প্রথম পাতা
ছোট বাজেট, বাস্তবায়ন কঠিন হবে না
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৪ জুন ২০২৫, বুধবার
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এবারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ছোট। তাই বাস্তবায়ন কঠিন হবে না। একই সঙ্গে সার্বিকভাবে জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেট কখনোই পুরোপুরি ব্যবসাবান্ধব করা সম্ভব না। একদিকে কর কমাতে গেলে আরেক দিকে বাড়াতে হবে। তবে প্রস্তাবিত বাজেট জনবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব। এবার প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মানুষের জীবনযাত্রা স্বচ্ছ, সহজ করার ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে। আর ছোট বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে না। অনেকে বলছে, আমরা আগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি। হুট করেই যে আমরা একটা বিপ্লবী বাজেট দিয়ে দেবো, সেটা তো সম্ভব না। বাজেটে একেবারে যে ইনোভেশন নেই, তা কিন্তু নয়। ২রা জুন বাজেট দিয়েছি, এটা ওপেন থাকবে। কিছু সাজেশন আসবে। পরবর্তীতে ফাইনাল বাজেটটা আসবে। তিনি বলেন, এতদিন আমরা প্রবৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি করেছি। তবে সেই প্রবৃদ্ধি সব পর্যায়ের মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। এর থেকে বেরিয়ে এসে জীবনযাত্রা যেন ভালো পর্যায়ে নেয়া যায়। বাজেটকে কথার ফুলঝুরি বাদ দিয়ে বাস্তবভিত্তিক করার চেষ্টা করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক, পুঁজিবাজার, জ্বালানি খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই সরকার কঠিন একটা সময়ে দায়িত্ব নিয়েছে। অনেকে বলেন, দেশ আইসিইউতে ছিল। বিশেষ করে আর্থিক খাত একেবারে খাদের কিনারায় পৌঁছে ছিল। সবার চেষ্টায় আর্থিক খাতকে একটা পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হয়েছে। মানুষকে আরও কীভাবে স্বস্তি দেয়া যায় সে চেষ্টা করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় বাজেটের আকার প্রথমবারের মতো কমানো হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অনেকে এবারের বাজেটকে গতানুগতিক, আগের ধারাবাহিকতা বলছেন। তবে সেটা ঠিক না। এবারের বাজেটে ৩ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা রয়েছে। কীভাবে সবার জীবনযাপন আরও স্বচ্ছ, মান উন্নয়ন করা যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে।
কালোটাকা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অনেকের একটা প্রশ্ন যে-কালোটাকা সাদা করতে দেয়া হলো কেন? কালোটাকা কিন্তু ঠিক কালোটাকা না। আমরা যেটা বলেছি যে-অপ্রদর্শিত টাকা, কোনো কারণে যদি আপনার কাছে থাকে, শুধু ফ্ল্যাটের ব্যাপারে একটা বিধান দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বলছি না যে, খুব ভালো জিনিস করে ফেলছি কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে। পাচার হওয়া কালোটাকা ফিরিয়ে আনতে পারলে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে হতো না বলে মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কালোটাকা ফিরিয়ে আনা খুব সহজ কিন্তু না। কারণ, যারা পাচার করে, তারা অত্যন্ত বুদ্ধিমান লোক। লেয়ারিং করে টাকা পাঠায়। এগুলো শনাক্ত করা হচ্ছে। ১২টা উল্লেখযোগ্য কেস নেয়া হয়েছে, সময় লাগবে; তবু কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। পাচার করা টাকা ফেরত পেলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে যেতে হতো না।
তিনি আরও বলেন, সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আমরা চাই একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যে, এত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। বাজেটের নির্যাস হলো সবার জীবনযাপনকে স্বচ্ছ করা, সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো ও জীবনমান উন্নত করা।
‘আমাদের সামনের পথ কঠিন’- এমন পূর্বাভাস ব্যক্ত করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি এনবিআরকে রিঅর্গানাইজ করতে। এ ছাড়া বাইরে থেকে ঋণ আনার প্রক্রিয়াটাও মোটামুটি নেগোশিয়েট করে ফেলেছি।
এর আগে প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা একটা বাজেট দিয়েছি। আর এমন একটা সময় বাজেট পেশ করেছি, যখন দেশের অর্থনীতিকে আইসিইউতে রাখার মতো অবস্থা। সংসদ না থাকায় আমরা জাতির সামনে বাজেট পেশ করেছি। আমরা দেশের ক্ষমতা নিইনি, দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা জাতির কাছে দায়বদ্ধ।
বাজেট বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। সংস্কারের চেষ্টা করছি। আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতা নেইনি, দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্বটা একটা কঠিন সময়ে নিয়েছি। দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে। যে সংস্কারগুলো আমরা হাতে নিয়েছি সেটা চলমান। আমরা যতটুকু পারি করবো। আমরা যে পদচিহ্ন রেখে যাবো (ফুটপ্রিন্ট) আশা করছি; পরে যারা আসবে তারা সেটা বাস্তবায়ন করবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ ঋণের দায় মেটাতেই বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার ঋণের ‘দুষ্ট চক্র’ থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি সোয়া ৯ শতাংশের দিকে নেমে এসেছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ৭ শতাংশের নিচে নামবে মূল্যস্ফীতি। গভর্নর বলেন, বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হারে স্বস্তি আসায় মূল্যস্ফীতি কমবে। মূল্যস্ফীতি কমলে সুদহারও কমানো হবে।
অর্থ সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপ?স্থিত ছিলেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সড়ক সেতু ও রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাণিজ্য, বিমান, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান প্রমুখ।
এবার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা। এটি দেশের ৫৪তম, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অর্থ উপদেষ্টার প্রথম বাজেট।। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা।