ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

নিহত ৪৪, আহত ১৫৭

পাকিস্তানে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা

মানবজমিন ডেস্ক
৩১ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার
mzamin

নৃশংস। বর্বর। বর্ণনার অযোগ্য। এমন এক  পৈশাচিক হামলা চালানো হয়েছে পাকিস্তানের পেশোয়ারে একটি মসজিদের ভেতরে। পুলিশ লাইনের  ভেতরে অবস্থিত মসজিদটিতে গতকাল সবেমাত্র জোহরের  নামাজ শুরু হয়েছিল। অমনি সামনের সারিতে থাকা এক আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। সঙ্গে সঙ্গে রক্তে ভেসে যায় মসজিদের মেঝে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় উড়ে যায় এর ছাদ। মেঝেতে পড়ে থাকে মুসল্লিদের ছিন্ন ভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। তার মাঝে বাঁচার আকুতি নিয়ে চিৎকার করছিলেন অনেকে।

বিজ্ঞাপন
তাদেরকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৪ জন। আহত হয়েছেন ১৫৭ জন। এর মধ্যে ৩০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পেশোয়ারের কমিশনার রিয়াজ মেহসুদ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন, জিও টিভি। ওদিকে ভারতের অনলাইন ইন্ডিয়া টুডে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আনন্দবাজার পত্রিকা নিহতের সংখ্যা ৪৬ বলে দাবি করেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। আফগানিস্তানে টিটিপির নিহত কমান্ডার উমর খালিদ খুরাসানির এক ভাই এই দায় স্বীকার করেছেন। বলেছেন, তার ভাইকে হত্যার বদলা নেয়া হয়েছে।   মসজিদটি পেশোয়ারের পুলিশ লাইনে অবস্থিত। ফলে নিহত ও আহতদের মধ্যে বেশির ভাগই পুলিশ সদস্য। পেশোয়ারে জারি করা হয়েছে মেডিকেল রেড এলার্ট। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়ায় রাজধানী ইসলামাবাদে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এ নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করেছেন ইসলামাবাদের আইজিপি ড. আকবর নাসির খান। শহরের প্রতিটি প্রবেশ ও বহির্গমন পয়েন্টে চেকিং বৃদ্ধি করা হয়েছে। মনিটরিং করছে সেফ সিটি ক্যাপিটাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার ইসলামাবাদ। গুরুত্বপূর্ণ ভবন এবং বন্দরগুলোতে স্নাইপার মোতায়েন করা হয়েছে।  নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, সোমবার জোহরের নামাজ আদায় করার সময় মসজিদের সামনের সারিতে উপস্থিত ছিল আত্মঘাতী হামলাকারী। নামাজের মধ্যেই সে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে মুসল্লিদের রক্তে ভেসে যায় মসজিদ। তাদের আর্তচিৎকারে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। আহতদের উদ্ধার করে পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের এক মুখপাত্র বলেছেন, বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৪৪ জন নিহত হয়েছেন। ওই হাসপাতালে নেয়া হয়েছে কমপক্ষে ৯০ জন আহতকে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সেখান থেকে রক্তের জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।  এ ঘটনার পর ওই শহরে মেডিকেল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেছে প্রাদেশিক স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের নোটিফিকেশনে পেশোয়ারের এমটিআইসহ সব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সব ডাক্তার ও স্টাফদের জন্য জরুরি রেড এলার্ট দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই নির্দেশ বহাল থাকবে।  এ ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, বিস্ফোরণ যখন ঘটে, তখন তিনি মসজিদে যাচ্ছিলেন। বলেন, বিকট এবং শক্তিশালী বিস্ফোরণ ছিল। সঙ্গে সঙ্গে চারদিক ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। চেতনা ফিরে দেখি মসজিদের ছাদ ধসে পড়েছে। বিস্ফোরণের সময় মসজিদটিতে কমপক্ষে ১২০ জন মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন। এটা ছিল আত্মঘাতী বোমা হামলা। কারণ, হামলাকারী মসজিদের ভেতর থেকে হামলা করেছে। আহতদের বেশির ভাগই পুলিশ সদস্য।  সিভিল সেক্রেটারিয়েট এসোসিয়েশন পেশোয়ারের প্রেসিডেন্ট তাছাবুর ইকবাল নিয়মিত ওই মসজিদে নামাজ আদায় করেন। তিনি বলেছেন, মসজিদটি পুলিশ লাইনের ভেতরে হওয়ায় সব সময়ই তা থাকে সুরক্ষিত। কেউই পরিচয়পত্র না দেখিয়ে বা শরীর তল্লাশি ছাড়া সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। তবু যে ঘটনা ঘটে গেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। এটি একটি বড় মসজিদ। একবারে সেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। বিস্ফোরণের পর আমরা শুনেছি এর ছাদ ধসে পড়েছে। হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তিনি বলেছেন, মসজিদের  ভেতরে এমন বিস্ফোরণ প্রমাণ করে যে, যারা এতে জড়িত তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করতে চান তারা তাদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করতে এসব মানুষকে টার্গেট করেছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে জোট সরকার। ওদিকে হামলাকে সন্ত্রাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ধরন বলে নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল। তিনি বলেন, জাতি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে এর সমাধান করতে চায়। কিন্তু এরকম নৃশংস ও কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়ে সেই প্রচেষ্টাকে দুর্বল করতে চায় তারা। কিন্তু প্রতিজন শহীদের প্রতি ফোঁটা রক্ত ও শহীদান আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। নিন্দা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। তিনিও সন্ত্রাসী, তাদের মদতদাতা এবং সুবিধাদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন এবং উপনির্বাচনগুলোর আগে সন্ত্রাসী এমন সব ঘটনা অর্থবহুল।  ওদিকে মসজিদে আত্মঘাতী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান। তিনি টুইটারে লিখেছেন, হতাহতদের পরিবারের প্রতি আমার প্রার্থনা ও শোক। এটা জোর দিয়ে বলতে হয় যে, আমরা আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতাকে উন্নত করেছি। আমাদের পুলিশ বাহিনীকে যথাযথ সরঞ্জামে সজ্জিত করেছি ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসের হুমকি মোকাবিলার জন্য। নিন্দা জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সহ-সভাপতি আসিফ আলি জারদারিও। তিনি বলেছেন, খাইবার পখতুনখাওয়াতে যেসব সন্ত্রাসী সক্রিয় আছে তারা চরমমাত্রায় বিপজ্জনক। এক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে এই সন্ত্রাসের ভয়াবহতা শেষ করা উচিত সরকারের। প্রাদেশিক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মাহমুদ খান দৃঢ়তার সঙ্গে এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, এই হামলা হৃদয়বিদারক।  

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status