বিশ্বজমিন
১৩ দেশের কোম্পানির সহায়তায় অস্ত্র তৈরি করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী
মানবজমিন ডেস্ক
(১ বছর আগে) ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ৪:৫৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১০:২২ পূর্বাহ্ন
নিজের বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য নানা রকম বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরি করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এসব অস্ত্র তৈরিতে যেসব কাঁচামাল প্রয়োজন তা সরবরাহ দিয়েছে বা দিচ্ছে কমপক্ষে ১৩টি দেশের বিভিন্ন কোম্পানি। আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের এক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন জাতিসংঘের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তারাও। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি ও টিআরটি ওয়ার্ল্ড। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমারা মিয়ানমারকে নিঃসঙ্গ করে দিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আগেই। তা সত্ত্বেও মিয়ানমারকে যেসব দেশের কোম্পানিগুলো সামরিক অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা দিয়ে আসছে তার মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ভারত, জাপান। জাতিসংঘের স্পেশাল এডভাইজরি কাউন্সিল অন মিয়ানমার এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সোমবার। এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং মিয়ানমারকে একঘরে করে ফেলার যে উদ্যোগ তাতে সামরিক জান্তাকে অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তারা যেসব অস্ত্র তৈরি করেছে তার মধ্যে আছে স্নাইপার রাইফেল, বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার, গ্রেনেড, বোমা এবং স্থলমাইন।
মিয়ানমারকে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম যারা দিয়েছে তাদের মধ্যে অস্ট্রিয়া আছে বলে মনে করা হয়।
২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির ক্ষমতা কেড়ে নেয় সামরিক জান্তা। এর ফলে গণআন্দোলন শুরু করেন বিরোধীরা। তখন থেকেই মিয়ানমার অস্ত্র তৈরির গতি বৃদ্ধি করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর বিরোধীদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোর জন্য দেশে তৈরি এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতিসংঘের সদস্য এমন কিছু রাষ্ট্রও দেশটির সেনাবাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, প্রকৃত সত্য হলো মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশেই বিভিন্ন রকম অস্ত্র তৈরি করতে পারে। তা বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। উল্লেখিত কোম্পানিগুলো মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে কাঁচামাল সরবরাহ দেয়। প্রশিক্ষণ দেয় এবং মেশিন সরবরাহ দেয়। ফল হিসেবে যেসব অস্ত্র তৈরি হয় তা সীমান্ত রক্ষায় ব্যবহার না হয়ে, জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
এই রিপোর্টের অন্যতম লেখক এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক স্পেশাল র্যাপোর্টিউর ইয়াংহি লি বলেন, কখনোই বিদেশি কোনো দেশ মিয়ানমারে আক্রমণ চালায় নি। তারা কোনো অস্ত্রও রপ্তানি করে না। ১৯৫০ সাল থেকেই দেশটির সেনাবাহিনী তার জনগণের বিরুদ্ধে নিজেদের অস্ত্র ব্যবহার করছে।
সরকারি হিসাবে সর্বশেষ অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনী হত্যা করেছে কমপক্ষে ২৬০০ মানুষকে। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর ১০ গুণ হবে বলে মনে করা হয়। বিবিসির বার্মিজ সার্ভিসের প্রধান সোয়ে উইন তান বলেন, যখন বিক্ষোভ শুরু হলো তখন মনে হয়েছিল বিরোধীদের আন্দোলনকে টপকে যেতে পারবে সেনাবাহিনী। বিরোধীদের যে ঘাটতি আছে তা হলো আকাশশক্তি। মিয়ানমারের জান্তা এটা ভালভাবে ব্যবহার করছে।
ইয়াংহি লি’র পাশাপাশি এই রিপোর্ট লিখেছেন ক্রিম সিদোতি এবং মারজুকি দারুসমান। তারা দু’জনেই জাতিসংঘের নিরপেক্ষ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের অন্তর্ভুক্ত। তারা এ রিপোর্ট লিখতে ফাঁস হওয়া সামরিক ডকুমেন্ট, সাবেক সেনা সদস্যদের সাক্ষাৎকার এবং কারখানার স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করেছেন। চবিতে দেখা গেছে ইন দিন অঞ্চলে গণহত্যা চালানোর সময় মিয়ানমারে তৈরি রাইফেল ব্যবহার করছে সেনাসদস্যরা। ওই অঞ্চলে তারা নিরস্ত্র জাতিগত রোহিঙ্গাদের ১০ জন সদস্যকে হত্যা করে। স্রিক সিদোতি বলেন, সম্প্রতি আমরা গণহত্যা দেখেছি সাগাইং অঞ্চলে। সেখানে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। স্কুলে শেল মারা হয়েছে। এতে বেশ কিছু শিশু ও অনেকে নিহত হয়েছে।