শেষের পাতা
আইনের মধ্যে থেকেই র্যাব কাজ করে- র্যাব ডিজি
স্টাফ রিপোর্টার
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবারআইনের মধ্যে থেকেই র্যাব কাজ করে বলে দাবি করেছেন র্যাবের বিদায়ী মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। বলেন, র্যাব আইনের সীমা অতিক্রম করে না। দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কেন দাঁড়াবো। যেখানে প্রয়োজন কেবল সেখানেই শক্তি প্রয়োগ করা হয়। মাঝেমধ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। তবে কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে, দায়ী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আসছে ৩০শে সেপ্টেম্বর পুলিশ মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব নিতে যাওয়ার আগে গতকাল সকালে ঢাকার কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের বর্তমান আভিযানিক কার্যক্রম এবং যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি খোলাখুলি কথা বলেন। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গত ডিসেম্বরে র্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর।
র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক পুলিশের বিদায়ী আইজিপি বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র্যাবের বিদায়ী মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নামও সেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে। সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, গত আড়াই বছরে তিনি র্যাবে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করেছেন। র্যাব আইনানুগ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে কাজ করে। কাজ করতে গিয়ে র্যাব বাধা হয়ে দাঁড়ালে অপরাধীরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। অপরাধীরা র্যাবকে প্রতিহত করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটায়। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। সে ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। ম্যাজিস্ট্রেট আসেন। কেউ নিহত হলে অভিজ্ঞ ময়নাতদন্তকারী লাশের ময়নাতদন্ত করেন। যেখানে যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকুই আমরা শক্তি প্রয়োগ করি। একটা লোক দৌড় দিলো, ধাক্কা দিলো, তাকে গুলি করে দিতে হবে? সিচুয়েশন যা ডিমান্ড করে, সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তিনি বলেন, আমরা আইনানুগ প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে দায়িত্ব পালন করি। অপরাধীরা যে কতো কুখ্যাত তাদের সামনে যা আসে, সব বাধা উপেক্ষা করে তারা অপরাধ সংঘটিত করতে চায়। আমরা যখন তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াই, তখন অপরাধীরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে অপরাধ সংঘটিত করতে চায়। বিভিন্ন অভিযানে তাদের সমস্যরাও আহত হন, প্রাণহানি-অঙ্গহানিও ঘটে।
যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের চিকিৎসা আমরা করেছি। আমাদের দায়িত্ব চ্যালেঞ্জিং, যে কারণে আমার অনেক সহকর্মী চাকরি পর্যন্ত হারায়। আমি বিশ্বাস করি, আগামীতেও র্যাবের প্রতিটি সদস্য সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। তিনি আরও বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কেবল র্যাবের নয়, কেবল বাংলাদেশেরও নয়; বিশ্বজুড়েই এ যুদ্ধ চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজের কারণে কারাগারে যেসব আসামি, তার বেশির ভাগই মাদকের। প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের পর যেখানেই মাদক, সেখানেই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মাদকের বিস্তার বন্ধে সচেতনতা দরকার সবার ঘর থেকেই। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, সেটার খেয়াল রাখতে হবে অভিভাবকদের। ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই একটার সঙ্গে আরেকটা জড়িত। এটা বন্ধে কাজ করছি। মাদক নিয়ন্ত্রণে নেই এটা বলার অবকাশ নেই। যেখানেই খবর পাচ্ছি, সেখানেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা যদি মাদকের বিরুদ্ধে ব্যর্থই হতাম, তাহলে কারাগারে এত মাদকের আসামি থাকতো না। সবাই সোচ্চার হলে অচিরেই মাদকমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা দেখতে পাবো বলে বিশ্বাস করি।
বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দমনে পুলিশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের যে ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে সে বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি জানান, নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করে। বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করা হয়। কারও বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেবো। আমি মনে করি, অতীতে যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পেরেছি, তেমনি অভিজ্ঞতার আলোকে আগামীতেও আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ার কমে গেছে বিষয়টি নিষেধাজ্ঞার কোনো প্রভাব কিনা অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, যেখানে প্রয়োজন হয়, বাহিনী আক্রান্ত হলে সেখানে শক্তি প্রয়োগ করা হয়। মাদক-অস্ত্র উদ্ধারে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির আলোকে ব্যবস্থা নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, র্যাবের অপারেশন বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল জিয়া ও র্যাব-২ এর অধিনায়ক আবু নাঈম তালাত প্রমুখ।