ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

দেশে ব্যবসায় দুর্নীতিই বড় বাধা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার
mzamin

দেশে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে দুর্নীতিই প্রধান বাধা। একইসঙ্গে বড় দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো,  
ঋণপ্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা ও অদক্ষ প্রশাসন। এছাড়া যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিককালের উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও অস্থায়ী নীতি ব্যবসার পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলেছে। এ ছাড়া ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২২: উদ্যোক্তা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় যোগ হয়েছে আরও নতুন ৩টি চ্যালেঞ্জ। 
গতকাল রাজধানীর ধানম-িতে সিপিডি’র কার্যালয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
মূলত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) বিশ্বজুড়ে এ জরিপ পরিচালনা করে। গত দুই দশকের মতো এবারো সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে জরিপটি পরিচালনা করে সিপিডি।

সিপিডি জানিয়েছে, জরিপের সময়কাল ছিল গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৭৪ জন পদস্থ কর্মকর্তা গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে করা এ মতামত জরিপে অংশ নেন। 
জরিপে অংশ নেয়া ৬৪.৬ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, তাদের ব্যবসায় প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো দুর্নীতি। লাইসেন্স নিতে গিয়ে, কর দিতে গিয়ে এবং বিভিন্ন পরিষেবার জন্য গেলে সেখানে আর্থিক লেনদেন করতে হয়।

বিজ্ঞাপন
অন্যান্য প্রধান সমস্যার মধ্যে রয়েছে, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া এবং অদক্ষ আমলাতন্ত্র। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতা এবং নীতির ধারাবাহিকতার অভাব। এসব কারণে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বলে জরিপে জানিয়েছে সিপিডি। 

জরিপে অংশ নেয়া দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬৪.৬ শতাংশ কর্মকর্তা দুর্নীতিকে ব্যবসার বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। কোন কোন জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে, সেটিও জরিপে উঠে এসেছে। ৬৪ শতাংশ কর্মকর্তা কর প্রদানে, ৫৪ শতাংশ ব্যবসায়িক লাইসেন্স নিতে, ৪৯ শতাংশ গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ নিতে এবং ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা আমদানি-রপ্তানিতে দুর্নীতির কথা বলেছেন। এ ছাড়া ৪৪.৬ শতাংশ দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যবসার জন্য দুর্বল অবকাঠামো, ৪৩.১ শতাংশ ব্যাংক ঋণের অপর্যাপ্ততা ও অদক্ষ প্রশাসন, ৩৮.৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা, ৩৫.৪ শতাংশ নীতি ধারাবাহিকতার অভাব, ২৬.২ শতাংশ জটিল কর ব্যবস্থা ও উচ্চ করহার, ১৬.৯ শতাংশ দুর্বল নীতি-নৈতিকতা ও সরকারে স্থিতিশীলতার অভাব, ১৫.৪ শতাংশ অপরাধ ও উদ্ভাবনে অপর্যাপ্ত সক্ষমতা এবং ১০.৮ শতাংশ কর্মকর্তা শ্রম সংক্রান্ত নিয়মনীতির সীমাবদ্ধতাকে সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ফাহমিদা খাতুন বলেন, দুর্নীতির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সেবার মূল্যও বাড়ছে। এই বাড়তি মূল্যের ঘানি সাধারণ মানুষকেই টানতে হয়। নানা স্তরে দুর্নীতি ব্যবসার পরিবেশ ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২-এ ব্যবসার পরিবেশ দুর্বল ছিল। কর কাঠামোতে এখনো ভারসাম্য আনা যায়নি। সড়ক, রেল, নৌপথে অনেক অবকাঠামো মানসম্মত নয়।
ব্যবসায়ীরা মনে করেন, বিদেশি সহযোগীদের কাছ থেকে গ্রিন সিটি নির্মাণে আলাদা ঋণ আসা উচিত। এতে পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে কমবে। আইটি সেবার পরিধি বাড়লেও ডিজিটাল বৈষম্য বাড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে ব্যবসায় মাথাচাড়া দিয়েছে মূল্যস্ফীতি, বিদেশি মুদ্রা সংকট ও অস্থিতিশীল নীতির মতো নতুন চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন ও সুদ হার সীমা উন্মুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

সিপিডি’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে চলার অংশ হিসেবে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন, ঋণে সুদ হারের সীমা তুলে নেয়া, বকেয়া ঋণে স্বচ্ছতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এবং ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) এর কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দুর্নীতির পাশাপাশি নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ব্যবসাকে আরও সমস্যায় ফেলছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে বৈদেশিক মুদ্রার উত্থান-পতন, আমলাতন্ত্র ও মূল্যস্ফীতি। আর বড় ব্যবসায়ীদের জন্য এসবের পাশাপাশি অবকাঠামোর অপ্রতুলতা সমস্যার সৃষ্টি করছে। মোয়াজ্জেম আরও বলেন, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপেশাদার আচরণ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

জরিপ বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের অগ্রগতি দেখা যায়নি। হয় এটি স্থবির ছিল, নতুবা আগের তুলনায় খারাপ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সমস্যাযুক্ত কারণ হিসেবে ‘দুর্নীতি’ এখনো রয়ে গেছে। তবে অন্যান্য কাঠামোগত এবং নতুন নতুন সমস্যার ফলে দুর্নীতির তীব্রতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে জরিপে। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে বিভিন্ন নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনা নেয়া। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে একটি বড় সংস্কার নিশ্চিত করা। আরও স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দক্ষতার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা। নাগরিক এবং ব্যবসায়িক সেবা নিশ্চিত করা। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থিক খাতে সংস্কার, নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ করার অঙ্গীকার করা।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status