দেশ বিদেশ
সন্ধ্যা হলেই দৌড়ে আসে রেদওয়ান, ফরিদরা
ইমরান আলী, কক্সবাজার থেকে ফিরে
৫ জানুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার
কক্সবাজারের সুগন্ধা বীচ। সন্ধ্যায় বালুর ওপর পেতে রাখা চেয়ারগুলো পর্যটকে ঠাঁসা। স্কুল ড্রেস পরা এক ছোট্ট ছেলে এসে বললো- স্যার মাথা বানিয়ে দেই! না না লাগবে না। দেই স্যার। যা মনে চায় দিয়েন। না না অন্য কোথাও যাও। বুধবারের ঘটনা। মন খারাপ করে ছেলেটি আরেক চেয়ারে গেল। এভাবে কয়েক জায়গা থেকে কাজ না পেয়ে আমাদের কাছে এলো। কী নাম তোমার? রেদওয়ান।
তার কথায়- এশার আজান দিলে বাড়ি চলে যাই। পড়তে বসা লাগে তো। মা বকাবকি করে। মা চায় না আমি কাজ করি। কিন্তু আমি যা ইনকাম করি তা দিয়ে আব্বার সুবিধা হয়। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে পারে। রেদওয়ান মাঝে মাঝে পানি বিক্রি করে। কিন্তু তাতে খুব একটা আয় হয় না। তারা দুই ভাই, এক বোন। বোনটাও পড়াশোনা করে। রেদওয়ানের ইচ্ছে- বড় হয়ে পাইলট হবে। সাগর তার ভালো লাগে। বললো- আমি ইনকাম করতে পারলে বাসায় তরিতরকারী কিনতে পারে মা। আব্বা অসুস্থ থাকলে ঘরে খাবার কেনার টাকাও থাকে না। মাথা ম্যাসাজ করা রেদওয়ান সেভাবে শিখে ওঠেনি। তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে তার এই বয়সে। বললো- একদিন এক স্যারের মাথা টানা দেড়ঘণ্টা বানিয়ে দিয়েছি। বললো, তুমি বসো এখানে। টাকা খুচরা করে আনি। এই বলে আর আসেননি। সারা সন্ধ্যা খুঁজেছি। পাইনি সেই স্যাররে। বাসায় ফেরার টাকা ছিল না আমার কাছে। অনেক কানছিলাম সেদিন।
রেদওয়ানের মতো আরও অনেকেই মাথা ম্যাসাজ করার কাজ করে। তেমনই একজন ফরিদ। লাজুক হেসে বললো- স্যার আমার একটা ছবি তুলে দেবেন? ছবি তোলা শেষে বললো- টাকা লাগবে না। মাথাটা ম্যাসাজ করে দেই! কক্সবাজারের নুনিয়াছড়াতে জন্ম তার। বাবা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় তাকে উপার্জনে নামতে হয়েছে। বললো- আমরা দুই ভাই। বড় ভাই মামার সঙ্গে বীচে চেয়ার ওঠানো, নামানোর কাজ করে। আমি যা পাই তা মাকে দেই। ফরিদও ক্লাস থ্রিতে পড়ে। বেশ ইংরেজিও বলতে পারে। বললো- ঈদে ভালো আয় হয়। তবে মাঝে মাঝে অনেকেই চড়থাপ্পড় দেয়। বলে আমরা নাকি পর্যটকের টাকা পয়সা চুরি করি। আবার কাজ শেষে বাসায় যাওয়ার সময় কেউ কেউ আমাদের টাকা কেড়েও নেয়। রেদওয়ান, ফরিদের বন্ধুরাও একসঙ্গে বীচে আসে। কেউ পানি টানে। কেউ পর্যটকদের ফরমায়েস শুনে। কেউ বা ঝিনুকের মালা বিক্রি করে। রাত হলে ফিরে যায় বাড়িতে।
পাঠকের মতামত
ঢাউশ ঢাউশ উন্নয়ন প্রজেক্ট থেকে রেদওয়ান ফরিদরা বা তাদের পরিবার কিভাবে উপকৃত হয়ে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করবে এ মর্মে কোন পরামর্শ চাওয়া হলে বলা হবে দেশতো উন্নত হচ্ছে। তাতে ব্যাংক বা শেয়ার বাজার লুন্ঠনকারী ঢাউশ সাইজের বিত্তবানরাই সরাসরি উপকারভোগি হচ্ছেন। সে বিবেচনায় কেবল মাত্র এ সব অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠির স্কুলগামি শিশুদের জন্য অন্তত আশিভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করে মাসিক আর্থিক সুবিধার মেঘা প্রজেক্ট চালু করার সক্ষতা দেশের হয়েছে । এখন দরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ।