শরীর ও মন
অটিজম চিকিৎসায় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে অভিভাবকগণ
ডা. এম এ হক, পিএইচ.ডি
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার
বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে ইন্টারনেটে সার্স দিলেই সকল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। সেখানে অটিজমের চিকিৎসা বিষয়ে সার্স করলে দেখা যায় “এর কোনো ঔষধ নেই”। এবার হোমিওপ্যাথিতে অটিজমের চিকিৎসা বিষয়ে সার্স করলে অনেক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এবং ঔষধের নাম পাওয়া যায়। অনেকেই মনে করেন, ইউরোপ ও আমেরিকা যে রোগের চিকিৎসা করতে পারে না আমরা তা কীভাবে পারবো? খুবই যুক্তির কথা। এসব বিষয় নিয়ে অভিভাবকগণ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন। আমার আজকের প্রবন্ধ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকা এসব অভিভাবকগণের জন্য।
অটিজমের কারণ:
মাতৃগর্ভে মানব ভ্রূণ সৃষ্টির শুরু থেকেই তার মধ্যে নেগেটিভ ও পজিটিভ ২টি ফ্যাক্টর কাজ করে। ২টি ফ্যাক্টরের মধ্যে যে ফ্যাক্টরটি জয়লাভ করে সেটির প্রভাবই আমাদের শরীর ও মনে প্রতিফলিত হয়। পিতার বংশের জেনেটিক ফ্যাক্টরসমূহ শুক্রাণুর মাধ্যমে এবং মাতার বংশের জেনেটিক ফ্যাক্টরসমূহ ডিম্বাণুর মাধ্যমে সন্তানের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়। ফলে, সন্তান পিতা-মাতার বংশের জেনেটিক পজিটিভ ও নেগেটিভ ফ্যাক্টর নিয়ে বেড়ে উঠে। মাতার গর্ভধারণের সময় থেকেই এই ক্রিয়া শুরু হয় এবং মাতার শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিষয়ও ফ্যাক্টরসমূকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে।
অটিজমে কি ঘটে?
অটিজমে শিশুর নিউরো-ডেভেলপমেন্ট সঠিকভাবে হয় না, যে কারণে মনোবিকাশের সমস্যা হয়। ব্রেনের নিউরোনসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে না পারার কারণে শিশুর আচরণ, কথাবার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না। ব্রেন ডেভেলপ হয়ে পরিপূর্ণতা পেলে ব্রেনের নিউরোনসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করলে শিশুর আচরণ, কথাবার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিক হবে।
চিকিৎসা:
হোমিওপ্যাথিতে অটিজম শিশুদের ভালো মানের চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসায় শিশুদের বুদ্ধি, ধৈর্য, আই-কন্ট্রাক্ট, শিশুর আচরণ, কথাবার্তা ইত্যাদি বিষয়ে উন্নতি হয়। এ ছাড়াও হাইপার শিশুদের আচরণও স্বাভাবিক হয়। ‘অটিস্টিক শিশুদের’ সমস্যা যেহেতু ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার’ সেহেতু প্রয়োজন ‘নিউরো ডেভেলপমেন্ট’ চিকিৎসায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। চিকিৎসা শুরুর পর রুগীর মানসিক উন্নতি হলে, পূর্বের তুলনায় মনোযোগী এবং নিজের কাজ নিজে করার আগ্রহ তৈরি হলে বুঝতে হবে চিকিৎসা সঠিক হচ্ছে। তবে, একথা স্মরণ রাখতে হবে এই পরিবর্তন প্রথমদিকে ধীরে ধীরে হয়। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সফলতা এবং ঝামেলা মুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রমেই এই চিকিৎসার প্রতি রুগীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা অটিজম সন্তানের চিকিৎসা শুরুর পর থেকে প্রতি সপ্তাহে অভিভাবকগণের নিকট থেকে তাদের সন্তানের ঊন্নতি বিষয়ে ফলোআপ রিপোর্ট সংগ্রহ করি এবং সে অনুযায়ী অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করি। ফলে, শিশুটি আমাদের পর্যবেক্ষণে থাকে। এভাবে চিকিৎসা করে দ্রুততম সময়ে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় পিতা-মাতার বংশগতির ইতিহাস, গর্ভকালীন মায়ের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা এবং শিশুর ‘মায়াজমের’ দিকে খেয়াল রেখে ঔষধ ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু ব্যায়ামের প্রয়োজন যা মস্তিষ্কের নিউরোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। অটিজম শিশুর অভিভাবকদের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের সন্তানকে স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরিয়ে আনতেই আজকের এই প্রচেষ্টা।
লেখক: ডা. এম এ হক, পিএইচ.ডি (স্বাস্থ্য), এম. ফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। স্পেশালিটি ইন ক্রনিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরো-সাইকিয়াট্রিক ডিজঅর্ডার। চেম্বার: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্র্স সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭১২-৪৫০ ৩১০;