প্রথম পাতা
শেষ পর্যন্ত জাপা কী করবে?
স্টাফ রিপোর্টার
১৪ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার
পার্টি চেয়ারম্যানের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনায় চার মাস প্রায় স্থবির ছিল জাতীয় পার্টি। এই স্থবিরতা এখন আর নেই। কিন্তু আছে দোটানার চাপ। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে জাতীয় পার্টিতে এই চাপ ক্রমে ঘনীভূত হচ্ছে। বিগত দুই নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। ক্ষমতার রাজনীতির নির্ণায়কের ভূমিকা নিয়েছিল। এবার দলটির অবস্থান কী হবে সেই প্রশ্ন রাজনীতির মাঠে। প্রশ্ন আছে আমজনতার মাঝেও। শেষ পর্যন্ত কী করবে জাপা? এমন নানা প্রশ্ন ক্রমে জোরালো হচ্ছে। নানা কারণে এখন দলটির নেতাকর্মীরাও বিভ্রান্ত।
জাতীয় নির্বাচনের আগে দলীয় ঝামেলা নিয়েই ভুগছে জাতীয় পার্টি। দৃশ্যত ঐক্যের কথা বলা হলেও দলীয় মেরূকরণ এখনো থেমে নেই। বরং তা আরও জোরালো হচ্ছে। এমন অবস্থায় জাতীয় পার্টি জাতীয় নির্বাচনের আগে একক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা এ নিয়ে সংশয়ে আছেন দলটির নেতাকর্মীরা। দলীয়ভাবে বলা হচ্ছে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। তবে তিনশ’ আসনে প্রার্থী দেয়ার মতো অবস্থান দলটির নেই। প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি নির্ভর করে মূলত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। নেতারা বলছেন, তখনকার পরিস্থিতিই জাতীয় পার্টির অবস্থান নির্ধারণ করে দেবে। জাতীয় পার্টি আগের মতো ক্ষমতা নির্ধারণী অবস্থানে থাকতে পারে। বিরোধী শিবিরের সঙ্গে প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারে।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘ চার মাস বিরতি দিয়ে গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি দলের বনানীস্থ কার্যালয়ে কো চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের একটি যৌথ সভা করেন। সভায় ছিলেন না জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। তবে তার ছেলে সংসদ সদস্য রাহগীর আল মাহি (সাদ এরশাদ) উপস্থিত ছিলেন। তিনি সেখানে বক্তৃতাও দিয়েছেন। ওই বৈঠকের পর দলীয় একটি সূত্র দাবি করে বৈঠকে সাদ এরশাদের উপস্থিতি ছিল বিশেষ উদ্দেশ্যে। রওশন এরশাদপন্থি নেতারা চাইছেন ঐক্যের নামে জিএম কাদেরকে নতুন করে কোণঠাসা করতে। জিএম কাদেরকে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে তাদের ওপর থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করাতে চান তারা। জাপার বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে। যারা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন তাদেরকে রেখে অন্য নেতাদের পর্যায়ক্রমে ক্ষমা করার অনুরোধ করেছেন অনেক নেতা।
দলীয় সূত্র জানায়, জিএম কাদের যাদের অব্যাহতি দিয়েছেন তারাই এখন নেপথ্যে থেকে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। কারণ জিএম কাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বহিষ্কার করেছেন। দল ক্ষমা না করলে তাদের আর রাজনীতি করার সুযোগ থাকে না। জিএম কাদেরের ওপর চাপ দিতে এসব বহিষ্কৃত নেতারা কাউন্সিল ডাকার চিন্তা করছেন বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।
এই বিষয়ে জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএমএম আলম মানবজমিনকে বলেন, দল থেকে বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মীদের দলে ফিরিয়ে নেয়ার কথা ছিল জিএম কাদেরের। গত ২১শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে বহিষ্কৃত সব নেতাকর্মীদের দলে ফিরিয়ে নিয়ে পদ-পদবি সমন্বয় করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে জিএম কাদেরকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল। জিএম কাদের আমাদের কথা রাখেননি। সূত্র জানায়, বেগম রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সাদ এরশাদকে নির্বাহী সভাপতি এবং গোলাম মসীহকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করে ২১ জনের একটি কমিটি করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন বহিষ্কৃত নেতারা।
যদিও এমন তৎপরতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ আছে।
জাপার একাধিক সূত্র জানায়, যৌথ সভায় জাপার সাবেক মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা ও চেয়ারম্যানের সাবেক উপদেষ্টা জিয়াউল হক মৃধার বিষয়ে একাধিক নেতা কথা বলেছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীরা যেন মাফ না পায় তার সুপারিশও করেছেন অনেকে। এই বিষয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার মানবজমিনকে বলেন, রাজনীতিতে কেউ চিরশত্রু বা চিরবন্ধু নয়। আওয়ামী লীগের এমন কিছু নেতাকর্মী ভুল-ত্রুটি করেছিলো। প্রধানমন্ত্রী তাদের ক্ষমা করে আবার দলে নিয়েছেন। এখন কাদের নেয়া হবে আর হবে না তা জাপা চেয়ারম্যান জানেন।
দলীয় পরিকল্পনার বিষয়ে নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় পার্টি বিভিন্ন জেলার সম্মেলন শেষ করবে। এরপর কাউন্সিলও করার সিদ্ধান্ত রয়েছে জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির। এই বিষয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী জুন মাসের মধ্যে জেলা সম্মেলন শেষ করবো। আগামী নির্বাচনের আগে আমরা চেষ্টা করবো, দলের কাউন্সিল করার। জুলাইয়ের পরে আমরা কাউন্সিল করতে পারি। ঈদের পরে আমরা প্রতিটি বিভাগে গণসংযোগের জন্য একটি করে বড় সমাবেশ করবো। সমাবেশগুলো যেন ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারি এজন্য আমাদের নানা কার্যক্রম থাকবে।
যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সভায় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি জাপা নেতাদের আস্থা নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে জাতীয় পার্টি বিশ্বাস করে না- সভা শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। কী কারণে জাতীয় পার্টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিশ্বাস করে না- এমন প্রশ্নের জবাবে রুহুল আমিন হাওলাদার মানবজমিনকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে আমরা নিরপেক্ষতা পাইনি। তারা আমাদের নির্বাচন করতে দেয়নি, এরশাদ সাহেবকে তার বক্তব্য রাখতে দেয়া হয়নি। সরকার প্রধান হিসেবে যে সহযোগিতা করার কথা ছিল তা আমাদের করা হয়নি। তবে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে।
দলটির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, জিএম কাদের দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলছেন। এতে নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হচ্ছেন। সাধারণ মানুষও এতে আশান্বিত। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের সময়ে দেশ, মানুষ এবং দলের স্বার্থ রক্ষা করেই জিএম কাদের যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবেন।
পাঠকের মতামত
সৈরাচার সৈরাচার ভাই ভাই। জনগণের কপালে দুঃখ ছাড়া কিছু নাই।
যেই জাপা সেই জাপাই থাকবে। সম্ভবত লোভের কারণে দেশকে গনতন্ত্রহীন করার ভবিষ্যত ইতিহাসে জাপার নামও থাকবে। *হারুন রশিদ মোল্লা
জাতীয় বেইমান জাতীয় শৈরাচার জাতীয় পার্টি এগুলো একই ধরনের শব্
জাপার উপায় নেই আওয়ামীলীগের তথা শেখ হাসিনার বাইরে যাওয়ার, লাফালাফি করে শেষে শেখ হাসিনার কাদে ভর করেই ক্ষমতার স্বাদ নিয়ে থাকবে এই জাপা,কারণ এটা এই দলের চরিত্র,ওরা সবসময় ক্ষমতার স্বাদ নিয়েই রাজনীতি করতে চায়,জনগণ সব জানে এবং বুঝে,নইলে জাপা চেয়ারম্যান জনাব কাদের নিজেই উনার নিজ আসন লালমনিরহাট এ আসাদুল হাবীব দুলুর কাছে অসম্মানজনকভাবে হারবে এটা জনাব কাদের সাহেব নিজেও জানেন।
এবার চরমোনাই জাপা জোট করে বিরোধীদল হিসেবে নির্বাচন করতে পারে
আমরা যতই মন্তব্য করি রাজনৈতিক দল তাদের অস্তিত্ব রক্ষার হিসাব নিকাশ করেই সিদ্ধান্ত নেয় । জাপা এবারও শেষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের সঙ্গেই জোট বদ্ধ হবে আমার মনে হয় । এর চেয়ে ভাল পন্থা বা বিকল্প দেখি না ।
আমরা যতই মন্তব্য করি রাজনৈতিক দল তাদের অস্তিত্ব রক্ষার হিসাব নিকাশ করেই সিদ্ধান্ত নেয় । জাপা এবারও শেষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের সঙ্গেই জোট বদ্ধ হবে আমার মনে হয় । এর চেয়ে ভাল পন্থা বা বিকল্প দেখি না ।
দেশে যে আজ একটা রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে তার জন্য এই গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি অনেকাংশে দায়ি। তারা সংসদে বিরোধী দল আবার সরকারের অংশ হয়ে দেশের রাজনীতি জগাখিচুরি করেছেন। জনগন সুযোগের অপেক্ষায় আছে, উচিত জবাব দেবে এবং জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতি হতে আস্তকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
সবই নাটক, শেষ পর্যন্ত জাপা নির্বাচনে যাবে, সাথে যাবে চরমোনাই।
Japa never disappointed us for their acting in any national crisis. So taking consider their precious script. They will boycott the election until they assured to get 40/50 seats from government. The nation will go through one after another twist like Star Jolsha or Zee Bangla. Then finally they will come up with solutions that for the greater interest of the Mother Earth they decided to join the election. Public will cry and wipe their wet eyes and pray for their future development.
দলের স্বার্থে যা যা করণীয় জাপা তাই করবে।আগে নিজেদের পিঠ বাঁচাবে। তারপর অবস্থা বুঝিয়া ব্যবস্হা নিবে। জয়বাংলা।
মুজিবুল হক চুন্নুর কথাই জাতীয় পার্টির আসল কথা। জাতীয় পার্টি তত্বাবধায়ক সরকারে বিশ্বাস করেনা। তারা ভাল করেই জানে এককভাবে নির্বাচন করলে জাতীয় পার্টি হয়তো রংপুরে কয়েকটি আসন পেতে পারে। আর জাতীয় পার্টির ১৩ বছরের ভূমিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিএনপি নির্বাচনে না আসলেই জাতীয় পার্টির লাভ, সংসদে তারা বিরোধী দলে থাকার সুযোগ পাবে। ৯০ এ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির ভূমিকাই ছিল মূখ্য, তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে বিএনপির কারণেই এরশাদের পতন হয়েছিল, আলীগ-জামাত তো তখন এরশাদের সংসদেই ছিল। সে কারণে বিএনপির প্রতি জাতীয় পার্টির প্রতিশোধ পরায়নতা এখনো বিদ্ধমান। সুতরাং জাতীয় এখন যা-ই বলুক তারা নিজেদেরই সৃষ্টি করা গন্ডি থেকে বের হয়ে আসতে পারবেনা।
জিএম কাদের সাহেব যাই বলুক শেষ পর্যন্ত এ-সব কথা ভূল প্রমান করে আবার দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবে। এটি একটি সুবিধাবাদি দল, যা ইতোমধ্যে প্রমানীত। ধন্যবাদ।
জাপা কি করবে এই নিয়ে গবেষনার প্রয়োজন কি? জাপা আর চরমোনাইর দল আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবে গোপনে নয় একেবারে ঢাক ঢোল পিটিয়েই। যারা রাজনীতির র বুঝেনা তাদের এব্যাপারে মাথা ঘামানোর দরকার নাই তাতে শুধু শুধু ঘুম নষ্ট হবে। জাতীয় পার্টি আওয়ামীলীগের পূরনো দালাল আর চরমোনাই এবার নব্য দালাল হিসাবে খাতায় স্বাক্ষর বা সই করবে। তাহলে বুঝেন নির্বাচনে এরা কি করবে।
উনারা জাতির সাথে বেইমানি ও বিশ্বাসঘাতকতা করবে