শরীর ও মন
হিটস্ট্রোক এড়াতে যা করণীয়
স্টাফ রিপোর্টার
২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবারপ্রচণ্ড গরম আবহাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ভয়াবহ এই দাবদাহ বা হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয় কী- এ বিষয়ে মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। তিনি বলেন, হিটস্ট্রোকটা তখনই হয় যখন পানিশূন্যতা দেখা দেবে। যে কারণে শরীরে থাকা রক্ত থেকে পানি সরে যাচ্ছে। ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন এবং যে পানি প্রয়োজন সেটা ব্রেইন পাচ্ছে না। তখন কিন্তু স্ট্রোক হচ্ছে। শরীরের পানিটা বের হয় ঘামের মাধ্যমে এবং যদি পর্যাপ্ত পানি না খাই। হিটস্ট্রোকটা সরাসরি ব্রেইনে আঘাত হানে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য তৎক্ষণাৎভাবে তাকে তরল জাতীয় খাবার দিতে হবে। অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে পানি খাওয়ানো প্রয়োজন। এরপর যতদ্রুত সম্ভব হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি করতে হবে। হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে করণীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন হিট বা তাপমাত্রা বেশি থাকে তখন আমরা ঘরের ভেতরে থাকবো। বিশেষ কারণে যদি আমরা বাইরে বের হই তাহলে আমাদের পোশাকের পরিবর্তন আনতে হবে। টাইট পোশাকের পরিবর্তে ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরতে হবে। পায়ে মোজা এবং ক্যাপের পরিবর্তে ছাতা ব্যবহার করতে হবে যাতে সরাসরি সূর্যের তাপটা মাথায় না পড়ে। এ ছাড়া যেন পানিশূন্যতা না হয় সেজন্য সঙ্গে পানি রাখতে হবে। একটু পরপর পানি পান করতে হবে। আমরা যারা বাসায় থাকি তারা বিভিন্ন সিজনাল ফলের শরবত এবং লেবুর শরবত প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। পচনশীল খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে যারা বাইরে কাজ করেন আমাদের শ্রমিক শ্রেণির লোক তাদেরকে সঙ্গে পানি রাখতে হবে। তাদের শরীর থেকে বেশি ঘাম ঝড়ে। যে কারণে হিটস্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, প্রচণ্ড এই গরমে যারা বাসার বাইরে যায়, মাঠে যায় এবং বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন তাদের শরীর থেকে ঘামসহ বিভিন্নভাবে পানি বেরিয়ে যায়। পানির সঙ্গে লবণ বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর ক্লান্ত-দুর্বল লাগে। প্রেশার কমে যায়। মাথা ঘোরে। অজ্ঞান হয়ে যায়। এ ছাড়া আরেক শ্রেণি যারা রাস্তাঘাটে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাচ্ছে যেটা থেকে ডায়রিয়া-বমি-জন্ডিস, টাইফয়েড দেখা দিচ্ছে। কেউ কেউ ঠাণ্ডাপানি পান করে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো হিটস্ট্রোক। তাপমাত্রা যখন ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট মাথায় এসে লাগে তখন শরীরের ঘাম বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে রোগী মাথা ঘুরে পড়ে যায়। যেটাকে আমরা হিটস্ট্রোক বলি। সঠিক সময় চিকিৎসা না নিলে রোগী মারা যেতে পারে। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সকলেই এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে বয়স্ক যারা বিভিন্ন রোগে ভোগেন অর্থাৎ যাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম রয়েছে তারা অধিক ঝুঁকিতে রয়েছেন। এটা থেকে বাঁচার একটি উপায় বিনা প্রয়োজনে বাসার বাইরে যাবেন না। দিনের কাজগুলো সকাল কিংবা বিকালের মধ্যে শেষ করতে হবে। এ ছাড়া শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে রিকশাওয়ালা-দিনমজুরসহ সাধারণ মানুষকে মাথায় ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে। পানিটি অবশ্যই যেন বিশুদ্ধ হয়। পানির সঙ্গে সামান্য পরিমাণে লবণ মিশিয়ে খাওয়া ভালো। বাইরের খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। বাইরে থেকে এসে সরাসরি ঠাণ্ডা পানি পান করা যাবে না। এ ছাড়া পোশাকের ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা রঙিন পোশাক, ছাতা ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।