কলকাতা কথকতা
সরজমিন
বিঘার পর বিঘা জমি, বাংলো, ফ্ল্যাট, পি কে হালদারের সম্পত্তি দেখে চোখ কপালে ওঠে
জয়ন্ত চক্রবর্তী, অশোকনগর
(১ মাস আগে) ১৫ মে ২০২২, রবিবার, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৯:৫০ পূর্বাহ্ন

গুগল ম্যাপ দেখাচ্ছিল কলকাতা থেকে দূরত্ব সাড়ে ৫৭ কিলোমিটার। সড়কপথে ভ্রমণের সময় এক ঘণ্টা ৫৫ মিনিট। কিন্তু যশোর রোড দিয়ে হাবড়ার অশোকনগরে পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লেগে গেল। সকালের ঝিরঝিরে হাওয়ায় সফর মন্দ কাটলো না। কিন্তু যে কারণে কলকাতা থেকে ঠেঙ্গিয়ে অশোকনগর আসা সেই বাংলাদেশের কুখ্যাত কিংবা সুখ্যাত ব্যাংক ফ্রড পি কে হালদার ওরফে প্রশান্ত কুমার হালদারের সম্পত্তির সুলুকসন্ধান পাবো কিভাবে? শিবশঙ্কর হালদার ছদ্মনাম, পরিচয়ে দিব্যি রেশন কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড আর প্যান কার্ড নিয়ে তো তিনি বেশ জাকিয়ে বসেছিলেন অশোকনগরে। এখন অবশ্য ইডি’র হেফাজতে কলকাতায়। শনিবার ইডি গ্রেপ্তার করেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা প্রতারণার আসামি পি কে হালদারকে এই অশোকনগর থেকে কিংবা মতান্তরে কলকাতা থেকে। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ডিরেক্টর, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পি কে হালদার ২২টি ভুয়া কোম্পানি গড়ে।
ব্যাংক এবং অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে বিশাল জালিয়াতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। ফাস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির তিনশো কোটি টাকা জালিয়াতির মামলায় ভারতের ইডি তাকে গ্রেপ্তার করে। ভারতেও ভাই প্রীতিশ হালদারকে সঙ্গে নিয়ে ভুয়া কোম্পানি গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
বস্তুত, অশোকনগরে এলে কারও সঙ্গেই মেলামেশা করতেন না পি কে হালদার। আসতেন সুকুমার মৃধা কিংবা তার পরিবারের সদস্যরা। বাংলাদেশের মোস্ট ওয়ান্টেড একজন ক্রিমিনাল যে এখানে বাসা বেঁধেছেন তা বোঝেননি অশোকনগরের মানুষ। অশোকনগরে দেদার সম্পত্তি করা ছাড়াও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায়, রাজারহাট নিউ টাউনে, দিল্লি, মুম্বইতে প্রচুর বেআইনি সম্পত্তি করেছেন এই পি কে হালদার। সারদার সুদীপ্ত সেন কিংবা রোজ ভ্যালির গৌতম কুন্ডু লজ্জা পাবেন পি কে হালদারকে দেখে। বাংলাদেশে প্রতারণা ফাঁস হওয়ার পর কিছুদিন কানাডায় আত্মগোপন করেন। তারপর পাসপোর্ট জাল করেন কবলার মারফত। ভারতে কিভাবে তিনি আধার, ভোটার আর প্যান পেলেন সেটাই রহস্যের। অশোকনগরে চাঁদা বিলোতেন সুকুমার মৃধার মারফত দেদার। অশোকনগরের সংহতি পার্ক বা মিলিনিয়াম সায়েন্স পার্কে কোনও অনুষ্ঠান হলে পি কে হালদার-এর বকলমে সুকুমার মৃধা হয়ে যেতেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক। অশোকনগরে বাংলাদেশের বিশেষ করে বরিশালের মানুষজন বেশি, তাই কি পি কে হালদার এখানেই ঝাঁকে মিশে যেতে চেয়েছিলেন? ইডি’র জেরায় নিশ্চয়ই উঠে আসবে সেই কথা। সুকুমার মৃধা কিংবা পি কে হালদারের বাংলো বাড়িগুলো সিল করে দিয়েছে, সেখানে এখন পুলিশ প্রহরা। নিঃসন্তান পি কে হালদারের সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন সুকুমার মৃধার ভাগ্নে ধৃত স্বপন মৈত্র ও তপন ওরফে উত্তম মৈত্র।

এদের বাড়িতেও পুলিশ পাহারা। কোনও রকমে কথা বলা সম্ভব হলো স্বপনের স্ত্রী পূর্ণিমা এবং উত্তমের স্ত্রী রচনার সঙ্গে । দু’জনেই স্বীকার করলেন ডুয়েল সিটিজেনশিপ আছে তাদের। অর্থাৎ একই সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক ও বাংলাদেশের নাগরিক তারা। রচনা-পূর্ণিমার বাড়িতে অশোকনগরে থাকলেই খেতে আসতেন পি কে হালদার। কাকু, চিতল মাছের মুইঠায়া খুব ভালো খেতেন। জানাচ্ছেন দুজনেই। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন এর টিপ পেয়েই এই আন্তর্জাতিক কেলেঙ্কারির নায়ককে ধরেছে ইডি। বিধান রায়, তরুণকান্তি ঘোষ এই স্মৃতিধন্য অশোকনগরের মানুষ বিশ্বাস করতে পারছেন না যে এতবড় একজন প্রতারক লুকিয়েছিল একদা ব্রিটিশদের এয়ারবেস এই শহরে। নিবেদিতা পল্লীর এক ভাতের হোটেলের মালিকের কথায়- কে জানতো সর্ষের মধ্যে ভূত! লোকটা তো স্থানীয় ক্লাবে ভালোই চাঁদা দিত। টাকা-পয়সাও খরচ করতো। ভর দুপুরে মেঘলা আবহাওয়ার মধ্যে অশোকনগর বোধহয় ভাবছে মেঘের আড়ালেই মেঘনাদের বাস!
ভিডিও লিংক- https://www.youtube.com/watch?v=Df0UNwYKnRY
পাঠকের মতামত
বাংলাদেশের দাদাভাই লীগের ছত্রছায়ায় সকল ওবায়দুল কাদের লীগ নেতারা দায়ী। বাংলাদেশ বিএনপি লীগের কারসাজি বলে উঠতে পারে ড.হাসান মাহামুদ লীগ।
এসব অপরাধ কমিয়ে দেশের সম্পদ রক্ষার একটাই উপায় তাহল ব্যংকের বড় ছোট সকল কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়ার আগে সম্পদের হিসাব নেয়া এবং সব সময় নজরদারীতে রাখা,একথা আমরা সবাই জানি কিন্ত এটা কে করবে! তাই দেশের সম্পদে বিদেশে পাহাড় হচ্ছে
In future PK Halder may elected a member of west bengal bidhan shova.
বাড়ীওয়ালা যদি বাড়ীর হালহকিকত দেখাশুনা না করে তার কথিত শত্রু দমনে ব্যস্ত থাকে তাহলে যা হবার তা হবেই। চোরকে দেষ দিয়ে লাভ নাই। লোকে বলে যার পেট ভাল নয় সে আলো চালের দোষ দেয়। যাক হালদার মারছে কাদের টাকা। তাদের পর্দায় দেখা যাচ্ছে না। শুধু হালদার! হালদার শোরগোল উঠেছে। এটা তাকে বাচানোর ফন্দি।
ভারতে NRC র প্রয়োগ খোব দরকার।
পুরো ভারতবর্ষে বাংলাদেশিরা (হিন্দু, মুসলিম উভয়) ছড়িয়ে আছে এরমধ্যে পশ্চিমবাংলায় সবচেয়ে বেশি। এবং এটা সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র একশ্রেণীর অসাধু নেতা, মন্ত্রী ও সরকারি কর্মচারি সহযোগিতায়। আগে এরা একটু ভয়ে ভয়ে হতো আর এখন বুক ফুলিয়ে চলছে। এই জন্যই NRC লাগু করতে এত বিরোধীতা হচ্ছে। এখান কার কাচাখোলা আইন কানুন এগুলো কখনোই বন্ধ করতে পারবে না। আমি প্রায় ৩৩ বছর আগে কর্মসুত্রে কয়েক বার বাংলাদেশ গিয়েছিলাম, তখন ই হাওলাত কারবার সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলাম এবং এবং চোরাপথে অনুপ্রবেশ সম্বন্ধে ঞ্জ্যান লাভ করে ছিলাম।
যারা একইসাথে এপারওপারের নাগরিক সরকারের উচিত প্রত্যেকের সম্পর্কে তদন্ত করা।এদের অনেকাংশের দেহ এপাড়ে হলেও প্রাণটা ওপাড়ে থাকে।
পি কে হালদারকে দেশে এনে মূল অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে পারলে ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনা কম হবে। আর আসল অপরাধী চিহ্নিত করা না হলে অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। তাই সরকারের উচিত আসল অপরাধী দ্রুত খুঁজে বের করা।
এই দেশে বড়ো বড়ো পদে হিন্দুদের নিয়োগ দেয়া যে উচিৎ নয় সেটাই চোখে আংগুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে পিকে হালদার।
Dual Citizen বলতে দ্বৈত নাগরিক যেটাকে বোঝায়; সেটা বাংলাদেশ বা ভারতের মধ্যে নেই। যদি কোন নাগরিকের উভয় দেশের নাগরিকত্ব থাকেন সেটা অবৈধ অন্যায় এবং অপরাধ। বাংলাদেশে যেটা আছে সেটা কেবল নির্দিষ্ট কিছু দেশের জন্যে প্রযোজ্য। ভারতে তো দ্বৈত নাগরিকত্ব নেই। যে কারনে সেখানে ভিন্ন একটি শব্দ প্রযোজ্য অনাবাসিক ভারতীয় (NRI)
এদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে কি করে পি কে হালদার ভারতে চলে গেছে এই উত্তরটা খোঁজা দরকার। এছাড়া আরো কতোজন আছেন হালদারের মতো, কয়টা ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের ব্যপারে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এই প্রশ্নটিও প্রাসঙ্গিক। কারা কারা বেগম পাড়ায় কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ পাচার করেছে, বিদেশের কোন ব্যাংকে কার কতো ডলার জমা আছে এবং সে অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা কি তার উত্তর জানাও জরুরি।
He is totally mad due to have no baby why needed to much money??? Crazy guy.
মনে তো হয় না সমস্ত ঘটনার তদন্ত ও বিচার হবে? কারণ সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হলে অনেক রাঘব বোয়ালরাই ফেঁসে যাবেন।
নিঃসন্তান পি কে হালদারের সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন সুকুমার মৃধার ভাগ্নে ধৃত স্বপন মৈত্র ও তপন ওরফে উত্তম মৈত্র। এই লোকের আসল সম্পদ ই নাই। টাকা দিয়ে কি করবে ? অতি লোভে তাঁতী নষ্ট। অতি তরঙ্গ নদী বয় না চিরকাল। এখন ভারতের কারাগার তার বাসস্থান।
সরকারের শতকরা নিরানব্বই ভাগ লোক দুর্নীতিবাজ। একজন ধরে লাভ কি?
Smart man. He didn't fraud bank alone. বাংলাদেশের চাকরি জীবিরা একটু পোচপাচ চলা ফেরা দেখলে তাকে তোষামোদ করা, ও তার অনুকম্পা পাওয়ার জন্য ব্যগ্র হয়ে পড়ে । অযাচিত সাহায্য করে । তার আসল অবস্থার খোঁজ করে না । ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহায়তা ছাড়া সে এত লুটপাট করতে পারত না । এই সব লোভি কর্মকর্তাদের ও চাকরি জীবিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আগে আনা দরকার। প্রত্যেকে ঐ টাকার ভাগ পেয়েছে তাতে সন্দেহ নাই।