ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

হামলার বর্ণনা দিলেন মাহিনুর

হঠাৎ ওরা আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে

আল-আমিন
২৭ মার্চ ২০২৩, সোমবার

 ১৭ই মার্চ রাত ৮টার দিকে একটি ঘড়ির ব্যাটারি কেনার জন্য বাসার সামনের দোকানে যান মাহিনুর আহম্মেদ খান। ব্যাটারি কেনার পর দোকানদারকে টাকা দেয়ার পর একদল লোক পেছন থেকে তার ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। পিটিয়ে রক্তাক্ত  করে তারা পালিয়ে যায়। মাহিনুর আহম্মেদ খান প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামির ভাই। মাহিনুর পরিবার নিয়ে পশ্চিম শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় থাকেন। ওই বাসার সামনেই তিনি হামলার শিকার হন। কিন্তু কেন তার ওপর হামলা হয়েছে তার কিছুই বলতে পারছেন না। হামলাকারীদেরও তিনি চিনতে পারেননি। এই হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা এবং সাংবাদিকদের বৈশ্বিক সংগঠন সিপিজে নিন্দা জানিয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তও দাবি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
হামলার বিষয়ে গতকাল নিজ বাসায় মানবজমিন’র সঙ্গে কথা বলেন মাহিনুর। তিনি হামলার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, তার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। কারও সঙ্গে ব্যবসায়িক বিরোধও নেই। ফেসবুকেও সক্রিয় নন। কোনো ব্লগেও লেখেন না তিনি। যে বাসার সামনে তিনি হামলার শিকার হয়েছেন ওই এলাকারও স্থায়ী বাসিন্দা নন তিনি। সেখানে ভাড়া থাকেন। ওই এলাকার কারও সঙ্গেও তার সম্পর্কও নেই খুব একটা। 
 

পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়,  মাহিনুর তার স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। বাসার সামনে তিন রাস্তার একটি ছোট মোড়। মোড়ের উপর তার বাসা। বাসা থেকে বের হলেই ছোট রাস্তার পাশেই রয়েছে বিসমিল্লাহ স্টোর। সেই দোকানের সামনেই মাহিনুর হামলার শিকার হয়েছেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাসার সামনে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা সরজমিন তথ্য নিচ্ছিলেন। আরেক কর্মকর্তা মামলার নথির জন্য এলাকার নকশা আঁকছিলেন। তবে বাসার সামনে কোনো সিসি ক্যামেরা পাওয়া যায়নি। ৪টি বাড়ির পরে একটি সিসি ক্যামেরা আছে। ওই সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি। পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। ভুক্তভোগীর মামলা ও তথ্য অনুযায়ী তদন্ত চলছে। শিগগিরই তারা দোষীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবেন।  
মাহিনুরের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, মাহিনুর একা হাঁটতে পারেন না। স্ত্রীর সহযোগিতা নিয়ে তাকে হাঁটতে হচ্ছে। হামলায় তার দুই পা জখম হয়েছে। বাম পায়ে ফোলা দেখা গেছে। পায়ে তার কাটা কাটা চিহ্ন রয়েছে। 

মাহিনুর জানান, ১৭ই মার্চ ৮টা ৫ মিনিটে আমি বাসা থেকে বের হই। বের হওয়ার উদ্দেশ্য ছিল বাসায় থাকা একটি দেয়াল ঘড়ির ব্যাটারি কেনা। আমি বাসার সামনেই বিসমিল্লাহ স্টোরে যাই। সড়কে লোকজনের আনাগোনা ছিল। দোকানে  ক্রেতা ছিল না। আমি ঘড়ির ব্যাটারি কিনে দোকানিকে টাকাও দিয়েছি। ব্যাটারি কিনে পেছন ফেরার মুহূর্তেই ৪ জন যুবক আমার ওপর হামলে পড়ে। রড দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে পেটাতে থাকে। তাদের আমি কোনোদিন দেখেনি, চিনিওনা। তিনি আরও জানান, আমি চিৎকার করে তাদের বলি যে, কেন তোমরা আমাকে মারছো। তোমরা কারা? কিন্তু, তারা কথা শুনেনি। রক্তাক্ত করে তারা আমাকে পিটিয়ে চলে যায়। যে ৪ জন যুবক আমার ওপর হামলা করেছে তাদের পরনে ছিল গেঞ্জি, টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট। তবে একজনের পরনে লাল গেঞ্জি ছিল। ওই যুবক আমাকে বেশি পিটিয়েছে। সবার হাতে ছিল রড। সবাই আঘাত করেছে আমাকে। 

তিনি আরও জানান, আমাকে রক্তাক্ত দেখে বাসার নিরাপত্তারক্ষী গেটের ভেতরে নিয়ে আসেন। ফোন পেয়ে স্ত্রী নিচে নেমে এসে হাসপাতালে নিয়ে যান। যারা আমার ওপর হামলা করেছে তাদের আমি কোনোদিন দেখিনি। আমার ভাই সামি আলজাজিরার সাংবাদিক। সামির কারণে আমি রোষানলে পড়েছি বলে আমার ধারণা। হামলাকারীরা ‘তুই নতুন সাংবাদিক হইছিস’ বলে আমার মুঠোফোনটিও ভেঙে ফেলে। 
মাহিনুরের স্ত্রী জানান, বাসার সামনেই একদল দুর্বৃত্ত এভাবে আমার স্বামীকে পিটিয়ে গেছে। কেউ এগিয়ে আসেনি। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। পুলিশকে বলবো, দ্রুতই হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করুন, আইনের আওতায় আনুন।
বাসার নিরাপত্তারক্ষী ফরিদ উদ্দিন জানান, বাসার গেটের মধ্যে একটি টুলে বসে ছিলাম। এ সময় বাইরে হট্টগোল শুনে বের হই। বাইরে গিয়ে দেখি, স্যার রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে তাকে বাসার মধ্যে নিয়ে আসি। এ সময় অনেক লোকজন ছুটে আসে।  সড়কে গাড়ির জট বাঁধে। 

বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক আবুল কালাম আজাদ জানান, আমার দোকানের সামনে মাহিনুরকে পেটানো হয়েছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলাকারীরা হঠাৎ এসে মাহিনুরের ওপর হামলে পড়ে। আতঙ্কে সবাই ছোটাছুটি শুরু করে। হামলাকারীরা হামলা করে সামনের গলি দিয়ে দ্রুতই পালিয়ে যায়। 
প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি দোকানদার জানান, ৪ জন যুবককে অনেকক্ষণ ধরে ওই বাসার সামনে রেকি করতে দেখেছেন তিনি। তবে তিনি তাদের এর আগে এই এলাকায় দেখেননি। প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে তারা ৪ জন হাঁটাচলা করেছে এবং মোবাইলে কথা বলেছে। তিনি আরও জানান, ওই ব্যক্তি (মাহিনুর) দোকানের সামনে আসার পর তার ওপর হামলা করা হয়। সবার হাতে রড দেখা গেছে।  
এ বিষয়ে পুলিশের মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার হাসান মোহাম্মদ মুহতারিম মানবজমিনকে জানান, ‘ভুক্তভোগী থানায় ৪ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটির তদন্ত চলছে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status