কলকাতা কথকতা
কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’-এ ব্যবসায়ীদের হাহাকার, হোটেল-রেঁস্তোরা বন্ধ
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা
(১ সপ্তাহ আগে) ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ২:৪৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১১:৫৯ অপরাহ্ন

মধ্য কলকাতার মারকুইজ স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, কিড স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, নিউ মার্কেট ও আশেপাশের এক বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলের পরিচিতি ‘মিনি বাংলাদেশ’ হিসেবে। প্রায় সারা বছরেই বাংলাদেশিদের আনাগোনায় সরগরম থাকতো গোটা এলাকা। বাংলাদেশি খাবার থেকে শুরু করে নানা ধরনের ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশিদের জন্যই গড়ে উঠেছিল। এই অঞ্চলের হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে এক সময় ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা ছিল। শীতকালে ও ঈদের সময় বাংলাদেশিদের ভিড়ে হাঁটাচলাও কঠিন হয়ে পড়তো। বিভিন্ন দোকান ও মলগুলোতে উপচে পড়তো ভিড়।
কোথায় সেই ভিড়? গোটা এলাকা থেকে বাংলাদেশিরা যেন উবে গিয়েছেন। চারিদিক এখন শুনশান। স্থানীয় মানুষ ও মেডিকেল ভিসায় আসা নামমাত্র কিছু বাংলাদেশির আনাগোনা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের ধাক্কায় কলকাতার মিনি বাংলাদেশে এখন শুধুই হাহাকার। চারিদিকে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে, বলছিলেন এক ব্যবসায়ী।
জুলাই থেকেই বাংলাদেশিদের আসা কমছিল। তবে গত ছয় মাসে তা কমতে কমতে এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, হোটেল মালিকরাসহ সব ব্যবসায়ীরাই মাছি তাড়াচ্ছেন। অনেক হোটেল বন্ধ হয়ে গিয়েছে, বন্ধ হয়েছে অনেক রেস্তোরাঁ, ট্রাভেল এজেন্সির অফিস ও মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রও।
বিশিষ্ট হোটেল ব্যবসায়ী ও মার্কুইজ স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'র সহ সম্পাদক মনতোষ সরকার এই প্রতিবেদককে জানান, এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য সবই বাংলাদেশিদের উপর নির্ভর করে ব্যাপক আকার নিয়েছিল। গত ছয়-সাত মাসে বাংলাদেশিদের আসা কমতে কমতে প্রায় শূণ্যে নেমে আসায় এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা সবাই অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত। হোটেলগুলোতে আবাসিক নেই বললেই চলে। বিশাল খরচের বোঝা সকলের কাঁধে। একই কথা জানান, সম্রাট হোটেলের ম্যানেজার প্রেম ঘোষ। তিনি বলেন, একসময় আমরা বাংলাদেশি আবাসিকদের জায়গা দিতে পারতাম না। এখন দু’চার জন ছাড়া কোনও আবাসিক নেই।

এক রেঁস্তোরার মালিক জানালেন, আর বলবেন না। রেস্তোরাঁ খুলে রাখাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। আগে যেখানে বাংলাদেশি পর্যটকদের বসার জায়গার জন্য অপেক্ষা করতে হতো এখন সেখানে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ নেই। তিনিই জানালেন, ফুটপাতের খাবারের দোকানগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। ক্রেতার অভাবে অনেকে দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। নিউমার্কেটের সামনে দেখা সিরাজগঞ্জের মহম্মদ সিরাজের সঙ্গে। পিতাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। তিনি কথায় কথায় বলেন, চারিদিক এমন শুনশান চেহারা আগে কখনো দেখিনি। ফুটপাতের সস্তার খাবারের দোকানগুলোর সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। কাপড়ের দোকান, পোষাকের দোকানগুলোতে তেমন কোনও ক্রেতা নেই। তিনি জানান, যে হোটেলে তিনি রয়েছেন সেখানে বাংলাদেশি পর্যটক মাত্র দুই জন। তার কথায়, এমন দৃশ্য কোনোদিন দেখব বলে ভাবিনি।
নিউমার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলছিলেন, বাংলাদেশিদের উপরই আমরা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলাম। ফলে তাদের অনুপস্থিতিতে সব কাপড়ের দোকানে কর্মী কমিয়ে দিতে হয়েছে। অনেক আর্থিক ঋণের বোঝা চেপে রয়েছে। কী হবে তা নিয়ে তিনি ও তার মতো সব ব্যবসায়ীরাই চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ঈদ আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি যা চলছে তাতে কোনও আশা দেখতে পাচ্ছি না। ফলে ঈদের জন্য আগে থেকে যে সব অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাস সেগুলো বাতিল করতে হচ্ছে।

পার্ক স্ট্রিটের বিলাসবহুল শাড়ি ও শেরওয়ানির দোকানগুলোরও এখন করুণ অবস্থা্। স্থানীয়রা ছাড়া আর কোনও পর্যটকের দেখা মিলছে না। বাংলাদেশিরাই ছিলেন এসব দোকানের বড় বড় ক্রেতা, জানান এক দোকানের কর্মচারী।
মিনি বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট পরিবহন ব্যবসায়ী শ্যামলী যাত্রি পরিবহনের মালিক অবনী কুমার ঘোষ বলেন, এক কথায় ভয়াবহ।পরিস্থিতি যেভাবে চলছে তাতে খুব শিগগিরই কোনও আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না। তিনি বলেন, সৌহার্দে্র বন্ধন হিসেবে দুই বাংলার মধ্যে যে যাতায়াতের সেতু বন্ধন গড়ে উঠেছিল তা এক প্রকার ভেঙে পড়েছে। দুই বাংলার মধ্যে যাতায়াতের জন্য অসংখ্য পরিবহনের বাস চলতো সেগুলো সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
তিনি জানান, এখন তাদের সৌহার্দ বাস প্রতিদিনের বদলে চলে সপ্তাহে একটি বা দুটি। সেগুলোতেও আট দশ জনের বেশি যাত্রী থাকে না। ফলে ঘোর সঙ্কটে রয়েছেন তিনিও। আর বাংলাদেশিদের উপর নির্ভর করে যে অসংখ্য পরিবহন সংস্থা গড়ে উঠেছিল সেগুলোর অনেকেই পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয়েছে।

বণিকসভার এক কর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে পর্যটক আসা ভিসা ও অন্যান্য কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। হাসপাতালের ব্যবসা মার খাচ্ছে। নিউ মার্কেট থেকে ই এম বাইপাসে তৈরি বহু হোটেল বাংলাদেশি রোগী ও তাদের পরিবারের উপরে নির্ভরশীল। সেখানে কলকাতা ও রাজ্যের ছেলেমেয়েরা কাজ করেন। বাংলাদেশিরা না আসায় হোটেলের ব্যবসাও মার খেয়েছে। ফলে অনেকেই রুটিরুজি হারিয়েছেন। বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীদেরও ছাঁটাই করা হচ্ছে।

শুধু নিউমার্কেট অঞ্চল নয়, গড়িয়াহাট, হাতিবাগানের মতো এলাকাগুলোর ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশিদের উপর নির্ভর করতেন। তারা এখন হা হুতাশ করছেন। একই চিত্র বড় বাজারের বড় বড় শাড়ির আড়ৎগুলোতেও। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণ শাড়ি ও পোষাক কিনে বাংলাদেশে পাঠাতেন সে সব এখন এক প্রকার বন্ধ।
পাঠকের মতামত
প্রতিটি সমস্যার সমাধান আছে। আপনারা আপনাদের নতুন ব্যবসার ব্যবস্থা করেন আমরা আমাদের নতুন কেনাকাটা, ডাক্তার ও পর্যটন জায়গা খুঁজে নিচ্ছি।
We are not unhappy!!
মিনি কলকাতার ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর ভারতের অর্থনীতি কতটুকু নির্ভরশীল? যদি পুরো কলকাতা'টাও দূর্ভিক্ষে পতিত হয়, তবুও কী ভারতের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে? ভারতের জনসাধারণের জন্য সরকারি রেসনব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত হলে, আমাদের সাথে ওদের 'খাদ্যনিরাপত্তা'র ফারাকটা স্পষ্ট হবে!
ভিসা দেয়ার উপর কড়াকড়ি আরোপ করে ভারত বাংলাদেশের অর্থনীতির যা উপকার করল!
কলকাতার মিনি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে মোদি সরকারের বাংলাদেশের উপর দাদাগিরি করার ফল !!
অহংকারী ভারতীয়রা ঠিক হয়ে ছে
আল হামদু লিল্লাহি আল হামদু লিল্লাহি আমার দেশের জনগণ বুঝতে পেরেছে যে আসলে ভারত আমাদের বন্ধু নন শত্রু আজ ভারতের জন্য আমার দেশের গনতন্ত্রে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে অতএব দেশপ্রেমিক জনগণের উচিত ভারতকে বয়কট করা বয়কট করা যা শুরু হয়েছে আওয়ামী দোসর গুলো ভারতের পা চাটা দালাল।
আমরা এখন পাকিস্তানে ঘুরতে যাবো। পাকিস্তানে অনেক সুন্দর জায়গা আছে দেখার মতো পেশোয়ার, আজাদ কাশ্মীর, ইসলামাবাদ, সিন্ধু অনেক সুন্দর জায়গা ঘুরার মতো মাশআল্লাহ!
India out, Boycot India!!
ভারতীয়রা আমাদের ক্ষতি করেছে। প্রণব বাবু তার বইয়ে এই সত্য লিখে গেছেন। আমরা আপনাদের আপন মনে করতাম অথচ আপনারা আমাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। আল্লাহ আপনাদের বিচার করবে ইনশাল্লাহ।
মনে হয়, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এ ব্যাপারে কোন মাথা ব্যাথা নেই। কোলকাতার জীবনযাত্রায়, সেখানকার মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর যে বিপর্যস্ত অবস্হা, যে অমানিশা নেমে এসেছে এজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ভুল নীতি ও ব্যক্তির জন্য পরম ভালোবাসাই পূর্ণভাবে দায়ী। অধিকন্তু মোদী সরকার যে পশ্চিম বঙ্গের মমতার সরকারকে পছন্দ করেন না সেটাও স্পষ্ট হয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশীদের সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের বিমাতাসুলভ ও হিংসুটে আচরণ মোটেও কাম্য নয় বরঞ্চ তা তাদের দেশের জন্য ক্ষতি প্রমাণিত হলো। তবু্ও তারা জেদ বজায় রেখে চলছে, যা নিজেদের অকল্যাণ ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় নিয়ে এসেছে।
কাউকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই । সবাই সবার জায়গায় সম পরিমাণ বড় । অন্যকে ছোট ভাবলে তার ফল নিজেই পেয়ে যায়। এটাই বাস্তবতা ।
কাউকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই । সবাই সবার জায়গায় সম পরিমাণ বড় । অন্যকে ছোট ভাবলে তার ফল নিজেই পেয়ে যায়। এটাই বাস্তবতা ।
ভারতীয় পোশাক ও পণ্যমুক্ত একটা ঈদ কাটাতে চেয়েছিলাম। আশাকরি, এবছর আল্লাহ মনের আশা পূর্ণ করবেন।
বরং সংবাদ চিত্রের কোলকাতা নিউমার্কেটটিকে যাদুঘরে রুপান্তর করলে কিছূ দর্শনী পেতেও পারেন!
কৃতকর্মের আগুনে আরও কিছুদিন পুড়ে খাক হ....... পুড়ে খাব হ........
কোলকাতার লোকেরাই তো পরাধীন অন্য রাজ্যে তারা কেলানি খায়, আবার বাংলাদেশীদের দেখতে পারেনা। ভাই তোরা আগে নিজেরা স্বাধীন হ, তারপর আমাদের সাথে লাগিস
যে দেশের মানুষ বাংলাদেশীদের সন্মান দেয়না সে দেশ ভিসা ফ্রী করলেও যাবো না।
আমরা এখন পাকিস্তানে ঘুরতে যাবো। পাকিস্তানে অনেক সুন্দর জায়গা আছে দেখার মতো পেশোয়ার, আজাদ কাশ্মীর, ইসলামাবাদ, সিন্ধু অনেক সুন্দর জায়গা ঘুরার মতো মাশআল্লাহ!