শরীর ও মন
লিভার রোগ ও ফ্যাটি লিভার
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবারমানব শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভার। শারীরিক যত্নের অভাবে বা নিয়মকানুন না মানার ফলে অন্যান্য অঙ্গের মতো লিভারেও নানা ধরনের রোগ হয়। প্রশ্ন হলো লিভারের রোগ কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ। বা লিভারে কোনো সমস্যা হলে আমরা কী করবো? আমি বলবো লিভার রোগ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ, লিভারের রোগ নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। লিভারে সাধারণত যে রোগগুলো হয় তার অন্যতম ভাইরাল হেপাটাইটিস। ভাইরাস থেকে জন্ডিস হয়। যেমন: এ-ভাইরাস, ই-ভাইরাস, সি-ভাইরাস- সবগুলো থেকে জন্ডিস হতে পারে। এ-ভাইরাস, ই-ভাইরাস, সি-ভাইরাস কেন হয়? এগুলো সবই পানিবাহিত রোগ। আমরা যদি একটু সতর্ক হই, বিশুদ্ধ পানি পান করি, রাস্তাঘাটে বা যেখানে সেখানে অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করি তাহলে তো এ ভাইরাস বা ই-ভাইরাস হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। বি-ভাইরাস ও সি-ভাইরাস ছড়ায় রক্তের মাধ্যমে। অন্যের রক্ত নিজের শরীরে নেয়ার আগে পরীক্ষা করে নিন, একজন রোগীকে রক্ত দেয়ার সময় নতুন সুঁচ ব্যবহার করি তাহলে কিন্তু বি-ভাইরাস বা সি-ভাইরাস ছড়ানোর সুযোগ নেই। স্বামী স্ত্রী দু’জনের কারও যদি বি-ভাইরাস বা সি-ভাইরাস থাকে তাহলে তার সঙ্গে মেলামেশার ফলে অন্যেরও বি-ভাইরাস বা সি-ভাইরাস হতে পারে। তাই একজনের যদি এসব ভাইরাসের কোনোটি থাকে তাহলে অন্য জনের উচিত পরীক্ষা করে টিকা নিয়ে নেয়া। মায়ের যদি এ ভাইরাস থাকে তাহলে সন্তানকেও জন্মের মুহূর্তে অবশ্যই বি-ভ্যাক্সিন ও ইমিউনোগ্লোবিওলিন ইনজেকশান দিতে হবে। লিভারের একটি বড় রোগ হচ্ছে ফ্যাটিলিভার। যা মূলত খাদ্যাভ্যাস ও লাইফ স্টাইলের ওপর নির্ভর করে। রাতে দেরিতে খাওয়া, খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাতে যাওয়া, হাঁটাচলা কম করা, ফ্যাটি ফুড ফাস্ট ফুড বেশি খাওয়া এগুলো ফ্যাটি লিভারের বড় কারণ।
কখনো কখনো অ্যালকোহল ও ফ্যাটি লিভারের বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই কিছু নিয়ম মেনে চললে যেমন-নিয়মিত ব্যায়াম করা, রাতে ভাত কম খাওয়া, রাতে খাওয়ার পর একটু হাঁটাচলা করা, বিকালে হাঁটাহাঁটি করা, ফাস্ট ফুড ফ্যাটি ফুড কম খাওয়া এসব নিয়ম মেনে চললে ফ্যাটি লিভার এড়ানো সম্ভব। অর্থাৎ, আমি বলতে চাচ্ছি লিভারের বেশির ভাগ রোগই প্রতিরোধ যোগ্য। প্রশ্ন হচ্ছে যদি লিভারের রোগ হয়ে যায় তাহলে কী করবো? লিভার রোগের বড় দুঃশ্চিন্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এইচবিএস পজিটিভকে। এইচবিএস পজিটিভ যাদের থাকে তাদের মধ্যে শতকরা পনেরো থেকে বিশজনের লিভার ডেমেজ এবং লিভার সিরোসিস হয়। সেই পনেরো থেকে বিশজনের মধ্যে শতকরা পাঁচজনের লিভার ক্যান্সার হতে পারে। বেশির ভাগ রোগীর কিছুই হয় না। আবার যাদের লিভার সিরোসিস বা লিভার ডেমেজ হয়ে যায় তাদের অধিকাংশ কিন্তু টেরই পান না যে তাদের লিভার সিরোসিস হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারেন। তাই, কেউ যদি একটু নিয়মকানুন মেনে চলেন এবং কোনো সমস্যা দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন তাহলে দীর্ঘদিন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব।
লেখক: অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল), চেয়ারম্যান, হেপাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। চেম্বার: ল্যাবএইড, মিরপুর রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা ।