ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

টক অব দ্য মান্থ ‘লাঠি’

নূরে আলম জিকু
২ অক্টোবর ২০২২, রবিবার
mzamin

সেপ্টেম্বর মাস জুড়েই রাজনীতিতে আলোচনার বিষয় ছিল ‘লাঠি’। রাজপথে সমাবেশ, পাল্টা সমাবেশে রাজনৈতিক  দলের নেতাকর্মীদের হাতে দেখা যাচ্ছে লাঠি। বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরা বলছেন, আত্মরক্ষার জন্য সভা সমাবেশে লাঠি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকারি দলের দাবি পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে বিরোধীরা লাঠি নিয়ে সমাবেশ করছে। রাজনীতিবিদরা প্রতিদিনই কথা বলছেন লাঠি নিয়ে। এ প্রসঙ্গে বাহাসেও জড়াচ্ছেন তারা। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র সভা সমাবেশে নেতাকর্মীদের পতাকা বেঁধে লাঠি নিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া ও হামলা হওয়ার পর বিএনপি নেতাকর্মীরা এই কৌশল নিয়েছে। বিরোধী দলের কর্মসূচির বিপরীতে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও লাঠি হাতে অবস্থান নিতে দেখা যায়।  

গত ২৯শে সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি’র আন্দোলনের হাঁকডাকে আওয়ামী লীগ ভীত, সে রকম উদ্ভট চিন্তা কেউ করে না।

বিজ্ঞাপন
আসেন মাঠে আসেন। লাঠি নিয়ে আসলে খবর আছে। জাতীয় পতাকার সঙ্গে লাঠি, এটা আমরা মেনে নিতে পারবো না। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা আমরা মেনে নেবো না। জাতীয় পতাকার সঙ্গে লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামলে জবাব দেয়া হবে। লাঠি নিয়ে খেলা, আগুন নিয়ে খেলা চলবে না।  গত বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে 

ছাত্রদলের প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও করতে দেয়া হয় না। বিএনপি লাঠি নেয়ার আগেই আওয়ামী লীগের ‘কোমর ভেঙে’ গেছে। তারা ইতিমধ্যেই পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। কারণ, আওয়ামী লীগ এখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশে, শান্তিপূর্ণ মিছিলে, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠি, বন্দুক ও টিয়ার গ্যাস দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে। সে জন্য আপনারা (আওয়ামী লীগ) শুধু লাঠি নয়, ইতিমধ্যে রামদা, তলোয়ার এবং পুলিশের বন্দুকের ওপর হাঁটছেন।   

গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ডিএমপির পক্ষ থেকে সব ডিসিকে বলা হয়েছে কোনো সভা-সমাবেশে লাঠিতে পতাকা বেঁধে যেন আনা না হয়। কারণ লাঠি কোথাও পড়ে গেলে, তাতে জাতীয় পতাকার অবমাননা হয়। রাজনৈতিক মিছিল ও সমাবেশে লাঠি আনার প্রয়োজন নেই।  

গত মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক স্মরণ সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, একদলীয় শাসন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিএনপি’র কর্মসূচিগুলোতে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে খালি গায়ে গুলি করছে। এতো ব্যারিকেড, এতো হত্যাকাণ্ডের পরও সাধারণ মানুষ যেভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে, কারণ আজকে মানুষ জেগে উঠেছে ন্যায়ের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে তারা দাঁড়িয়েছে। পতাকার যে লাঠি সে লাঠি আরও লম্বা করতে হবে। লম্বা লাঠি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।  আঘাত এলে পাল্টা আঘাত করতে হবে মন্তব্য করে ২১শে সেপ্টেম্বর 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নেতাকর্মীদের মোটা বাঁশের লাঠি নিয়ে আন্দোলনে নামার পরামর্শ দিয়েছেন। মিরপুরে এক সমাবেশে তিনি বলেন, আপনারা যেভাবে জেগে উঠেছেন, এখন আপনারা যেমন পুলিশ দেখলে দৌঁড় দেন না, সামনে দাঁড়ান। এই সামনে দাঁড়ানোর কাজটা অব্যাহত রাখুন। আজ রাস্তায় আপনাদের হাতে পতাকাসহ লাঠি ছিল ছোটো ছোটো। এরপরে মোটা মোটা বাঁশের লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। প্রত্যেকের হাতে লাঠি থাকবে। কেন থাকবে? আমার আন্দোলনে-সংগ্রামে নেতাকর্মীদের আত্মরক্ষার জন্য। আঘাত আসলে তো পাল্টা আঘাত করতে হবে। ২৬শে সেপ্টেম্বর ঢাকার হাজারীবাগে এক সমাবেশে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, মার খেতে খেতে নেতাকর্মীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তারা আত্মরক্ষার্থে হাতে লাঠি নিয়েছে। ২৯শে সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, পুলিশ শুধু বিরোধী দলের লাঠি দেখেন অন্যদের লাঠি দেখছেন না। আওয়ামী লীগ লাঠি বহন করে সেটা দেখেন না? দেশে এখন এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখন বলা হচ্ছে লাঠি নিয়ে বের হওয়া যাবে না কিন্তু লাঠির মাথায় তো বাংলাদেশের পতাকা আছে। বাংলাদেশের পতাকা তো গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার প্রতীক। আপনারা কি পতাকা বহন করতে দেবেন না? লাঠির দিকে আপনাদের নজর কেন? পতাকার দিকে নজর নাই কেন?  

গত ২৭শে সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি লাঠিসোটা নিয়ে দলীয় কর্মসূচির নামে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। ওরা ঘোষণা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। লাঠি হাতে নিয়ে রাস্তায় নামে এবং চ্যালেঞ্জ করে। ওরা পায়ে পা দিয়ে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়।  

২২শে সেপ্টেম্বর নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির সাম্প্রতিক মিছিল-সমাবেশে কয়েকদিন ধরে দেখছি বিএনপি বাঁশের লাঠি, লোহার রড নিয়ে মিছিল করছে। তারা অতীতে জনগণ ও পুলিশের ওপর হামলা করেছে,  মুন্সীগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। ফলে সহজেই অনুমেয়, এখন তারা নিজেরা আতঙ্কিত এবং তারা আবার নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইছে। এ অবস্থায় আমাদের দলের কর্মীদের আমরা সতর্ক পাহারায় থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। যাতে কেউ যদি জনগণের ওপর হামলা করে, জনগণ প্রতিরোধ করলে সঙ্গে আমাদের দলও সহায়তা করবে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status