ঢাকা, ৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৯ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শরীর ও মন

শিশুদের পুষ্টিতে গ্রীষ্মকালীন ফলের ভূমিকা

ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান
২৮ মে ২০২২, শনিবার
mzamin

রসালো ফলের কথা মনে পড়লেই গ্রীষ্মকালের কথা ভেসে ওঠে। মূলত রঙিন, বাহারি ও রসালোসমৃদ্ধ কয়েকটি ফলকে কেন্দ্র করে গ্রীষ্মকালের মূল সৌন্দর্য। আর এ ফলগুলো হলো- আম, জাম, কাঁঠাল তরমুজ ও লিচু ও তাল। ছোটবেলা আমরা যে কত আনন্দ করে গ্রীষ্মকালীন আম-কাঁঠালের ছুটি কাটাতাম তা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্ত বর্তমানে সময়ের সঙ্গে সবই যেন পাল্টে গেছে। ফলের নামের সঙ্গে সংযোজন হয়েছে কেমিক্যাল, ফরমালিন, স্প্রে এই শব্দগুলো। যা আগে কখনো শুনি নাই। কিন্ত এখন এ শব্দগুলো এক মহা আতঙ্কের নাম। আজকাল দেখা যাচ্ছে রসালো ফল খেয়ে পুষ্টি অর্জন ও উপকারিতার পরিবর্তে অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। শিশুরাও এর বাইরে নয়। ছোট শিশুরা ফলের সঙ্গে মিশানো কেমিক্যাল ও ফরমালীন, এমনকি ফলের পোকা দমনে  ও পাকানো দেখাতে বিষ মিশানো স্প্রে  ফল খেয়ে অহরহ মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ছে। কিন্ত আমরা ফল খাবোনা তা কিন্ত না! তবে বুঝেশুনে ও দেখে খাবো। যাতে করে রসালো এ ফলগুলো খেয়ে আমরা ও পরিবারের শিশুরা বাড়তি পুষ্টি পেতে পারি ও সুস্থ থাকতে পারি। 

রসালো ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ 

আম: মিষ্টি এ ফলের ১০০ গ্রামে ৪০০ ইউনিট ভিটামিন এ, ১২ গ্রাম শর্করা, ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। পাকা আমের ৬০ শতাংশের বেশি ক্যারোটিন, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে মজবুত করে। কাঁচা আমে থাকা ফাইবার পিকটিন কোলেস্টেরলসহ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে। আমে থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া আম খেয়ে শিশুরাও পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়। 

কাঁঠাল: কাঁঠাল হলো রুচি ও শক্তিবর্ধক। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ৯.৯ গ্রাম শর্করা, ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।  

লিচু: লিচু শিশুদের খুবই প্রছন্দের খাবার। লিচু দেহের পানির চাহিদা ও পিপাসা মেটাতে খুবই কার্যকর। ১০০ গ্রাম লিচুতে ১৩.৬ গ্রাম শর্করা থাকে। ক্যালসিয়াম আছে ১০ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৩১ মিলিগ্রাম। কিন্ত  একসঙ্গে বেশি পরিমানে লিচু খাওয়া যাবে না। আবার খালি পেটে লিচু খেলে শরীরে গ্লুকোজ কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।  তাই লিচু খাওয়ার পূর্বে একটু সাবধানতা প্রয়োজন। 

তরমুজ: তরমুজকে বলা হয়ে থাকে গ্রীষ্মকালের শুরুর প্রথম ফল। প্রায় ৯০% পানি থাকায় ক্লান্তি দূর করতে তরমুজের জুড়ি নেই। ১ কাপ তরমুজে ১১ গ্রাম শর্করা থাকে, যার ৯ গ্রামই আবার চিনি। তরমুজে ভিটামিন এ, বি ও সি অনেক বেশি থাকে। ভিটামিন সি ঋতুজনিত সর্দি, টনসিল, গরম-ঠাণ্ডাজ্বর ও নাক দিয়ে পানি পড়া কমায়। তরমুজের লাইকোপিন ও সিট্‌রুলিন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।  

জাম: প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন সি থাকে এই ফলে। রক্তস্বল্পতা দূর করে। এতে শর্করা খুব কম। ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে প্রচুর জাম খেতে পারেন। জামের বিচি রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। জাম দেহের যেকোনো সংক্রমণ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।  

তাল: তাল গ্রীষ্মের শেষের দিকের একটি পরিপূর্ণ রসালো ফল। এটিকে বলা হয় ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সে। তালের আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগে বেশ উপকারী। তাল দিয়ে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার যেমন তালের ক্বাথ, জুস, বড়া, কেক, পিঠা ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায়।  কীভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়  কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল খেলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম রোগে বিশেষ করে বদহজম, পেটের পীড়া, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়াসহ ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মহিলারা এর প্রভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারে। শিশুরা বিষাক্ত পদার্থের বিষক্রিয়ার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অনেক সময়  এ কারণে শিশু মৃত্যুর খবরও পাওয়া যায়।  

কেমিক্যালযুক্ত পাকানো ফল চেনার উপায়: সিজন শুরুর আগেই দেখা যায় পাকা আম, লিচু ও নানান ধরনের গ্রীষ্মকালীন ফলে বাজার ঠাসা। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে এই ফলগুলোর স্বাদ নেহায়েতই পানসে ও স্বাদ-গন্ধহীন। এভাবে সহজেই চিহ্নিত করা যায়।  কার্বাইড/কেমিকেল দিয়ে পাকানো ফলগুলো ফলের চেহারা হবে উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়।  গোটা ফলের চেহারা একই রকম হবে, রঙ একই রকম হবে। দেখে মনে হবে সমানভাবে পেকেছে। গাছপাকা ফল কখনো সমানভাবে পাকে না।  ফলের মাঝে স্বাভাবিক পাকা ফলের মতো মৌ মৌ গন্ধ থাকবে না।  অনেক ফলে রসুনের মতো হালকা গন্ধ থাকতে পারে।   তাই রঙিন দেখলেই আকৃষ্ট হয়ে যেন  এ ফলগুলো না কিনি। মনে রাখতে হবে, একটি নির্ধারিত সময়ের আগে যে ফল বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো অপরিপক্ক এবং কার্বাইড বা এথ্রিল ধরনের কেমিক্যাল দিয়ে রং করা ফল। এগুলো আসলে পাকা না, পাকানো দেখানো হয় শুধু লাভ ও লোভের আশায়। আর আমাদের কোমলমতি শিশুরা এসব পাকানো রঙের মোহে পড়ে অকালেই ঝরে যাচ্ছে।  

লেখক: মেডিকেল অফিসার (নবজাতক ও শিশু বিভাগ) ১০০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা হাসপাতাল, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ। চেম্বারঃ আল-আরাফাত হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিএন্ডবি রোড, পুরাতন বাস স্ট্যান্ড, নরসিংদী।

প্রয়োজনে- ০১৯২৯৪৬৬৯৩৩।

 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status