ঢাকা, ৯ জুন ২০২৩, শুক্রবার, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯ জিলক্বদ ১৪৪৪ হিঃ

প্রবাস

বৃটিশ সরকারের ভুলের খেসারত

২০ বছরের আইনি লড়াইয়ে জয় পেলেন সাইফুল

তানজির আহমেদ রাসেল

(২ মাস আগে) ৩১ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ৭:৫৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১১:৩১ পূর্বাহ্ন

mzamin

এক বা দুই বছর নয়, দীর্ঘ ২০ বছর বিলেতের মাটিতে নিজের অধিকার আদায়ে আইনী লড়াই চালিয়ে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত জয় পেয়েছেন বাংলাদেশী সাইফুল ইসলাম।‌ ২০০৩ সালে ভাগ্য অন্বেষণে হাইস্কিলড ভিসায় শেফ হিসেবে বৃটেনে পাড়ি জমান সাইফুল। এক‌ পর্যায়ে বৃটিশ হোম অফিসের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বহিষ্কারের নির্দেশ পান। এই বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আইনী লড়াই চালিয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত পিছু হটে বৃটিশ হোম অফিস। গত ২৮ মার্চ তারা এক চিঠিতে সাইফুলকে বৃটেনে বসবাসের অনুমতি প্রদান করে। ‌

পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জীবিকার তাগিদে ২০০৩ সালে বৃটেনে পাড়ি জমান। শেফ হিসেবে যোগ দেন‌ কার্ডিফের একটি রেস্তোরাঁয়। বৃটেনে পাড়ি জমানোর পর অসহনীয় দুর্ভোগের মাঝে একাধিক রেস্টুরেন্টে কাজ করে পাঁচ বছর পার করেন। ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী পাঁচ বছর পর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য তিনি আবেদন করলে হোম অফিস তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। আবেদন প্রত্যাখ্যানের কারণ হিসেবে তখন
হোম অফিস জানিয়েছিলো সাইফুলের পাসপোর্টে বৃটেনে ‘প্রবেশের’ সিলমোহর নেই। তিনি অবৈধভাবে বৃটেনে প্রবেশ করেছেন। 

হোম অফিস তার বিরুদ্ধে মিথ্যে যৌন অপরাধসহ একাধিক অভিযোগ উপস্থাপন করে তা গোপন রাখে এবং তাকে বহিষ্কারের চেষ্টা করে।

বিজ্ঞাপন
একপর্যায়ে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় তথ্য কমিশনের মাধ্যমে হোম অফিসের আনীত অভিযোগ সম্পর্কে তিনি অবগত হন এবং এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করলে হোম অফিস পাসপোর্টের ফটোকপি ফেরত দিতে বাধ্য হয়। ফলে প্রমাণিত হয় পাসপোর্টে ‘প্রবেশের’ সিলমোহর ছিল, তিনি  বৈধভাবেই বৃটেনে প্রবেশ করেছেন। পরে এসবের জন্য ক্ষমা চায় হোম অফিস।

বৃটিশ হোম অফিসে জমা দেয়া সাইফুলের আবেদনের সঙ্গে তিন যৌন অপরাধীর জমা দেয়া কাগজপত্র ভুলক্রমে মিশে যাওয়ায় যৌন হয়রানির মিথ্যা মামলার কবলে পড়েন তিনি। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর বৃটিশ হোম অফিস তাদের ভুলের জন্য সাইফুলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও তারা তাকে বৃটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দিতে রাজী ছিলো না। হোম অফিস তাদের ভুলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে প্রথমে পাঁচ হাজার পাউন্ড ও পরে আরো এক হাজার পাউন্ডসহ মোট ছয় হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দিয়ে সাইফুলকে দেশে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিলো।‌ সাইফুলও দমে যাবার পাত্র নন।‌যুক্তরাজ্যের রাস্তায় একাই হ্যান্ড মাইক হাতে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলছিলেন।‌ কখনো বৃটিশ পার্লামেন্টের সামনে, কখনো ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে আবার কখনো সুপ্রিম কোর্টের সামনে অবস্থান করে নিজের অধিকার ফিরে পেতে ক্যাম্পেইন চালিয়েছেন।‌ তার ক্যাম্পেইনে আকৃষ্ট হয়ে প্রিন্স চার্লস, বৃটিশ পার্লামেন্টের একাধিক এমপিসহ অনেকেই তখন লিখিতভাবে তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। সাইফুলের প্রতি এই অমানবিক আচরণের খবর তখন ফলাও করে প্রচার বৃটেনের প্রভাবশালী বিবিসি, গার্ডিয়ান ও স্কাই নিউজসহ অনেক গণমাধ্যম।

গতকাল রাতে (৩০ মার্চ) মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে সাইফুল জানান, বৃটিশ সরকার তথা বৃটিশ হোম অফিসের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমাকে অনেক বছর কষ্ট করতে হয়েছে। মিথ্যা মামলা, অমানবিক আচরণ, হয়রানি আর ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে বছরের পর বছর পার করতে হয়েছে।‌ তিনি বলেন, এতো কিছুর পরও আমি আমার বিশ্বাসে অটল ছিলাম।‌ আমি সৎ ছিলাম, আমি কোনো অপরাধ করিনি।‌ আমার বিশ্বাস ছিলো জয় একদিন হবেই। ‌এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, দীর্ঘ সংগ্রামের পর স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়ে আমি আনন্দিত।‌ কঠোর পরিশ্রম আমাকে এই জয় এনে দিয়েছে।‌ তিনি বলেন, হোম অফিসের ভুলে  আর কোনো নিরপরাধ মানুষ যেন অহেতুক হয়রানির শিকার না হন। হোম অফিসের সিস্টেমের ত্রুটির কারণে আর কারো যেন জীবনের স্বর্ণালী দিনগুলো নষ্ট না হয়, আমি সেটাই চাই।

পাঠকের মতামত

Congratulations.

mizan rahman
৩ এপ্রিল ২০২৩, সোমবার, ৪:১৫ পূর্বাহ্ন

সাইফুল ভাই, আমি কার্ডিফে আপনার সাথে এক রেস্টুরেন্টে কাজ করতাম। আমি আপনার সংগ্রাম খুব কাছে থেকে দেখেছি। অভিনন্দন---মিলন, ঢাকা

Mahmudur Rahman
৩১ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ৯:৩২ অপরাহ্ন

প্রবাস থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রবাস সর্বাধিক পঠিত

বৃটিশ সরকারের ভুলের খেসারত/ ২০ বছরের আইনি লড়াইয়ে জয় পেলেন সাইফুল

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status