শরীর ও মন
ব্রণ খোঁটানোর পরিণতি
ডা. শেহরিন. এম. হক
(২ বছর আগে) ১৯ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার, ১২:৩৩ অপরাহ্ন
ব্রণ বয়ঃসন্ধিকালের একটি কমন সমস্যা। যা মুখের ত্বকে অস্বস্তিকর অবস্থাও সৃষ্টি করে। ব্রণ বয়ঃসন্ধিকালে বেশি হলেও বয়স ২৫ হওয়ার পর থেকে কমতে থাকে। তবে সবারই যে কমে যাবে তা কিন্তু না। চিকিৎসায় বা নিজে থেকেই কিছু ব্রণ সহজে সেরে যায় বা মিশে যায় ,আবার কিছু ব্রণ সারলেও বারবার ফিরে আসে। ব্রণ বিভিন্ন প্রকারের বা ধরনের হয়ে থাকে। ব্রণ যত জটিলই হোক, এটি চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে তোলা সম্ভব। তবে কিছু ধরনের ব্রণ নিরাময় করতে একটু সময় লাগে।
ত্বকের লোমকুপ ব্লক হয়ে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে, অতিরিক্ত তেল, সিবাম নিঃসৃত হলে ব্রণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। প্রোপিয়োনিব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনেস নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এটি হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ের ব্রণকে কমিডন বলে।
কারণ: বয়ঃসন্ধিকালই ব্রণ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ফ্যাক্টর। বয়ঃসন্ধিকালে শরীরে অ্যান্ডোজেন হরমোন বেড়ে গেলে ব্রণের প্রাদুর্ভাবও বেড়ে যায়। বয়ঃসন্ধিকালের ব্রণকে চিকিৎসকরা স্বাভাবিক হিসেবেই নিয়ে থাকেন এবং ব্রণ আক্রান্তদের শরীরের অন্য কোনো ক্ষতি হবে না বলে প্রাথমিক আশ্বাস দিয়ে থাকেন। কিছু ক্ষেত্রে ২৫ বছর বয়সের পরও অনেকের নতুন করে ব্রণ হয়। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ব্রণ অনেক বেশি হলে বা ত্বকের কোনো সমস্যা যেমন দাগ বা গর্ত সৃষ্টি করে তাহলে চিকিৎসা নিতে হবে। সাধারণত এসব দাগ বা গর্ত কোনো ক্রিম, জেলে বা বাজার থেকে কেনা প্রসাধনীতে সেরে যায় না। কেবল ডার্মাটোলজি চিকিৎসকরা একটু জটিল ব্রণ দীর্ঘ চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করে থাকেন। সাধারণত ব্রণ যেসব কারণে হয় তা হলো-এলোমেলো জীবনযাপন,পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, পর্যাপ্ত না ঘুমানো, ভাঁজা-পোড়া বা তৈলাক্ত খাবার বেশি খাওয়া, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া, খাবারের সঙ্গে অনেক বেশি অসম্পৃক্ত চর্বি এবং চিনি গ্রহণ করা। চিনি সিবাম নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যা ব্রণ হওয়াতে সহায়তা করে। এছাড়া শরীর চর্চার অভাব, বংশগত কারণ, হরমোনের প্রভাব, যাচাই-বাছাই না করে বিভিন্ন পণ্য মুখে ব্যবহার, মেটাবোলিজমের সমস্যা, ঠিকমতো খাবার হজম না হওয়া এবং পরিমিত পানি পান না করা এবং শাকসবজি ও ফলমুল কম খাওয়া ইত্যাদি। আবার শরীর থেকে টক্সিন বের না হওয়াটাও ব্রণের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়।
ব্রণ খোঁচালে যা হয়:
অনেকে ব্রণ একটু চুলকালে বা ছোট আকারে বের হলে তা নখ দিয়ে খুঁচিয়ে বা হাত দিয়ে গলিয়ে ক্ষত বড় করে ফেলেন। এটি ব্রণের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ, আমাদের হাতে বা নখে কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে যা এর মাধ্যমে ত্বকের সংস্পর্শে চলে এসে আরও বেশি ক্ষতি করতে পারে। এমনকি ত্বকের গভীরে গিয়ে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে ও ত্বকে দাগ হতে কাজ করে। চিকিৎসকদের মতে, ব্রণ হলো বন্ধ লোমকূপ ও ব্যাকটেরিয়ার বিপক্ষে শরীরের প্রতিবাদ। একটু চুলকানি বা ব্যথা হলেই নখ দিয়ে খুঁটিয়ে শরীরের স্বাভাবিক আরোগ্য-প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা এবং ব্রণের প্রদাহ আরও বাড়িয়ে তোলা। সাধারণত ব্রণ নখ দিয়ে খোঁচালে ত্বকের যেসব ক্ষতি হয় তাহলো-
মুখের ত্বক বিশ্রী হয়ে যাওয়া:
ব্রণ খোঁচালে সে স্থানটাতে বা যে ব্রণটি আপনি নখ দিয়ে খুঁটছেন, সেখান থেকে নির্গত পুঁজ সংক্রমণের মাধ্যমে খোসপাঁচড়ার সৃষ্টি করে এবং সামান্য ব্রণ থেকে ভীষণ বিপদ হতে পারে।
মুখের ত্বকে দাগ বৃদ্ধি:
ব্রণ ক্রমাগত নখ দিয়ে খোঁচালে ত্বকে দীর্ঘস্থায়ী দাগের সৃষ্টি হয়, যা সুন্দর ত্বকের জন্য হুমকি স্বরূপ। ত্বকে একবার এই দাগ পড়ে গেলে তা চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা সময় সাপেক্ষ ও কিছুটা ব্যয় বহুল।
নিজের মুখের ত্বক নিজেই ছিড়ছেন: নখ দিয়ে ব্রণ খোঁটা মানে শুধুই পুঁজ বের করছেন না, আপনি নিজের চামড়াও ছিঁড়ছেন! পুঁজ, ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, সেটা আসলে আপনার চামড়া ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট গর্ত। অর্থাৎ নখ দিয়ে ব্রণ খুঁটে আপনি নিজের চামড়ায় নিজেই গর্ত করছেন।
পরিশেষে, নখ দিয়ে ব্রণ খোঁটার লোভ সংবরণ করে বরং সচেতন হওয়া জরুরি। ব্রণের প্রদাহ বেশি হলে ডার্মাটোলজি বা অ্যায়েথেটিকস চিকিৎসকরা এর সমাধান দিতে পারে। বর্তমানে ব্রণের অনেক উন্নতমানের চিকিৎসা আছে এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানেও করে থাকি। কী চিকিৎসা করতে হবে তা ব্রণের ধরন দেখে করা হয়। আপনারা চাইলে সহজেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে এর সমাধান পেতে পারেন।
লেখক: চর্ম, যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ও অ্যান্টি এজিং স্পেশালিস্ট চেম্বার- ড. শেহরিন’স লেজার সেন্টার-ত্বক
বাড়ি-৪৫ (চতুর্থতলা), রোড-২৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩২।
মোবা: ০১৯৮৬-৮৪০০১৯