শেষের পাতা
এলডিসি উত্তরণের পর রপ্তানিতে ৯০ শতাংশ সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ: সিপিডি
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২১ নভেম্বর ২০২২, সোমবারবেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, এলডিসি উত্তরণের পর অনেক সুবিধাই হারাতে হবে। রপ্তানি খাতে প্রায় ৯০ শতাংশ সুবিধা বাংলাদেশের জন্য থাকবে না। এ কারণে রপ্তানি কর্মক্ষমতা টেকসই এবং উন্নত করতে হলে পছন্দ-চালিত প্রতিযোগিতা থেকে দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা-চালিত প্রতিযোগিতায় স্থানান্তরিত হতে হবে। গতকাল ‘ডব্লিউটিও-এমসি-১২ আউটকামস নেক্সট স্টেপস ফর বাংলাদেশ অ্যাজ এ গ্র্যাজুয়েটিং এলডিসি’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস) বাংলাদেশের অংশীদারিত্বে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় বলা হয়, ধনী দেশগুলোর অবহেলার কারণে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া (গ্র্যাজুয়েশন) দেশগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। গত জুন মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিত ১২তম বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা মন্ত্রিসভা সম্মেলনেও স্বল্পোন্নত দেশের উত্থাপিত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়নি।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সিপিডি’র ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দাবিগুলো ডব্লিউটিও এমসি১২-এ উপেক্ষিত হয়েছে। সম্মেলনে উন্নত ও ধনী দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডাগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান এজেন্ডা এলডিসি গ্র্যাজুয়েট। এর আগে গ্র্যাজুয়েশন পাওয়া ৬টি দেশের বেশির ভাগই ছোট অর্থনীতির। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যারা সর্বাধিক সুবিধা নিতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এলডিসি উত্তরণের পর অনেক সুবিধাই হারাতে হবে। রপ্তানি খাতে প্রায় ৯০ শতাংশ সুবিধা বাংলাদেশের জন্য থাকবে না। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ফোরামে বাংলাদেশের স্বার্থ একচেটিয়াভাবে আলোচনা ও সুরক্ষিত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি পৃথক এবং নিবেদিত সেল গঠন করা উচিত। অনুষ্ঠানে সিপিডি’র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যেসব দেশ আগে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হয়েছে, তারা জনসংখ্যা ও অর্থনীতির আকারের দিক থেকে ছোট দেশ। অর্থনীতি ও জনসংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বৃহৎ। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেটি এলডিসি হিসেবে পাওয়া সুযোগগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেছে।
দেশটি অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা ব্যবহার করে রপ্তানি বাড়িয়েছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, এই ধরনের সুযোগগুলো আরও চলতে থাকবে কিনা। যদি তা না হয়, তাহলে তারা কীভাবে কাজ করবে? এমসি-১২ এর ঘোষণায় গ্র্যাজুয়েশন হওয়ার পরে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো অতিক্রম করার জন্য কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ধনী দেশগুলোর অবহেলার কারণে, গ্র্যাজুয়েশন পাওয়া দেশগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ভবিষ্যৎ নন-এলডিসি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচনা করে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি জোরদার করতে হবে। ড. দেবপ্রিয় বলেন, বর্তমানে আলোচনার সময় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) শুধু পণ্যের গুণগত মানই নয়, পণ্য কীভাবে উৎপাদিত হয় সে বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, তারা পরিবেশ ও শ্রম অধিকারের বিষয়েও জোর দিচ্ছে। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি যে, আগামী দিনে অবশ্যই মানবাধিকার যুক্ত হবে। ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, বাংলাদেশ যখন এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই দেশটি একটি রাজনৈতিক রূপান্তরও প্রত্যক্ষ করছে।