প্রথম পাতা
বিস’র সেমিনারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
অবিশ্বাস্য দ্রুততায় বদলাচ্ছে ভূ-রাজনীতি, স্বার্থের প্রশ্নে আপস করবে না বাংলাদেশ
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৫ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবারঅবিশ্বাস্য দ্রুততায় বদলাচ্ছে ভূ-রাজনীতি। এর নানামুখী কারণ রয়েছে। সেই পরিবর্তনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বাংলাদেশ এবং ঢাকার কাছের ও দূর প্রতিবেশী রাষ্ট্র তথা এশিয়ার দেশগুলোতে। এ অঞ্চলকে ঘিরে নতুন নতুন বলয় এবং জোট তৈরি হচ্ছে। অনেকেই বাংলাদেশকে সক্রিয়ভাবে কাছে পাওয়ার চেষ্টা করছে। দ্রুত পরিবর্তিত ওই পরিস্থিতিতে কীভাবে বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে এগিয়ে যেতে পারে তা-ই বিবেচ্য হওয়া উচিত। রাজধানীতে মঙ্গলবার এক সেমিনারে এমন অভিমত দেন বক্তারা। প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপিও তার বক্তৃতায় দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনীতির প্রসঙ্গ টানেন। প্রতিমন্ত্রী অবশ্য দু’টি বিষয় খোলাসা করেন। বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার সজাগ রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্যটি ছিল এমন ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক পরিস্থিতি প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই পরিবর্তনশীল সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হলে সতর্ক থাকা জরুরি। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশসহ নির্দিষ্ট দেশ এবং অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক আদর্শের সঙ্গে বাংলাদেশ কখনো আপস করবে না।’ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণের ধারাবাহিকতা রক্ষার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সমান আচরণ প্রত্যাশা করেন। ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশীর সঙ্গে বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক জোরদার’ শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস)। ইস্কাটনস্থ বিস মিলনায়তনে ওই আয়োজনে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবীর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির দীর্ঘ বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি আরও বলেন, সংযুক্তিকে ট্রানজিটের নামে সস্তা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়েছে। ১৫ বছর আগে ট্রানজিট ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশে সস্তা রাজনীতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে ট্রানজিট বাস্তবায়ন করেছেন, যার সুফল এখন সবাই ভোগ করছেন।
প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই নিকট প্রতিবেশীর এই সহযোগিতা শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝেই সীমিত থাকেনি। তা এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে এমন যেকোনো পক্ষকে দমনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে এই অঞ্চলে। গত ১৪ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুপ্রতিবেশী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। বিশ্বের সব দেশই এখন সুপ্রতিবেশী চায়। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভারতের সঙ্গে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক (জেআরসি) হতে পারে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, হয়তো তা বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই হতে পারে। এ ব্যাপারে ভারতের দিক থেকে আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে। পানি সংকট সমাধানে ভারত ছাড়াও চীন ও ভুটানের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সেমিনারের সভাপতি রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে দক্ষিণ এশিয়া হচ্ছে একমাত্র অঞ্চল যেখানে আঞ্চলিক কোনো সংগঠন নেই।
২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও বিমসটেক যথেষ্ট সক্রিয় নয়। নতুন এবং পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমাদের নতুন একটি আঞ্চলিক সংগঠনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে পারি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারপারসন লাইলুফার ইয়াসমিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক এটিএম রকিবুল হক, বিস’র গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবীর ও জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো এম আশিকুর রহমান বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিস’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন। অনুষ্ঠানে উত্থাপিত প্রবন্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) রকিবুল হক বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন অগ্রগতি ভাগাভাগি করে আমরা একযোগে কাজ করতে আগ্রহী। এ লক্ষ্যেই আমরা এগিয়ে চলেছি। সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, দেশের অভ্যন্তরে সমন্বয় ভালো হলে কূটনীতিতে ভালো ফল আসবে। তাই যেকোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপের ক্ষেত্রে সমন্বয়ে জোর দিতে হবে। পরিবর্তিত বৈশ্বিক ব্যবস্থায় বিশ্বের দেশগুলোকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাদের বৈদেশিক নীতি প্রণয়নে কঠিন সময় পার করছে। সুতরাং বাংলাদেশকে সতর্কতার সঙ্গে এ সময় অতিক্রম করতে হবে।