ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

বাড়ছে ডেঙ্গু, সতর্কতার পরামর্শ চিকিৎসকদের

মরিয়ম চম্পা
৪ অক্টোবর ২০২২, মঙ্গলবার
mzamin

রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও। প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলায়ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এমন অবস্থায় ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক মনে করেন, ডেঙ্গুর বাহন হিসেবে মশার লার্ভা যে সকল স্থানে হয় সে সকল প্রজনন ক্ষেত্রগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত না ধ্বংস করা হবে এবং পানি প্রবাহ বৃদ্ধি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ডেঙ্গু থাকবে। ঢাকার যে সব খাল এবং ড্রেন আছে সেগুলোকে সংস্কার বা খনন করার পাশাপাশি পানির প্রবাহ সৃষ্টি-বৃদ্ধি করতে হবে। পয়ঃনালাগুলোকে সার্বক্ষণিকভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে করে সেখানে কোনোভাবে পানি জমতে না পারে। বিশেষ করে বর্ষাকালে বাড়ির আশপাশে অনেক স্থানে পানি জমা থাকে। সেগুলোও মশার প্রজনন ক্ষেত্র।

বিজ্ঞাপন
আমাদের প্রথম কাজটি করতে হবে সিটি করপোরেশনকে। এক্ষেত্রে শহরের খাল-ড্রেনগুলোকে শুকনো মৌসুমে পরিষ্কার না করায় পানির প্রবাহ কমে মশক প্রজনন হয়। যেহেতু এই প্রজনন ক্ষেত্রগুলোকে নষ্ট করা হয় না এরপরে আমরা মশক নিধনের জন্য ওষুধ ছড়াই। এবং এই ওষুধ কিন্তু নালা-নর্দমায় বা বাড়ির আশপাশে ঠিকভাবে ছড়ানো হয় না। 

সুতরাং এগুলো মশক নিধনে কাজ করে না। এখন আমাদের প্রথম কাজ হবে নালা-নর্দমা এবং খালগুলোতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি এবং পরিষ্কার করা। এর ওপরে মশার ওষুধ ছড়ানোর মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য, শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগ পর্যন্ত ডেঙ্গু একটি শহুরে অসুখ ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে উপজেলা শহর ও গ্রামেও ডেঙ্গু হচ্ছে। ডেঙ্গু মূলত পরিষ্কার পানি থেকে বেশি ছড়ায়। এখানে ডেঙ্গুর বাহক মশা ডিম পাড়ে এবং লার্ভা ছড়ায়। জমাটবদ্ধ পানিতে বেশি ছড়ায়। বর্ষাকালে এটা বেশি হচ্ছে। শহরে এটার প্রকোপ বেশি হওয়ার কারণ নির্মাণাধীন বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানি থেকে এটা ছড়ায়। যেহেতু আমাদের এখানে এখনো ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। সুতরাং শহর, গ্রাম-নির্বিশেষে সবাইকে সচেতন হতে হবে যেন পানিটা না জমতে পারে। আরেকটি বিষয় হলোÑ মশারি ব্যবহার করা, মশার প্রজনন স্থানগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখা এবং নিয়মিত স্প্রে করা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, আমাদের আবহাওয়া এর জন্য অন্যতম কারণ। ডেঙ্গুর প্রজননকাল হচ্ছে বর্ষাকাল। আমাদের এখানে যেহেতু বর্ষাটা দেরিতে আসছে এর কারণে ডেঙ্গু সংক্রমণটাও দেরিতে আসছে। ডেঙ্গুর বাহক মশা কিন্তু স্বচ্ছ পানিতে ডিম পারে। এ ছাড়া আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে তাদের সেই পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার জন্য জেনেটিক্যাল পরিবর্তন হয়। এর ফলে তাদের সংক্রমণের চরিত্র বা ধরন বদলায়। ইনফেকশন কন্ট্রোল বা প্রজনন ক্ষেত্রগুলোকে সমূলে ধ্বংস করার প্রক্রিয়াটি সব হাসপাতালে চালু করতে হবে। আক্রান্ত রোগীর থেকে অন্য কেউ যেন আক্রান্ত না হয় সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। মশার ওষুধ নিয়মিত ছিটানো। শহরাঞ্চলে যদি কোনো বাড়ির আশপাশে মশার লার্ভা পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে তাদেরকে সতর্ক করা। প্রয়োজনে জরিমানা করা যেতে পারে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের দেশে কোনো গবেষণা নেই এবং গবেষণার প্রয়োজনীয় বাজেটের ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণার পাশাপাশি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। যাতে করে সেবা দিতে গিয়ে নিজেরাই আক্রান্ত না হয়। পাশাপাশি গণমাধ্যমে প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে ডেঙ্গুর বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা যেতে পারে। 

একদিনে ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫২৫ দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন ডেঙ্গু রোগী নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৪৪ জনে।  গতকাল সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেল্থ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫২৫ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩৫২ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৭৩ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ৫২৫ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৪৪ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন এক হাজার ৫৯৮জন এবং ঢাকার বাইরে ৫৪৬ জন। এতে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ৩রা অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি ছিলেন ১৭ হাজার ৮২০ জন।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status