শরীর ও মন
অতিরিক্ত চর্বি কমানোর সার্জিকেল পদ্ধতি বা লাইপোসাকসন
ডা. এসএম বখতিয়ার কামাল
১৬ অক্টোবর ২০২২, রবিবারলাইপোসাকসনের পরে করণীয়: অনেকে শরীরের অত্যধিক ওজন কমানোর জন্য ডায়েটিং ও এক্সারসাইজ করেন। কিন্তু এর একটি সার্জিকেল চিকিৎসা আছে, যা লাইপোসাকসন নামে পরিচিত। মূলত ওজন কমানোর এই পদ্ধতিকে লাইপোসাকসন বলে। এই পদ্ধতিতে স্কিনের নিচের চর্বি মেশিনের মাধ্যমে টেনে বের করার পদ্ধতি। অনেকে অতিরিক্ত মেদবহুল ভুঁড়ি কমানোর জন্যই এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করান। লাইপোসাকসন পদ্ধতিতে শরীরের যে স্থান থেকে চর্বি বের করতে হবে, সেখানে আধা ইঞ্চি জায়গা অবশ করে একটি সরু নল ঢুকিয়ে মেশিন দিয়ে টেনে চর্বি বের করা হয়। শরীরে যদি অতিরিক্ত চর্বি থাকে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টায় ৩ থেকে ৫ কেজি চর্বি বের করা হয়। মূলত বডি শেপিং করার জন্য আজকাল এই পদ্ধতিতে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর ৩ দিন বাসায় বিশ্রাম নিতে হয়। লাইপোসাকসন পদ্ধতিতে সাধারণত যে সব জায়গা থেকে চর্বি বের করা যায়- ১, পেট ও কোমর ২, থাই ৩, ব্রেস্ট ৪, আর্ম বা হাত।
অপারেশনের পরে অতি সামান্য ব্যথা হতে পারে; সেজন্য পেইন কিলার দেয়া হয়, যাতে রোগী ব্যথা অনুভব না করেন। চিকিৎসক ও রোগী গাফিলতি না করলে এটি অবিশ্বাস্য রকম নিরাপদ। আর একটি বিষয় হলো- রোগীকে বা ব্যক্তিকে অজ্ঞান করে অপারেশন করতে হয় না এমনকি হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয় না। কিন্তু ১ দিন পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। পরবর্তী ২ দিন বাসায় হাঁটা-চলা করা যাবে। ৪র্থ দিন থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যাবে। ১০ দিন পর থেকে ভারী কাজসহ সব ধরনের কাজ করা যাবে। লাইপোসাকসনের মাধ্যমে অপারেশনের পর অপারেশনের জায়গা স্লিম হতে ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগবে। স্থানভেদে ১/২ থেকে ৫ লিটার পর্যন্ত ফ্যাট বের করা হয়। সাধারণত যত লিটার ফ্যাট বের করা হবে সাধারণত তার দ্বিগুণ পর্যন্ত ওজন কমে; তবে ওজন কমানোর জন্য লাইপোসাকসন না করানোই ভালো।
আবার চর্বি জমা হতে পারে? প্রশ্ন হলো ওজন না বাড়ার উপায় কী? ওজন না বাড়লে কখনোই আর নতুন করে চর্বি জমা হবে না। ডায়েটিং ও এক্সারসাইজ ওজন না বাড়ার উপায়। অনেকে প্রশ্ন করেন প্রেগনেন্ট হতে অসুবিধা হবে কী? ব্রেস্টে লাইপোসাকসনের পর ব্রেস্ট ফিডিংয়ে অসুবিধা হবে কী? প্রেগনেন্ট হতে অসুবিধা হবে না। লাইপোসাকসন শুধু ফ্যাট কমায়; গ্লান্ড কমায় না, ফলে ব্রেস্ট ফিডিংয়ে অসুবিধা হবে না। লাইপোসাকসনের পর স্কিন ঝুলে যাবে না। স্কিনের নিজস্ব ইলাসটিসিটি আছে; তাছাড়া চিকিৎসকরা বাইন্ডার সাপ্লাই দেয়, তাই ঝুলে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। লাইপোসাকসনের পর ছিদ্রগুলো মিলিয়ে যায়; অথবা ছোট দাগ থাকতেও পারে লাইপোসাকসনের পর।
লাইপোসাকসনের পর করণীয়: ১. প্রচুর তরল খাবার খেতে হয়। ২. ১ দিন পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হয়। ৩. পরবর্তী ২ দিন বাসায় হাঁটা-চলা করা যায়। ৪. ৪র্থ দিন থেকে স্বাভাবিক কাজ করা যায়। ৫. ১০ দিন পর থেকে ভারী কাজসহ সব ধরনের কাজ করা যায়। ৬. প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। ৭. শোয়া অবস্থায় ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করা যাবে। ৮. ২ দিন ধূমপান ও মদ্যপান করা যাবে না।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ) কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার ফার্মগেট, গ্রীন রোড, ঢাকা। সেল-০১৭১১৪৪০৫৫৮