ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

১ ডলার = ৮৭.৫০ টাকা

ফের কমলো টাকার মান

স্টাফ রিপোর্টার
১৭ মে ২০২২, মঙ্গলবার

দেশে রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় চাপ পড়েছে ডলারের ওপর। সেই অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে ডলারের বাজার। ক্রমেই বেড়ে চলেছে দাম। বিপরীতে কমছে টাকার মান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার বিবেচনায় ডলারের দর ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে। তবে ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে পাঁচ থেকে ৭ টাকা বেশি দরে। ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে আরও বেশি দামে। বিক্রি হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৭ টাকায়। একদিনের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে গেছে ৮০ পয়সা।

বিজ্ঞাপন
আর গত ২০ দিনের ব্যবধানে কয়েক দফায় ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হয়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা। সোমবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হয়েছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। যেখানে একদিন আগেও এক ডলারে লেগেছিল ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। আর গত ১০ই মে ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ২৭শে এপ্রিল ছিল ৮৬ টাকা ২০ পয়সা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে ব্যাপক হারে আমদানির চাপ বেড়েছে। ফলে আমদানির দায় পরিশোধে বাড়তি ডলার লাগছে। কিন্তু সেই তুলনায় রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়েনি। ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা ও খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের ওপর চাপ বাড়ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার কারণে টাকার বিপরীতে বাড়ছে ডলারের দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করছে। এতে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তারপরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না ডলারের বাজার। 
দেশে আমাদের রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ার কারণে ডলারের উপর চাপ পড়েছে বলে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, রপ্তানি বাড়ছে, ঈদের সময় রেমিট্যান্স ২০০ মিলিয়ন এসেছে। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে। এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। যখনই প্রয়োজন হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে। তবে আশার কথা আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের আমদানিতে গড় মার্জিনসহ আমরা বিভিন্ন বিধিনিষেধ দিয়েছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে।
২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। ২০২১ সালের ৩রা আগস্ট থেকে দুই এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২শে আগস্ট প্রথমবারের মতো ৮৫ টাকা ছাড়ায় ডলারের দাম। চলতি বছরের ৯ই জানুয়ারি এটি বেড়ে ৮৬ টাকা হয়। গত ২৩শে মার্চ আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২৭শে এ?প্রিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা, ১০ই মে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা এবং সর্বশেষ ১৬ই মে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে ডলারের মূল্য। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। অর্থাৎ গত ৯ মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারে দর বেড়েছে দুই টাকা ৭০ পয়সা।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১২ই মে পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫০২ কোটি (৫.০২ বিলিয়ন) ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত অর্থবছরে ডলার কেনায় রেকর্ড গড়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সবমিলিয়ে প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫.১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চাপে রিজার্ভ: আমদানির চাপে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের (রিজার্ভ) ওপর চাপ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৪শে আগস্ট এই রিজার্ভ আগের সব রেকর্ড ভেঙে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। দেশের ওই রিজার্ভ গত ১১ই মে ৪১.৯৩ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ১৯৩ কোটিতে নেমে এসেছে।
রপ্তা?নির চেয়ে আমদানি বেড়েছে: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩২.৯২ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৪৩.৮৬ শতাংশ। আলোচিত ৯ মাসে রপ্তানি থেকে দেশ আয় করেছে তিন হাজার ৬৬২ কোটি ডলার। পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় থেকে রপ্তানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার।
কমেছে রেমিট্যান্স: জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ৫৭৮ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। যা ছিল আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭.৭৪ শতাংশ কম।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status