শরীর ও মন
চুল পড়ে যাচ্ছে: প্রতিরোধ ও পরিত্রাণ
ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
২৭ মে ২০২২, শুক্রবার
যে কারণসমূহ চুল পড়ার জন্য মনে করা হয়:
১. চুলের গোড়ায় ছত্রাক সংক্রমণ ও অতিরিক্ত খুশকি অন্যতম কারণ।
২.অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোনের প্রভাব: এ কারণে মহিলাদের চুলপড়া ও পুরুষের টাক হয় বলে মনে করা হয়। যাদের শরীরে এই হরমোনের প্রভাব বেশি, তাদেরই বেশি করে চুল পড়ে। নারীর মেনোপজের সময় ও পরে অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন আনুপাতিক হারে বেড়ে যায় এবং হঠাৎ করেই চুল বেশি করে পড়া শুরু হয়।
৩. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমিষ, শর্করা, চর্বি, খনিজ ও ভিটামিন ইত্যাদি পরিমিত পরিমাণে না থাকলে চুল পড়ে যেতে পারে।
৪. দুশ্চিন্তা বা মানসিক সমস্যায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে চুল পড়তে পারে।
৫. হরমোনের তারতম্যে চুল পড়ে যেতে পারে। যেমন-থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কম বা বেশি হলে, গর্ভবতী অবস্থায় এবং বাচ্চার জন্মের পর হরমোনাল ভারসাম্য পরিবর্তিত হয় বলে চুল বেশি পড়ে।
৬. কেমোথেরাপি দেয়ার দুই-তিন সপ্তাহ পর চুল পড়া শুরু করে।
৭. টাইট করে খোঁপা বা ব্যান্ড করলে চুল পড়ে যেতে পারে। আবার খুব বেশি পরিমাণে চুল রঙিন করার প্রসাধন ব্যবহার করলে, চুল সোজা করা বা ক্রমাগত রিবন্ডিং করলে চুল পড়ার হার বেড়ে যেতে পারে।
৮. কিছু অসুখে যেমন: অ্যানিমিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, ডায়াবেটিস ইত্যাদিতে চুল পড়ে যেতে পারে।
৯. শরীরে বড় কোনো অপারেশনের পর বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ, শারীরিক পরিবর্তন অথবা মানসিক উদ্বেগের কারণে অনেক সময় চুল পড়ে যেতে পারে।
১০. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় চুল পড়তে পারে। যেমন: জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, প্রেসারের ওষুধ, রক্ত তরলীকরণের ওষুধ, হরমোন, মানসিক অসুস্থতার ওষুধ ইত্যাদি।
১১. টাক পড়ার ক্ষেত্রে বংশগত কারণকেই প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়।
চুল পড়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো অজানা। তবে যে কারণই হোক না কেন বর্ণিত সমস্যাগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই আজকাল চুলের এ সমস্যা সমাধানে সহায়ক ও ফলপ্রসূ। কিছু সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ও থেরাপির মাধ্যমে আমরা চুল পড়া ব্যক্তিকে নতুন চুল গজানো ও নতুন লুক দিতে সক্ষম হচ্ছি।
চুল পড়ে যাচ্ছে, বুঝবেন যেভাবে-
দেখা যায়, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ১০০ থেকে তার কিছুটা বেশি পর্যন্ত চুল পড়া কিন্তু স্বাভাবিক। তবে এর চেয়ে বেশি পড়লে অনেকেরই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রাথমিকভাবে বালিশ, তোয়ালে বা চিরুনিতে লেগে থাকা চুল গুণেও কিছুটা অনুমান করা যায় যে চুল অতিরিক্ত পড়ছে কিনা। আরও নিশ্চিত হতে অল্প এক গোছা চুল হাতে নিয়ে হালকা টান দিন, যদি গোছার চার ভাগের এক ভাগ চুল উঠে আসে, তবে মনে করবেন চুল অতিরিক্ত পড়ে যাচ্ছে।
নিজেই করুন প্রাথমিক প্রতিরোধ:
* চুল খুশকিমুক্ত ও পরিষ্কার রাখুন।
* সর্বদা টেনশন মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন ও পর্যাপ্ত ঘুমান।
* চুলে কলপ, কৃত্রিম রং এসব এড়িয়ে চলুন।
* জোর করে বা চুলে চাপ দিয়ে কোঁকড়া চুল সোজা করবেন না, চুলে কেমিক্যাল না করাই ভালো।
* চুল শুকিয়ে আস্তে আস্তে আঁচড়াবেন এবং ভেজা চুল বেশি আঁচড়াবেন না।
* চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
* প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণ করুন।
চিকিৎসা:
চুল পড়া রোগীদের টেনশন দূর করতে এবং নতুন চুল গজাতে বেশ কিছু কার্যকরী চিকিৎসা আছে। এ বিষয়ক চিকিৎসকরা প্রথমে চুল পড়া ব্যক্তির চুলের অবস্থা দেখে এবং ট্রাইকোস্ক্যান করে দেখেন চুল কী পর্যায়ে আছে। যদি গুরুতর সমস্যা না হয় তাহলে চিকিৎসকরা প্রতিদিনের রুটিনে করণীয় ও প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ ও পথ্য দিয়ে থাকেন। আর যাদের চুল রুগ্ণ-রুক্ষ, খুশকিতে ভরপুর, আগা ফাটা, মাথার স্কাল্পে সমস্যা, মাথায় পয়সার মতো গোল হয়ে চুল পড়ে যাচ্ছে বা টাক মাথা, তাদের জন্য কিছু চিকিৎসা, থেরাপি ও চুল প্রতিস্থাপন পদ্ধতি আছে। টাক মাথা ব্যক্তিদের যদি পেছনে যথেষ্ট চুল থাকে তখন সেখান থেকে চুল পড়াসহ তুলে এনে প্রতিস্থাপন করা হয়। যাকে বলা হয় স্থায়ী পদ্ধতি। শরীরের অন্য জায়গা থেকেও চুল তুলে এনে প্রতিস্থাপন করা যায়। উন্নত বিশ্বে যেখানে চুল প্রতিস্থাপন করতে ২/৩ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে বাংলাদেশে ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে। ব্যাপারটি জমিতে ধানের চারা রোপণের মতো একটি বুনন প্রক্রিয়া। এ ছাড়া চুলের সমস্যা হলে ও নতুন চুল গজাতে বর্তমানে পিআরপি থেরাপি খুব জনপ্রিয় পদ্ধতি। চুলের আরও যে চিকিৎসা রয়েছে তাহলো-
১. কর্টিকোস্টেরয়েড: টপিক্যাল বা লাগানোর, ওরাল বা মুখে খাবার এবং ইন্ট্রালেশনাল বা আক্রান্ত জায়গায় ইনজেকশন।
২. মিনক্সিডিল ৫% মাত্রায়
৩. ডাইফেনসাইপ্রোন
৫. বায়োলজি।
লেখক: (হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ও চুল বিশেষজ্ঞ) সহকারী অধ্যাপক (সাবেক) চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, ফার্মগেট, ঢাকা।
প্রয়োজনে- ০১৭১১৪৪০৫৫৮