ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

‘সবদিক থেকে লাভবান বড়রা, বঞ্চিত সাধারণ মানুষ’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৯ মার্চ ২০২৩, রবিবার

ব্যাংক ঋণের সুদহার বেঁধে রাখার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো কাক্সিক্ষত হারে ঋণ পাচ্ছে না। অন্যদিকে সবদিক থেকেই কম সুদে বড়রা সব পেয়ে যাচ্ছে। লাভবান হচ্ছে তারা। এভাবে বড়রা লাভবান হওয়ায় সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে 
সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। শনিবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের বিশেষ ওয়েবিনার ‘আইএমএফের ঋণ: ভোগ করবে কে, পরিশোধ করবে কে?’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ও দৈনিক প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মনির হায়দার। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে দেশ ও বিদেশ থেকে বিশ্লেষক ও সাংবাদিকরা যোগ দেন।
অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, দীর্ঘদিন ডলারের বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে। যেমন; এত দিন টাকার মান ৪০ শতাংশ অতিমূল্যায়িত ছিল।

বিজ্ঞাপন
ডলার সংকট শুরু হওয়ার পর ২৫ শতাংশের মতো টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আরও ১৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার বেঁধে রাখার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো কাক্সিক্ষত হারে ঋণ পাচ্ছে না। বড়রা সব পেয়ে যাচ্ছে, তাও আবার কম সুদে। সবদিক থেকেই তারা লাভবান হচ্ছে। তেল, চিনি থেকে শুরু করে আমদানি পণ্যের দাম বাড়লেও তারা লাভবান হচ্ছে। এভাবে বড়রা লাভবান হওয়ার কারণে সমাজে যেমন বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। একটি শ্রেণির হাতে অর্থ-সম্পদ পুঞ্জীভূত হওয়ায় তারা ফুলেফেঁপে উঠলেও সরকারের রাজস্ব বাড়ছে না; বরং প্রতিবছরই তা কমছে। সে কারণে জিডিপি’র অনুপাতে সরকারি ব্যয় কমে যাচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ।

আনু মুহাম্মদ বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণ হলে দেশের অর্থনীতির ভালো হবে, এটা একধরনের উইশফুল থিঙ্কিং বা মন বলে সত্য, কাজেই তা সত্যÑএমন বিষয়। অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এর আগে ১২ বার আইএমএফের ঋণ নিয়েছে, কিন্তু তারপরও দেশে খেলাপি ঋণ বা কর-জিডিপি’র অনুপাতে বাড়েনি; বরং কমেছে। সে জন্য এ বিষয়ক বোঝাপড়া দরকার। এ বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, আইএমএফ এসব শর্তের বিষয়ে অতটা আন্তরিক নয়। সরকার এসব পারে না, কিন্তু যেটা পারে সেটা হচ্ছে, দফায় দফায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করতে। এতে জনগণের বোঝা বাড়ে। অথচ দেশের জ্বালানি খাত পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে বলে জানান আনু মুহাম্মদ। সরকারের ভুল নীতির কারণে তা হচ্ছে। কিন্তু আইএমএফ এ বিষয়ে একটি কথাও বলে না। তাই আইএমএফ আন্তর্জাতিক পরিসরে বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে বলে মনে করেন তিনি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আইএমএফের কাছে ঋণের আবেদন করার কারণ অর্থনৈতিক। এটা রোগের লক্ষণ। রোগটা হলো গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতার অভাব, জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার অভাব। এ সংসদকে ‘তথাকথিত নির্বাচিত সংসদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রকৃত নির্বাচন করতে হলে পাঁচ বছর পর পর হলেও জনগণের কাছে যেতে হয়। কিন্তু তা হচ্ছে না বলে যারা সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করছে, সরকার তাদেরই তুষ্ট করছে, অর্থাৎ বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো। 

শওকত হোসেন বলেন, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আইএমএফ সবার ওপর একই ধরনের শর্তারোপ করে। সে জন্য তারা বিশ্বের সবচেয়ে অ-জনপ্রিয় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, এবার বাংলাদেশ বেশ আগেভাগে আইএমএফের ঋণ চেয়েছে, শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশের হয়নি। বাংলাদেশ ঋণ চেয়েছে, বেইলআউট নয়। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞরা সাধারণত আইএমএফকে ডেকে আনা পছন্দ না করলেও এবার তার ব্যতিক্রম দেখা গেছে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status