ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টায় সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২১ মে ২০২২, শনিবার

বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের দাম বাড়ায় সার্বিক অর্থনীতিতে বহুমুখী প্রভাব ফেলেছে। ডলারের দাম বাড়লে  খাদ্যশস্যের দাম বাড়ে। এর প্রভাব পড়ে সবার ওপর। মুদ্রাটির দাম বাড়লে নেতিবাচক দিকই বেশি। বৃদ্ধি পায় আমদানি খরচ। আমদানি পণ্যের দাম বাড়ে। বাড়ে শিল্প স্থাপনের খরচ। প্রভাব পড়ে বিনিয়োগে। টাকার মান কমে গিয়ে হ্রাস করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা।

বিজ্ঞাপন
মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। ইতিমধ্যেই চাল, ডাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনিসহ প্রায় বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। ফলে যন্ত্রণায় ভুগছে নিম্ন স্বল্প ও মধ্যআয়ের মানুষ। তাদের কষ্ট বেড়েছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। এখন তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে। 
সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে সামাল দিতে নানা রকম চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে ব্যয়ে লাগাম টানার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া দেশের ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ডলারের সংকট সামলাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

 বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত নভেম্বর থেকে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পরপরই জীবনযাত্রার খরচ বাড়তে শুরু করে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে আরও উসকে দিয়েছে। ফলে গত কয়েক মাসে চাল, ডাল, গম, তেল, ময়দা, চিনি, লবণসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি খাদ্য-বহির্ভূত পণ্য যেমন; পোশাক, খাতা-কলম, বাসাভাড়া, যাতায়াত ভাড়া বেড়েছে। 

কয়েক মাস ধরেই নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত একমাসে নিত্যপণ্যের এই মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় আছে আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, ডাল, ডিম, আলু, পিয়াজ, রসুন, আদা, শুকনা মরিচ, চিনি ও লবণ। তবে বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, টিসিবির মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় থাকা পণ্যের বাইরে চাল, গম, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, গুঁড়া দুধ, তরল দুধ, বেকারিপণ্য, নুডলস-পাস্তা ইত্যাদির দাম বেড়েছে।

টিসিবির নিত্যপণ্যের তালিকা অনুযায়ী, গত একমাসে বিভিন্ন পণ্যে ১ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে। ১০০ শতাংশ দাম বেড়েছে দেশি নতুন-পুরোনো রসুনের। পিয়াজের দামেও বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে। টিসিবির হিসাবেই গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। যেমন আমদানি করা পিয়াজের দাম প্রতি কেজি ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা হয়। দাম বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। আটা ও ময়দার দাম কেজিতে বেড়েছে যথাক্রমে ৩০ ও ১৯ শতাংশ পর্যন্ত।

মানভেদে ডালের দাম খুচরা বাজারে কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ডিমের দাম হালিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। অন্যদিকে গত এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। আদা, লবণ ও চিনির দামও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
টিসিবির হিসাবের বাইরে চালের দামও বেড়েছে। এই ভরা মৌসুমেও গত সপ্তাহ থেকে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা। এই চাল গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষই কেনেন। আর সরু চালের দাম কেজিতে ১ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। কাওরান বাজারের চাল বিক্রেতা জসিম বলেন, ৫০ কেজির এক বস্তা মিনিকেট ২ দিন আগে ছিল ২ হাজার ৯৫০ টাকা, এখন তার দাম ৩ হাজার ১০০ টাকা। 

গত এপ্রিলে চাল, আটা-ময়দা, ভোজ্য তেল, মাছ-মাংস, ডিমসহ প্রায় সব ধরনের নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লেও বিবিএস বলছে, ওই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৬.২৪ শতাংশ হয়েছে। মার্চ মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.৩৪ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি এখন খাদ্যপণ্যের চেয়ে বেশি। এপ্রিল মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি ৬.৩৯ শতাংশ হয়েছে।
এদিকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে হঠাৎ করে সরকারের ঋণ বেড়েছে। শুধু গত এপ্রিল মাসে ব্যাংক খাত থেকে নিট ২৪ হাজার ১১৯ কোটি নিয়েছে সরকার। এতে করে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা। বিভিন্ন খাতে বরাদ্দের তুলনায় সরকারের ভর্তুকি বেড়েছে।  বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎসের পাশাপাশি বিদেশ থেকে ঋণ নেয় সরকার। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে বিদেশি ঋণ ও অনুদান এসেছে ৬৮০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪৩৮ কোটি ডলার। এর মানে, বিদেশি ঋণ বেড়েছে ২৪২ কোটি ডলার বা ৫৫.১৬ শতাংশ। 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআই’র গবেষক ডক্টর এম এ রাজ্জাক বলেন, ডলার সংকট প্রশমিত করার জন্য, সরকারের উচিত অপ্রয়োজনীয় আমদানির উপর লাগাম টানা এবং যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে আরও বেশি রেমিট্যান্স প্রবাহ নিশ্চিত করা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়িক খরচ কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া। সম্প্রতি চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়গুলোকে উন্নয়ন প্রকল্পে অগ্রাধিকার দিতে এবং সরকারি তহবিল বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

এদিকে করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি করেছে তা মোকাবিলায় অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে একসঙ্গে বসে করণীয় ঠিক করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সচিবালয়ে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভা বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, একসঙ্গে বসে পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী করা যায় তা ঠিক করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী দু-তিনদিনের মধ্যে বসে বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। বিশেষ করে কীভাবে আমরা এই যে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে বা সাপ্লাই কমে যাচ্ছে, এই জিনিসগুলো কীভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবো। কোন জায়গায় রেস্ট্রিকশন দিলে ভালো হবে বা ওপেন করলে ভালো হবে। এগুলো দু-তিন দিনের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে তুলে ধরতে হবে। প্লাস ডলারের যে ক্রাইসিস হচ্ছে এটা কীভাবে সমাধান করা যায় এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বসে দু-তিনদিনের মধ্যে প্রেসের সামনে বসে জানানো হবে। 

এদিকে ঘোষিত বিনিময় হারের চেয়ে বেশি দরে ডলার কেনাবেচা নিয়ে শোরগোলের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক পরিদর্শন শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের চারটি দল। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, এই মুহূর্তে দরকার মূল্যস্ফীতি ঠোকানো। সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় বেড়েছে। সাপ্লাই চেইন নড়বড়ে হওয়ায় পণ্যের দাম বাড়ছে। পণ্যের দাম বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার। এদেরকে সুরক্ষা দিতে হলে আগামী বাজেটে সামাজিক নিরপত্তা বেষ্টনী জোরদার করতে হবে বলে জানান তিনি।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status