শরীর ও মন
সোরিয়াসিস ও বায়োলজিক্স চিকিৎসা
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল হাই
১৭ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার
গতকাল দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ডার্মাটোলজি বিভাগ আয়োজিত সোরিয়াসিস রোগের আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কিত একটি সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। নিঃসন্দেহে সেমিনারটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ছিল। আমরা সবাই জানি, সোরিয়াসিস ত্বকের একটি অন্যতম রোগ। বিশ্বের প্রায় ২৫ কোটি লোক এ রোগে আক্রান্ত। এ রোগে যে শুধু ত্বক আক্রান্ত হয়, তাই নয়, ত্বকের গভীরেও এর কুপ্রভাব অনেক। বিশেষ করে অস্থিসন্ধিতে এর ধ্বংসকারী প্রভাব প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রোগীর মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। এ রোগের চিকিৎসা বেশ জটিল। প্রথমত এ রোগের চির আরোগ্য বলে কোনো কথা নেই, দ্বিতীয়ত, এ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধগুলো যথেষ্ট রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াযুক্ত। যেহেতু এ রোগের চিকিৎসা প্রায় সারা জীবনই নিতে হয়, তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ঔষধগুলো নির্বাচনে চিকিৎসকদেরকে অনেকভাবেই গলদঘর্ম হতে হয়, নিয়মিত রক্ত ও আনুষঙ্গিক চেকআপের প্রয়োজন হয়। আবার বেশির ভাগ ঔষধই শিশু অবস্থায় অথবা গর্ভকালীন সময়ে প্রয়োগ নিষেধ।
যেহেতু এ ঔষধগুলো অন্য অঙ্গের ক্ষতি না করে একদম রোগসংশ্লিষ্ট কোষের উপর সরাসরি কাজ করে, তাই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেকটাই কম এবং প্রায় সব ধরনের রোগীকেই প্রয়োগ করা যায়। এ ঔষধগুলোর সার্বিক কার্যকারিতা ও প্রচলিত অন্যান্য ঔষধগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। তাহলে ধরে নেয়া উচিত যে, বাংলাদেশের এ রোগের প্রচলন যথেষ্ট শুরু হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এদেশে অল্প দু’চারজন বিত্তশালী ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে এ ঔষধ তেমন প্রয়োগই হয়নি। কারণ একটাই। অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বর্তমানে বাংলাদেশে সেকুকিনুমাব নামের যে বায়োলজিকটি কম মূল্যে পাওয়া যায়, তার একটি এমপুলের মূল্য প্রায় ২৩ হাজার টাকা। প্রথম মাসে প্রায় আটটি এমপুলের প্রয়োজন হয়, সুতরাং খরচ প্রায় ২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে প্রতি মাসে ৪টি এমপুলের প্রয়োজন হবে এবং তার মূল্য ১ লাখ টাকা। এ তো শুধু ইনজেকশনের মূল্য, এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক খরচ তো রয়েছেই; যেমন, নিয়মিত রক্তচাপ, চিকিৎসকের কনসালটেশন ফি ইত্যাদি। এ হিসাবটা শুধু একটি ব্র্যান্ডের ইনজেকশনের। কিছু কিছু ব্র্যান্ড রয়েছে, যাদের একই ঔষধের মূল্য চার পাঁচ গুণ বেশি। এ চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ার পরও বহির্বিশ্বে দু’টি কারণে এর ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রথমত এ রোগের কার্যকারিতা অন্যান্য চিকিৎসা থেকে বেশি, দ্বিতীয়তঃ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অপেক্ষাকৃত কম। তবে আরেকটি কারণ রয়েছে, তা হলো হেলথ ইন্স্যুরেন্স ও সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা।
যার ফলে তারা পকেট থেকে অতিরিক্ত পয়সা খরচ না করেও এর চিকিৎসা সহজে পেতে পারেন। বাংলাদেশে এখনো স্বাস্থ্য বীমা বিষয়টি সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে নেই। যার ফলে বড় কোনো চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হলে মধ্যবিত্ত তো বটেই, উচ্চমধ্যবিত্তও নিঃস্ব হয়ে যান। যাই হোক, সোরিয়াসিসের চিকিৎসায় বায়োলজিকসের ব্যবহার না হওয়ার কারণগুলো আসলে আমরা সবাই বুঝি। তবে এটা স্বীকার করে নিতে হবে যে, বায়োলজিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ শতাব্দীর অন্যতম আবিষ্কার। রিউমাটলজি এবং অন্যান্য কিছু কঠিন রোগে এর ব্যবহার সাফল্যের সঙ্গে হচ্ছে। বাংলাদেশের লাখ লাখ সোরিয়াসিসের রোগীরও বিজ্ঞানের এ আবিষ্কার এর সুফল পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
লেখক: (চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ) জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চেম্বার: ১২, স্টেডিয়াম মার্কেট, সিলেট। ফোন: ০১৭১২-২৯১৮৮৭
মন্তব্য করুন
শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন
শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত
৯৫ ভাগ কিশোরীকে টিকা দেয়ার টার্গেট/ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকা পেল ১১ শিক্ষার্থী

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]