প্রথম পাতা
ক্যামেরুনের এমবোলোর গোলে সুইসদের হাসি
পিন্টু আনোয়ার
২৫ নভেম্বর ২০২২, শুক্রবার
ব্রিল এমবোলোর জন্মভূমি ক্যামেরুন। কিন্তু খেলছেন সুইজারল্যান্ডের জার্সিতে। উন্নত জীবনের আশায় শিশুপুত্র এমবোলোকে কোলে নিয়ে ক্যামেরুন থেকে সুইজারল্যান্ড পাড়ি দিয়েছিলেন তার মা। আর বিশ্বকাপে মাতৃভূমির বিপক্ষে গোল দিয়ে সুইসদের মুখে হাসি ফোটালেন সেই এমবোলো। গতকাল দোহায় ‘জি’ গ্রুপের ম্যাচে ক্যামেরুনকে ১-০ গোলে হারায় সুইজারল্যান্ড। ম্যাচের একমাত্র গোলটি আসে এমবোলোর পা থেকে। আল জানুব স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথমার্ধে ছিল গোলশূন্য সমতা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সুইজারল্যান্ডকে এগিয়ে দেন এমবোলো। ৪৮তম মিনিটে ডিবক্সে কসোভান বংশোদ্ভূত উইংগার জারদান শাকিরির ক্রস থেকে ক্যামেরুনের জালে বল পাঠান তিনি। প্রতিযোগিতামূলক টানা তিন ম্যাচে গোল পেলেন এমবোলো। তবে গতকাল গোল আদায়ের পর জন্মভূমির প্রতি আলাদা সম্মান দেখান ফরাসি ক্লাব এএস মোনাকোর এ স্ট্রাইকার। ক্যামেরুনের বিপক্ষে গোলের পর তিনি উদ্যাপন করেননি।
১৯৬৬ সালের পর থেকে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড অক্ষুণœ রাখলো সুইজারল্যান্ড (৩ জয়, ৩ ড্র)। অন্যদিকে, ক্যামেরুন বিশ্বকাপে দেখলো টানা অষ্টম হার। তাদের চেয়ে বেশি হার আছে কেবল মেক্সিকোর (টানা ৯টি)।
গতকাল যদিও খারাপ খেলেনি আফ্রিকান দলটি। সুইজারল্যান্ডের চেয়ে বেশি শট নেয় তারা। ৮ শটের ৫টি ছিল অনটার্গেটে। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডের ৭ শটের ৩টি ছিল লক্ষ্যে। সুইজারল্যান্ডের একাদশে সেরা রেটিং পাওয়া খেলোয়াড় গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। বক্স থেকে ৫টি সেভ করেছেন তিনি। পাস একুরেসি ছিল ৮৯%।
গতকাল সুইজারল্যান্ডের গোলটিতে ছিল অপর দুই শীর্ষ তারকার অবদান। ক্যামেরুনের অর্ধে বল পেয়ে আর্সেনাল মিডফিল্ডার গ্রানিত জাকা পাস দেন বক্সের ডানদিকে থাকা জেরদান শাকিরিকে। সেখান থেকে লিভারপুলের সাবেক উইংগার শাকিরি ক্রস করেন বক্সের বাঁ দিকে থাকা এমবোলোর উদ্দেশে। সামনে থেকে দক্ষতার সঙ্গে ক্যামেরুনের গোলকিপার আন্দ্রে ওনানাকে পরাস্ত করেন এমবোলো। ডানদিকে ঝাঁপ দিলেন ওনানা আর এমবোলো বল মারলেন বাঁ দিকে।
গোলে নেয়া শট আর লক্ষ্যে রাখতে পারা শট মিলিয়ে সুইজারল্যান্ডের চেয়ে ক্যামেরুন কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিল ম্যাচে। দেশটির সাবেক ফুটবলার রিগোবার্ট সংয়ের কোচিংয়ে অনেক দিন থেকেই ভালো ফুটবল খেলছে ক্যামেরুন। এদিন ক্যামেরুনের ৮ শটের ৫টি ছিল অনটার্গেটে। অন্যদিকে সুইসদের লক্ষ্যে ছিল ৭ শটের ৩টি।
প্রথমার্ধে সুযোগ তৈরি করার দিক থেকে এগিয়ে ছিল ক্যামেরুনই। সবচেয়ে সহজ সুযোগটি নষ্ট করেন রায়ান এমবেউমো। বক্সের বাঁ প্রান্তে বল পেয়েছিলেন ব্রেন্টফোর্ডের ফরোয়ার্ড। সহজেই তিনি বল দিতে পারতেন বক্সের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা বায়ার্ন মিউনিখ তারকা এরিক ম্যাক্সিম চুপো মটিংকে। কিন্তু এমবেউমো নিজেই শট নিলেন গোলে। বল সোজা চলে যায় সুইস গোলকিপার ইয়ান সোমারের হাতে।
দ্বিতীয়ার্ধেও ম্যাচের চিত্রটা তেমন পাল্টায়নি। গোল পাওয়ার পর অবশ্য আক্রমণে ধার বাড়ে সুইসদের। সবচেয়ে ভালো সুযোগটি তারা পায় ৮৭তম মিনিটে। কিন্তু গোলকিপার ওনানাকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন গ্রানিত জাকা। যোগ করা সময়ে একই কাজ করেন বদলি হিসেবে মাঠে নামা হারিস সেফেরোভিচ।
১৯৯৭ সালে ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়োন্দেতে জন্ম ব্রিল এমবোলোর। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে ৫ বছর বয়সী ছেলে এমবোলোকে নিয়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমান তার মা। তবে ফ্রান্সে থিতু হতে পারেননি এমবোলোর মা। পরের বছরই তারা পৌঁছেন সুইজারল্যান্ড। বাসেলে বসতি গাড়েন এমবোলোর মা। সেখানেই এমবোলোর ফুটবলের শুরু। সুইজারল্যান্ডের শীর্ষ ক্লাব বাসেলের জার্সিতে তার অভিষেক। পরে জার্মান ক্লাব শালকা জিরো ফোর, বরুশিয়া মুনশেনগ্লাডবাখ ঘুরে চলতি বছর যোগ দিয়েছেন মোনাকোয়। ২০১২ থেকে টানা ৩ বছর সুইজারল্যান্ডের বয়সভিত্তিক ফুটবলে নৈপুণ্য দেখান এমবোলো। ক্যামেরুন জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ ছিল তার। তবে তিনি বেছে নেন সুইজারল্যান্ডের জার্সি। ২০১৪ সালে সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব পান এমবোলো। ২০১৫তে সুইজারল্যান্ড দলে অভিষেক। খেলেছেন ২০১৮ বিশ্বকাপেও। ২৫ বছর বয়সী এমবোলো সুইস জার্সি গায়ে এরই মধ্যে খেলে নিয়েছেন ৬০ ম্যাচ।