প্রথম পাতা
ঢাকায় চীনের ৭৩তম বার্ষিকী উদ্যাপন
যে ইস্যুতে একসুর ফখরুল-মান্নানের
তারিক চয়ন
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবারবর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে ঢাকায় গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৩তম বার্ষিকী উদ্যাপিত হলো। ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস শনিবার পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের আতিথেয়তায় সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশদ্বারে আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানানোর পর দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানোর মাধ্যমে মূল পর্ব শুরু হয়। রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জানান, চীন যেকোনো স্নায়ুযুদ্ধ মানসিকতা, দলবদ্ধ বিরোধ কিংবা একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করে। চলমান পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশটি নিজস্ব সমাধান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকা-বেইজিংয়ে দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ-চীন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যথেষ্ট মজবুত এবং সেটা চিরকাল তেমনই থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফখরুল-মান্নানের কণ্ঠে অভিন্ন সুর
বাংলাদেশ ‘এক চীন নীতি’র প্রতি সম্মান জানায় নিশ্চিত করে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে চীনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বলেন, ‘চীন আমাদের উন্নয়ন সহযোগী ও বড় বন্ধু। আমরা চীনের কাছ থেকে উন্নয়ন শিখতে পারি। করোনা সংকটে টিকা দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছে চীন।
রাজনীতিবিদ-কূটনীতিক সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন
চীনের ৭৩তম বার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সাংবাদিক, গবেষক, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক, ব্যবসায়ী সহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রাজনীতিবিদদের মধ্যে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন; বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল; বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। কূটনীতিকদের মধ্যে বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান ছাড়াও ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ও অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন ছাড়াও বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকার আমন্ত্রিত সম্পাদক ও সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগের আহ্বান
শনিবার একই সেন্টারের ভিন্ন মিলনায়তনে আয়োজিত পৃথক অনুষ্ঠানে (চায়না-বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ কো-অপারেশন ফোরাম ২০২২) পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বর্তমান বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চীনকে এ দেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। চীনকে বাংলাদেশের ‘পুরনো বন্ধু’ উল্লেখ করে তিনি অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলেও চীনকে বিনিয়োগের পাশাপাশি আরও কম সুদে ঋণ দেয়ার আহ্বান জানান। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি বৃত্তির ব্যবস্থা করতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সাংস্কৃতিক সামঞ্জস্য কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও কাছাকাছি এনে দিয়েছে।’ অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ছাড়াও দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহবুব-উজ জামান, বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট গাজী গোলাম মুর্তজা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চীন বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মাহবুব-উজ জামান বলেন, ‘বাংলাদেশকে চীন ৯৯ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। এলডিসিভুক্ত দেশ হওয়ার পরেও বাংলাদেশকে যেন এই সুবিধা দেয়া অব্যাহত থাকে সেজন্য তিনি চীনকে অনুরোধ করেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশে চীনা ব্যাংক খোলার দাবি জানান গাজী গোলাম মুর্তজা।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বললেন, আগে এমন দর্শক দেখা যেতো না
শনিবার বেলা ৩টায় একই সেন্টারের ভিন্ন মিলনায়তনে চীন দূতাবাস এবং ইউনান প্রাদেশিক সরকারের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগ আয়োজিত ‘কালারফুল ইউনান’ শীর্ষক এক বর্ণাঢ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীতে ইউনান প্রদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক দৃশ্য, খাদ্যসামগ্রী পরিচয় তুলে ধরা হয়। সেখানকার সব ফুল ইউনান থেকে আনা হয়। অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইয়োবো, চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. মো. নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশে ইউনান কমার্শিয়াল রিপ্রেজেনটেটিভ অফিসের পরিচালক লি সিয়াও বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, চীনের ইউনান প্রদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ অনেক ঐতিহ্যবাহী। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী ইউনানে আছেন। ইউনান প্রদেশ ও বাংলাদেশের মধ্যে আরও বেশি বিনিময় প্রয়োজন যা দুই দেশের পর্যটনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও সাংস্কৃতিক খাতকে সমৃদ্ধ করবে। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ তার বক্তব্যে চীনের দূতাবাস আয়োজিত অতীতের অনুষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এবারের অনুষ্ঠানের তুলনা করে জানান, এখন এই অনুষ্ঠানে যেসব দর্শক দেখা যাচ্ছে নিকট অতীতেও এমন দর্শক দেখা যেতো না।