শরীর ও মন
শিশুদের থাইরয়েডজনিত সমস্যা
অধ্যাপক ডা. সুরাইয়া বেগম
(৫ দিন আগে) ২১ জুন ২০২৫, শনিবার, ৮:৩৪ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে শিশুদের থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। থাইরয়েড হরমোন শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। থাইরয়েডজনিত সমস্যাগুলো হচ্ছে- হাইপোথাইরয়েড, হাইপারথাইরয়েড এবং গয়টর বা গলগণ্ড রোগ। হাইপোথাইরয়েডজনিত সমস্যায় থাইরয়েড হরমোন কম তৈরি হয়।
হাইপোথাইরয়েডের প্রকার
এটি দুই ধরনের যেমন: কনজেনটাল হাইপোথাইরয়েড এবং অ্যাকুয়ার্ড হাইপোথাইরয়েড।
কনজেনটাল হাইপোথাইরয়েড
কনজেনটাল হাইপোথাইরয়েড গর্ভকালীন অবস্থায় শিশুদের মধ্যে শুরু হয়। এখানে থাইরয়েড গ্রন্থি তৈরি হয় না বা ছোট আকারের হয় অথবা যথাস্থানে থাকে না।
উপসর্গসমূহ
কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডের উপসর্গসমূহ জন্মের দুই সপ্তাহ পর ক্রমান্বয়ে দেখা দেয়। তন্মধ্যে জন্মের পর দেরিতে কালো পায়খানা করা, ২ সপ্তাহের পরেও জন্ডিস থাকা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বেশি ঘুমানো, কম খাওয়া, কম নড়াচড়া করা, কান্নার আওয়াজ ফ্যাসফ্যাসে হওয়া ইত্যাদি। পরবর্তীতে চিকিৎসা না নিলে ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন বা শারীরিক ও মানসিক বিকাশ যেমন ঘাড় শক্ত হওয়া, বসা, হামাগুড়ি দেয়া, দাঁড়ানো এবং হাঁটা-চলা ইত্যাদি দেরিতে হয়। এছাড়া কথা বলার সমস্যা ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ না হওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা দেখা দিতে পারে। পরবর্তীতে এইসব শিশু খর্বাকৃতির হয়। এইসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞ অথবা শিশু হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। থাইরয়েড স্ক্রিনিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি শিশুর জন্মের পর অথবা পরবর্তীতে ৩-৫দিনের মধ্যে থাইরয়েড হরমোনের পরীক্ষা করাতে হয়। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে থাইরয়েড স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে লক্ষণ দেখা দেয়ার আগেই এই রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ফলে কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডজনিত শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে শিশুরা মুক্ত হতে পারে। হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে শিশুকে সারাজীবন ওষুধ খেতে হবে এবং ওষুধ খালিপেটে সকালে খেতে হবে এবং ওষুধ খাওয়ার আধাঘণ্টা বা একঘণ্টা পরে নাস্তা খেতে হবে। নিয়মিত থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রা ঠিক করা অত্যন্ত জরুরি।
অ্যাকুয়ার্ড হাইপোথাইরয়েড
অ্যাকুয়ার্ড হাইপোথাইরয়েড ছয় বছর বয়সের ঊর্ধ্বে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে বিদ্যমান। এটি জন্মগত সমস্যা নয়, এই রোগটি সাধারণত থাইরয়েড এন্টিবডির কারণে হয়ে থাকে। উপসর্গসমূহ: অতিরিক্ত ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ভুলে যাওয়া, পড়াশোনার অবনতি হওয়া, খর্বাকৃতি, ওজন বেড়ে যাওয়া, বেশি বেশি ঘুমানো, শরীরের চামড়া খসখসে অনুভূত হওয়া ইত্যাদি। এই সমস্ত লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
হাইপারথাইরয়েড রোগটি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এখানে থাইরয়েড হরমোন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি তৈরি হয়।
রোগের লক্ষণসমূহ
লক্ষণসমূহ হচ্ছে- বেশি খাবার গ্রহণ করার পরেও ওজন কমে যাওয়া, ডায়রিয়া, অত্যধিক গরম অনুভূত হওয়া, বেশি বেশি ঘাম হওয়া, কাজে বা পড়ায় ঠিকমতো মনযোগ দিতে না পারা, ঘুম কম হওয়া, হাত কাঁপা, চোখের সমস্যা হওয়া, বুক ধড়ফড় করা এবং মাসিকের সমস্যা হওয়া।
গলগণ্ড বা গয়টর
গলগণ্ড বা গয়টরে আক্রান্ত রোগীর গলার সামনের দিকে অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায়। এটি সাধারণত আয়োডিন স্বল্পতা, হাইপারথাইরয়েড এবং হাইপোথাইরয়েড রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
শিশুদের থাইরয়েডজনিত সমস্যা বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। এইসব রোগীকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ রাখা সম্ভব। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে পরিবারের, সমাজের এবং দেশের বোঝা হয়ে থাকবে।
লেখক-
অধ্যাপক ডা. সুরাইয়া বেগম
শিশু এন্ড্রোক্রাইনোলজি
চেম্বার: আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬
হটলাইন: ১০৬৭২