ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

কোলন ক্যান্সার হলে

ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
২৫ নভেম্বর ২০২২, শুক্রবার
mzamin

শুরুতেই কোলন ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে এবং সঠিক ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে   ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সাধারণত বয়স ৫০ পেরোলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তবে বিভিন্ন কারণে  ইদানীং অল্প বয়সে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

কারণসমূহ 

দেখা যায় কতিপয় কারণ ছাড়াও পরিবেশ ও জিনগত কারণে কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা পাঁচ ভাগ বৃদ্ধি পায়। খাদ্যাভ্যাসও  একটি গুরুত্বপূর্ণ  কারণ। অতিরিক্ত গরু বা ছাগলের মাংস বা লাল মাংস খাওয়া, খাদ্যাভ্যাসে আঁশজাতীয় খাবারের ঘাটতি, ধূমপান ও মদ্যপান এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া স্থুলকায় ব্যক্তিদের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে ব্যায়াম  ও রুটিনমাফিক নিয়ম মেনে চলা ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।  বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যান্সার বা কোলন ক্যান্সার পারিবারিক ইতিহাস রোগটির সম্ভাবনা বাড়ায়। বিশেষ করে মা, বাবা, ভাই কিংবা বোনের বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ে।

বিজ্ঞাপন
এ ছাড়া অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 

লক্ষণসমূহ 

সহজেই কোলন ক্যান্সার  নির্ণয় করা যায় না। কেননা, প্রথমদিকে রোগটির তেমন কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না। কোলন বা মলাশয়ের কোনো জায়গায় ক্যান্সার রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে উপসর্গের বিভিন্নতা দেখা যায়। পায়খানার সঙ্গে রক্ত কিংবা পেটে ব্যথা নিয়ে অধিকাংশ রোগী প্রথম চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন (কখনো ডায়রিয়া, কখনো কষা),  রক্তশূন্যতা (দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট) ইত্যাদি রোগটির প্রাথমিক লক্ষণ। অবস্থা গুরুতর হলে অতিরিক্ত ওজনশূন্যতা, পেটে চাকা, পেটে পানি, কাশির সঙ্গে রক্ত ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসেন। দুর্ভাগ্যবশত আমরা রোগীদের রোগটির ৩ গ্রেডে বা  অতিমাত্রায় অগ্রসর অবস্থায় পাই যাদের অধিকাংশই অপ-চিকিৎসার শিকার বা রোগটিকে জটিল করে এসেছেন।  

রোগ নির্ণয় বা শনাক্ত করার পদ্ধতি 

চিকিৎসক লক্ষণ বা উপসর্গ দেখে বা রোগীর কেস স্টাডি দেখে কোলন্সকোপি ও বায়োপসি করে থাকেন। বায়োপসি’র মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়ের পর সিটি স্ক্যান, রক্তে এন্টিজেন (ঈঊঅ)-এর পরিমাণ ইত্যাদি বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সারের ধাপ নির্ণয় করা হয় বা রোগটি কোন গ্রেডে আছে তা জানা হয়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ধাপ নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক ধাপের (ঝঃধমব ও ্‌ ওও) ক্যান্সারগুলোর চিকিৎসা পরবর্তী ফলাফল সন্তোষজনক, পক্ষান্তরে অগ্রসর ধাপের (ঝঃধমব ওওও ্‌ ওঠ) ক্যান্সারগুলোর চিকিৎসা পরবর্তী ফলাফল আশাপ্রদ নয়। ক্যান্সার কোলনের বাইরে ছড়িয়ে গেলে (লসিকাগ্রন্থি, যকৃত, ফুসফুস ইত্যাদি) তাকে অগ্রসর ধাপ বলে বিবেচনা করা হয়। তবে আশার কথা এই যে, অন্যান্য ক্যান্সারের চেয়ে কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা পরবর্তী ফলাফল অনেক ভালো। এমন কি অগ্রসর ধাপের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীও সঠিক চিকিৎসা পেলে বহুদিন সন্তোষজনক ভাবে বেঁচে থাকতে পারেন। 

চিকিৎসা 

কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা  অপারেশন। অপারেশনের আগে বা পরে কেমোথেরাপি দেয়া হয়।  

প্রতিরোধ 

একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তা হলো ক্যান্সার  জটিল রোগ হলেও এর উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে। রোগীদের সচেতনতা এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিনা অপারেশনের কথা বলে অপচিকিৎসা,  হাকিম, কবিরাজ, ঝাড়ফুঁকের ও চটকদার প্রচারের ফাঁদে পড়ে  রোগীদের অবস্থা আরও খারাপ হয়। তবে আশার কথা হলো বর্তমানে বাংলাদেশে  এই ক্যান্সারের ভালো চিকিৎসা হচ্ছে। শুরুতে আমার কাছে চিকিৎসা নিয়ে অনেক রোগী ভালো  আছে। যদি সচেতন হোন তাহলে   রোগটিকে প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয়ে সাহায্য করবে। ক্যান্সারে একটি বহুল প্রচলিত কথা হলো “শুরুতে রোগ নির্ণয়  ও প্রথমদিকে ধরতে পারলে ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগও সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব।”  

 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ কোলোরেক্টাল, ল্যাপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, এ.কে. কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা। যোগাযোগ: ০১৭১২৯৬৫০০৯

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status