ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

কায়দা করে টিকে থাকার লড়াই

নাজমুল হুদা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার

মাটির চুলায় টগবগ করে ভাত ফুটছে। আকলিমা বেগম বসে বসে রান্না করছেন। তার রান্নাঘরটা জরাজীর্ণ। বৃষ্টি হলে টপটপ করে পানি পড়ে। পাশেই ১১টা গরু বাঁধা। গরুঘর আর রান্নাঘর একই ছাউনিতে। গরুগুলোকে গোসল করিয়ে দিচ্ছেন আকলিমার স্বামী শরীফ মিয়া। চিত্রটা প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ জনজীবনের মতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটি ঢাকায় বসবাসরত একটি পরিবারের চিত্র। রাজধানীর সবুজবাগ থানাধীন মানিকদিয়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।

বিজ্ঞাপন
তাদের পূর্বপুরুষরাও এখানেই বাস করতেন। সবাই কৃষিকাজ করতেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখন এলাকাটিতে আগের মতো কৃষিজমি নেই। অধিকাংশ পরিবার বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত হলেও শরীফ মিয়া কৃষিকাজই ধরে রেখেছেন। 

শরীফ মিয়ার জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘর রয়েছে। ঘরের দুয়ারের সামনেই রান্নার চুলা। আর পাশেই ১১টা গরু রাখা। এসব গরু ৩টি পরিবারের। এরমধ্যে শরীফ মিয়ার ২টা গরু ও ২টা বাছুর। গরু ২টার মধ্যে একটা প্রতিদিন ৮-১০ কেজি দুধ দেয়। তা ৪৫০-৫৫০ টাকা বিক্রি করতে পারেন। তবে বাছুরসহ ৪টা গরুর জন্য তার প্রতিদিন ৬০০ টাকার মতো খরচ হয়। শরীফ বলেন, গাইয়ের দুধ বেচে কোনো লাভ হয় না। আরও নিজের কামাই থেকে টাকা ভরে খাওন কিনতে হয়। বাছুর বড় হওয়ার পর বেচলে যা লাভ হয় তাই থাকে। এছাড়া আর কোনো লাভ নাই।

শরীফ মিয়া ছোট একখণ্ড জমি বর্গা নিয়ে সেখানে চাষাবাদ করেন। এর জন্য জমির মালিককে ২ হাজার টাকা দেন। বছরে ৬ মাসই সেই জমি পানিতে তলিয়ে থাকে। বাকি ৬ মাস ফুলকপি, টমেটো, লালশাক, লাউশাক অথবা বিভিন্ন ধরনের শাক চাষ করেন। কিন্তু একখণ্ড জমিতে চাষাবাদ করে ৬ মাসে তার মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা আয় হয়। আর বছরে একটা বাছুর বিক্রি করলে সেখান থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকা পান। বর্ষার সময় ফসল করতে না পেরে নৌকা দিয়ে মানুষ পার করেন। এতে তার প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকা আয় হয়। এই আয়েই টেনেটুনে সংসার চলে। শরীফ মিয়ার স্ত্রী আকলিমা বেগম জানান, বর্ষার সময় তাদের বেশি কষ্ট হয়। তখন ক্ষেতে চাষ করা যায় না। শুধু নৌকা চালাতে হয় আর গরু দেখতে হয়। ক্ষেতে শাক-সবজি বুনলে রান্নার জন্য বাজার কম করা লাগে। খরচ কমে যায়।

শরীফ মিয়ার পরিবারে মা, স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ ৬ জন একসঙ্গে থাকেন। তাদের সংসারের খরচ একাই বহন করেন তিনি। এরমধ্যে ২ সন্তান লেখাপড়া করেন। তাদের লেখাপড়ার জন্য প্রতিমাসে ২-৩ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিমাসে ৮-১০ হাজার টাকার বাজার খরচ হয়। এছাড়া তাদের রান্না করার জন্য প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকার লাকড়ি কিনতে হয়। পানির জন্য প্রতিমাসে ৩০০ টাকা ওয়াসাকে দিতে হয়। বিদ্যুৎ বাবদ দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। তবে তাদের দিন দিন সাংসারিক খরচের খাতা কেবল বাড়ছেই। আকলিমা বেগম বলেন, এখানে অবৈধ গ্যাসের লাইন ছিল। এখন তা কেটে দিছে। তাই লাকড়িতে রান্না করতে হয়। খরচ বাড়ছে। মাসে ৩ হাজার টাকা শুধু লাকড়ির জন্যই লাগে। 

ঢাকায় কৃষিকাজ করে সংসারের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারটিকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কেবল নাভিশ্বাস বাড়ছেই। শরীফ মিয়া বলেন, ঘরভাড়া লাগে না দেখে বাঁইচা গেছি। নইলে এত খরচ দিয়া কেমনে সংসার চালাইতাম। এখন কষ্ট করে চলতাছি। কিন্তু জিনিসপত্রের দামতো বাড়তাছে। শরীফ মিয়ার সীমিত আয় দিয়ে যেখানে খেয়ে বাঁচাই কঠিন সেখানে সঞ্চয় করার জোঁ নেই। আক্ষেপ করে বলেন, যা ইনকাম হয় তাই খরচ হইয়া যায়। একটা টাকাও থাকে না। ঘরটা অনেক পুরান। নতুন কইরা ঘর দিতে পারতাছি না। অনেক টাকা লাগবো। কিন্তু এখন কোনো টাকাই নাই। টাকা জমামু তারও উপায় নাই। চাইল-ডাইল কিনতেই তো সব শেষ হইয়া যায়।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status