ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মত-মতান্তর

বিচ্ছেদে দায় কেবলই নারীর!

আইরিন আঁচল
২ অক্টোবর ২০২২, রবিবার
mzamin

বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ। এনিয়ে কতো আলোচনা-সমালোচনা। বিচ্ছেদ আবেদনে নারীরাই যেহেতু এগিয়ে তাই স্বভাবতই তীরটাও এসে পড়ে নারীর ঘাড়ে।  বিয়ে দিয়ে শুরু সংসার জীবন। অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে নতুন দম্পতি সাজান তাদের স্বপ্নের সংসার। ভালোবাসা, মান-অভিমান, দুঃখ-কষ্ট সবকিছুর সম্মিলিত কেন্দ্র সংসার। এভাবেই বছরের পর বছর হেসে খেলে দিন কাটান তারা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শহরকেন্দ্রিক দাম্পত্য জীবনে এসেছে পরিবর্তন। সংসার শুরুর পর অনেকের মাঝে দেখা দিচ্ছে সমস্যা। কেউ কাউকে বুঝে ওঠার আগেই ভেঙে যাচ্ছে সংসার।

বিজ্ঞাপন
তথ্যমতে, ঢাকায় দিনে ডিভোর্সের সংখ্যা ৩৯। যেখানে ২৪ ঘণ্টায় ১ দিন সেখানে ৩৯টি ডিভোর্সের আবেদন! অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী করা হয় নারীদের। ঠিকমতো সংসারে সময় না দেয়া, কিংবা আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিজেকে রাঙানোই যেন নারীদের মূল সমস্যা। এগুলো মানতে পারেন না অনেক অভিভাবকই। ফলস্বরূপ সংসারে শুরু হয় অশান্তি।  সময়ের পরিক্রমায় বদলেছে সবকিছু। শহরের নারীরা এখন অধিকাংশই চাকরীজীবী ও আত্মনির্ভরশীল। তারা যুদ্ধ করছেন প্রতিনিয়ত। আর তাতেই শুনতে হয়, সংসারে মন একেবারেই নেই! সারাদিন অফিসের ব্যস্ততায় ছুটোছুটির পর অনেকেই নারীর দিকে উড়নচণ্ডী বলে প্রশ্ন ছুড়ে দেন। অন্যদিকে বলা হয় পর্দানশীল নয়। আসলে সমস্যাটা পর্দা করা কিংবা না করার নয়। সমস্যাটা মন-মানসিকতার। বিয়ের সময় ছেলেপক্ষ খোঁজে শিক্ষিত, সুন্দরী, আধুনিক, পর্দানশীল, গালে টোল, ভুবন জয় করা হাসির রানীকে। কিন্তু সেই রানীই যখন এসে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদস্বরূপ জবাব দেন তখন পুত্রবধূ কিংবা স্ত্রী হয় গলার কাঁটা।  বিষয়টা এমন হয়ে গেছে, অন্যায় না মেনে প্রতিবাদ করলেই সে নারী অহংকারী। একই ঘরে থেকে ঘরের বউকে পর করে রাখবেন, পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে হেসে খেলে সময় কাটাবেন ও বউয়ের দোষ ধরবেন। আর বউ প্রতিবাদ করলেই বলবেন উগ্রবাদী, বদমেজাজি, মুখে মুখে তর্ক করে বেয়াদব। পাত্রপক্ষ বরাবরই চান ভদ্র পরিবার, বংশীয় নারী। আবার অনেকেই চান চাকরিজীবী মেয়ে। সেইসঙ্গে চান আশির দশকের বউদের মতো পরিপাটি গৃহিণী। এমন তো আসলে হয় না।  ২০১১ সালে ডিএনসিসিতে (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন) তালাকের আবেদন করা হয় দুই হাজার ৮৬৪টি। ডিএসসিসিতে (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন) করা হয় দুই হাজার ৭৮৬টি। পরের বছর দুই সিটিতে গড়ে তিন শতাধিক বেশি আবেদন জমা পড়ে। ২০১৯ সালে ডিএনসিসিতে তালাকের আবেদন করা হয়েছে ছয় হাজার ১৬৮টি, ডিএসসিসিতে ছয় হাজার ১২৪টি। এভাবে বিবাহবিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে মানসিক চাপসহ পারিবারিক বন্ধন কমে যাওয়াই দায়ী বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, আগের চেয়ে নারীরা স্বাবলম্বী, স্বাধীন মনোভাব, নারীদের উচ্চ বেতনে চাকরি, আর্থিকভাবে সচ্ছলতা, নির্যাতন সহ্য না করা এবং প্রতিবাদ করার মনোভাবের কারণে তালাকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির জনসংযোগ বিভাগ সূত্রমতে, ২০২০ সালে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসিতে ১২ হাজার ৫১৩টি তালাকের আবেদন করা হয়েছে। অর্থাৎ মাসে গড়ে এক হাজার ৪২টির বেশি, যা দিনে গড়ে ৩৫টি, ঘণ্টায় একটিরও বেশি। সমাজ বিজ্ঞানী ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের মতে, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন, ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা, উচ্চাবিলাসী মনোভাবের করণে এখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোও সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পেছনে কাজ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে দুইজনের মধ্যে অবিশ্বাসের জন্ম নেয়। এতে করে তালাকের মতো ঘটনা ঘটে। এবার আশা যাক বাস্তব উদাহরণে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বসবাস রিমি ও খলিল রহমান দম্পতির। পছন্দ থেকে বিয়ে। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় যারা নিজেদের মতভেদকে প্রাধান্য দিয়ে দাম্পত্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন। পারিবারিক অশান্তির একপর্যায়ে তারা এই কঠিন সিদ্ধান্তটি নেন। রিমি জানান, তার স্বামী একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করতেন। অফিসে এক নারী কলিগের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক তৈরি হয়। আর আমি শিক্ষক। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আমাকে বাইরে থাকতে হয়। ঠিকমতো বাসায় কাজ বা সময় দিতে পারতাম না। প্রথম দিকে আমার স্বামী সব মেনে নিলেও বিপত্তিটা বাধে বছরখানেক পরে। তখন আমাকে নানাভাবে অত্যাচার শুরু করে। অনেক পরিবর্তন আসে সে সময়টায়। অন্যদিকে আমার শ্বশুর-শাশুড়িও আমাকে হেয় করে কথা বলে। সুযোগ পেলেই কথা শোনাতে ছাড়তেন না। দিন দিন অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগলো। আমি প্রতিবাদ করলেই তালাকের কথা শুনিয়ে দিতেন। কিছুদিন পর নিজেই সিদ্ধান্ত নিলাম তালাকের। এ শহরে এমন পরিস্থিতির শিকার রিমি শুধু একা নন! শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য রিমি। যারা শুধুমাত্র অন্যায় মানার স্থানে মেনে নিয়েছে তালাককে। কারণ রিমিরা এখন প্রতিবাদী। আত্মনির্ভরশীল। কোনো অংশে তারা আর পিছিয়ে নেই।

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

   

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবদলই সরকার সমর্থিত / ভোটের মাঠে নেই সরকারি দলের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো বিরোধীদল

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status