শরীর ও মন
মাথা ন্যাড়া করে দিলে কি নতুন চুল গজায়?
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল হাই
৪ ডিসেম্বর ২০২২, রবিবার
অনেকেই মনে করেন যত বেশি ন্যাড়া হওয়া যায়, চুল তত বেশি ঘন হয়ে ওঠে। এটি আসলে সমাজে প্রচলিত বিশ্বাস বা সংস্কার। এর বৈজ্ঞানিক কোনো প্রমাণ নেই। প্রকৃতপক্ষে একটা মানব শিশু জন্মের সময় এক লক্ষ থেকে এক লক্ষ বিশ হাজার চুলের ফলিকল বা চুলবীজ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের সময় সব চুল গজানো অবস্থায় না থাকলেও বছর কয়েকের মধ্যে সবগুলো চুলবীজ থেকে চুল গজায়। জন্ম-পরবর্তী সময়ে নতুন কোনো ফলিকল বা চুলবীজ সৃষ্টি হয় না। প্রতিটি চুলের আবার একটা আয়ু কাল থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে এটা ৩ থেকে ৫ বছর। চুল ও অন্য প্রাণীর মতো শৈশব, কৈশোর ও বৃদ্ধ বয়স অতিক্রম করে। তাই একটি চুল তার সম্পূর্ণ জীবনকালে একই রকম স্বাস্থ্যবান থাকে না।
ন্যাড়া মাথা নিয়ে কী বলছে বিজ্ঞান
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে নিম্নের মতামত ব্যক্ত করেছেন: ১. চুল ফেলে দেয়ার সময় অনেকেই ভাবেন, ত্বকের তলায় না গজানো কিছু গোড়া বা ফলিকল রয়ে গেছে। ভালো করে মাথা কামিয়ে ফেললে সেই গোড়া থেকে চুল বের হবে। কিন্তু এ ধারণা ভুল। কারণ, নবজাতক বা দু’ এক বছর বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ত্বকের নিচে না গজানো কিছু ফলিকল হয়তো থাকতে পারে কিন্তু এর অধিক বয়সের বাচ্চা বা যুবকদের এমন হওয়ার কোনো কারণ নেই। চুল ন্যাড়া করার অর্থ হচ্ছে মাথার ওপরে চুলের যতটুকু অংশ আছে শুধু সেটুকুই ফেলে দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে চুলের ফলিকলের উপর কোনো প্রভাব রাখা সম্ভব হয় না। চুলের স্বাস্থ্যে জিন বা বংশগতির ধারার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই যত বারই ন্যাড়া করুন না কেন আপনি পরিবারের অন্য সবার মতোই চুলের ধারা পাবেন। ২. ন্যাড়া হওয়ার পরে যে চুল গজায় তা দেখতে এমনিতেই ঘন বলে মনে হয়। তখন মাথায় হাত দিলে মনে হয় চুলের ঘনত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি মোটেই এরকম নয়।
মাথার নিচে চুলগুলো যখন বড় হতে থাকে তখন দেখতে বেশ কালো লাগে। চুলের আগা এবং গোড়াও মোটা থাকে। দেখে মনে হয় নতুন গজানো অনেক চুল। ৩. চুল বড় হতে থাকলে কিন্তু চুল আবার আগের চেহারা ফিরে পায়। এর কারণ তখন চুলের ঘনত্ব কমে যায়। কারণ মাথার ত্বকের তলায় ফলিকলগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য ও লাবণ্য হারাতে থাকে। পুরনো চুল বৃদ্ধি পেলে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসতে আসতে হালকা হয়ে যায়। আবার রং কিছুটা পাল্টে যায়। ৪. তবে ন্যাড়া হওয়ার একটি সুবিধা আছে। অনেকের চুল পড়ার সমস্যা আছে। তাদের চুল বড় হলে বেশি পড়তে থাকে। ন্যাড়া হলে চুলের দৈর্ঘ্য শূন্য হয়ে যায়। তখন চুল সহজে পড়ে যায় না।
লেখক: (চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ) জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চেম্বার: ১২, স্টেডিয়াম মার্কেট, সিলেট। ফোন-০১৭১২-২৯১৮৮৭