিটি সেন্টারে। রাতে অফিস শেষে সকল সহকর্মীরা ছুটে যান সেখানে। নিজে সবার কাছে গিয়ে খাবারের তদারকি করেছেন। টেনে নিয়ে নববধূকে দেখিয়েছেন। সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। মানবজমিন ছেড়ে তিনি একসময় একটি বেসরকারি টেলিভিশনে যোগ দেন। কিন্তু প্রায়ই মোবাইল ফোনে কথা হতো। বেশিরভাগ সময় তিনিই ফোন করে খোঁজখবর নিতেন। প্রায় সময়ই কাওরানবাজার মোড়ে তার সঙ্গে দেখা হতো। দেখা হলেই ঝাপটে ধরতেন। বলতেন, শামীম ভাই আপনার কথা সমসময় মনে পড়ে। মতি ভাইকে সালাম দিবেন। দূরে থেকেও মানবজমিনকে হৃদয়ে লালন করেছেন সবসময়। তাইতো মাঝে মাঝে ফোনে অনেক অজানা কথা বলতেন। আর এ কথা যেন প্রধান সম্পাদককে জানাই সে অনুরোধও করতেন।
আজহার মাহমুদের মুখে সব সময় হাসি লেগে থাকতো। মানুষের উপকারের জন্য নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করতেন। এজন্য প্রায়ই দেখা যেতো তার নিজ জেলা নেত্রকোনা থেকে অতি সাধারণ মানুষ তার কাছে আসতো। কাজের প্রতি তার দরদ ছিল অন্যরকম। আর এ কাজের জন্য তিনি দেশের প্রখ্যাত ক্রাইম রিপোর্টার তকমা অর্জন করেছিলেন। দৈনিক মানবজমিন ছেড়ে যোগ দেন বৈশাখী টেলিভিশনে। বিটিভিতেও কাজ করেন তিনি। ক’বছর ধরে তিনি ক্যাম্পাস লাইভ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন। তিনি ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। এসব প্রমান করে তিনি তার বিটের সাংবাদিকদের কাছে কতোটা প্রিয় ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, সততার মাপকাঠিতে তিনি একটা উদাহরণ রেখে গেছেন। যা কখনো মুছে যাবে না।
সবাইকেই যেতে হবে। তবে আহাজার মাহমুদ আগেভাগে চলে গেলেন। মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তার একমাত্র পুত্র সন্তান বাবার স্নেহ থেকে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত হলেন। মহান আল্লাহ তাকে এ শোক সইবার শক্তি দিক। এখন থেকে আজহার মাহমুদের কণ্ঠে আর শুনবনা- ভাই শরীরের দিকে খেয়াল রাখবেন। আজহার মাহমুদ ওপারে ভালো থাকুন। আল্লাহ আপনাকে যাতে জান্নাতের উচ্চ মোকাম দান করেন এই প্রার্থনা করি।