ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

সন্ধ্যা হলেই দৌড়ে আসে রেদওয়ান, ফরিদরা

ইমরান আলী, কক্সবাজার থেকে ফিরে
৫ জানুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

কক্সবাজারের সুগন্ধা বীচ। সন্ধ্যায় বালুর ওপর পেতে রাখা চেয়ারগুলো পর্যটকে ঠাঁসা। স্কুল ড্রেস পরা এক ছোট্ট ছেলে এসে বললো- স্যার মাথা বানিয়ে দেই! না না লাগবে না।  দেই স্যার। যা মনে চায় দিয়েন।  না না অন্য কোথাও যাও। বুধবারের ঘটনা। মন খারাপ করে ছেলেটি আরেক চেয়ারে গেল। এভাবে কয়েক জায়গা থেকে কাজ না পেয়ে আমাদের কাছে এলো। কী নাম তোমার? রেদওয়ান। কী করো? স্যার মাথা বানিয়ে দেই। প্রতিঘণ্টা ১০০ টাকা। দেবো স্যার? না, দিতে হবে না। পাশে বসো। ছেলেটা বসতে সাহস পেলো না। দাঁড়িয়েই রইলো। রেদওয়ানের বাবা রিকশাচালক। স্থানীয় এক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে রিকশা কিনেছে। আগে দৈনিক মজুরিতে কাজ করতো শ্রমিক হিসেবে। মা গৃহিণী। বললাম, তোমার আম্মা কাজ করে না! প্রশ্ন শুনে রাগ হলো রেদওয়ানের বুঝি। হাফ প্যান্ট আর হাফ হাতা শার্ট পরিহিত রেদওয়ান শীতে কাঁপতে কাঁপতে বললো- আমি  বেঁচে থাকতে মাকে কাজ করতে দেবো?  হিমছড়িতে জন্ম রেদওয়ানের। সেখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। স্কুল শেষে অটোতে করে চলে আসে কক্সবাজারের কলাতলি বীচে। কখনো লাবনী বা সুগন্ধা বীচে। পুরো বিকাল ঘুরে। 

তার কথায়- এশার আজান দিলে  বাড়ি চলে যাই। পড়তে বসা লাগে তো।  মা বকাবকি করে। মা চায় না আমি কাজ করি। কিন্তু আমি যা ইনকাম করি তা দিয়ে আব্বার সুবিধা হয়। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে পারে। রেদওয়ান মাঝে মাঝে পানি বিক্রি করে। কিন্তু তাতে খুব একটা আয় হয় না। তারা দুই ভাই, এক বোন। বোনটাও পড়াশোনা করে। রেদওয়ানের ইচ্ছে- বড় হয়ে পাইলট হবে। সাগর তার ভালো লাগে।  বললো- আমি ইনকাম করতে পারলে বাসায় তরিতরকারী কিনতে পারে মা। আব্বা অসুস্থ থাকলে ঘরে খাবার কেনার টাকাও থাকে না। মাথা ম্যাসাজ করা রেদওয়ান সেভাবে শিখে ওঠেনি। তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে তার এই বয়সে।  বললো- একদিন এক স্যারের মাথা টানা দেড়ঘণ্টা বানিয়ে দিয়েছি। বললো, তুমি বসো এখানে। টাকা খুচরা করে আনি। এই বলে আর আসেননি। সারা সন্ধ্যা খুঁজেছি। পাইনি সেই স্যাররে। বাসায় ফেরার টাকা ছিল না আমার কাছে। অনেক কানছিলাম সেদিন।

রেদওয়ানের মতো আরও অনেকেই মাথা ম্যাসাজ করার কাজ করে। তেমনই একজন ফরিদ। লাজুক হেসে বললো- স্যার আমার একটা ছবি তুলে দেবেন? ছবি তোলা শেষে বললো-  টাকা লাগবে না। মাথাটা ম্যাসাজ করে দেই! কক্সবাজারের নুনিয়াছড়াতে জন্ম তার। বাবা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় তাকে উপার্জনে নামতে হয়েছে। বললো- আমরা দুই ভাই। বড় ভাই মামার সঙ্গে বীচে চেয়ার ওঠানো, নামানোর কাজ করে। আমি যা পাই তা মাকে দেই। ফরিদও ক্লাস থ্রিতে পড়ে। বেশ ইংরেজিও বলতে পারে। বললো- ঈদে ভালো আয় হয়। তবে মাঝে মাঝে অনেকেই চড়থাপ্পড় দেয়। বলে আমরা নাকি পর্যটকের টাকা পয়সা চুরি করি।  আবার কাজ শেষে বাসায় যাওয়ার সময় কেউ কেউ আমাদের টাকা কেড়েও নেয়। রেদওয়ান, ফরিদের বন্ধুরাও একসঙ্গে বীচে আসে। কেউ পানি টানে। কেউ পর্যটকদের ফরমায়েস শুনে। কেউ বা  ঝিনুকের মালা বিক্রি করে। রাত হলে ফিরে যায় বাড়িতে।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status