প্রথম পাতা
বাংলাদেশের জাতীয় সংকটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন একজন অবসরপ্রাপ্ত নৌ কর্মকর্তা
শান্তনা রহমান
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, রবিবার
মর্টার হামলা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা করার প্রতিবাদ জানিয়ে একাধিকবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে বাংলাদেশ। এর পরপরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার গাড়ির কাছে দৌড়ে ছুটে যেতে দেখা গেছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে। দৃশ্যটি মজার ছিল। কিন্তু মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড মোটেই মজার নয়। যুক্তিসঙ্গতভাবে মিয়ানমারের কাছে অনেক কিছুর জবাব ছিল। তবে রাষ্ট্রদূতের দৌড়ে যাওয়ার কারণ অন্য। তিনি মিডিয়াকে এড়াতে চেয়েছিলেন। মিয়ানমার বাংলাদেশে সামরিক হামলা চালিয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বিশ্বের অন্যতম নির্মম সশস্ত্র বাহিনী, যারা প্রশিক্ষিত। রাখাইন, শান, কারেন্স এবং কাচিনদের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন থামাতে লড়াই করে আসছে অনেকদিন।
এর পর থেকে ১২ বছর কেটে গেছে। কিন্তু উপসাগরে কোনো গ্যাস বা তেলক্ষেত্র আবিষ্কারের কথা শোনা যায়নি। তাতে কি? এই বিশেষজ্ঞের ভাগ্য আকাশচুম্বী হয়েছে। তিনি এখন বেসামরিক আমলাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদমর্যাদা ভোগ করেন, সরকারের একজন সচিবের মতো। লক্ষণীয় যে, মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের মতো তার চাকরি থেকে অবসর নেয়া নির্ভর করছে তার নিজের সিদ্ধান্তের উপর। রিয়ার এডমিরাল (অব.) খুরশিদ আলমকে দেয়া এই সুবিধাগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই যুক্তি দিয়ে রেহাই পেতে পারতো যে, তার নিয়োগ ও চাকরির সময়সীমা কারও জন্য ক্ষতিকর নয়। বিদেশ মন্ত্রণালয় এই নৌ কর্মকর্তাকে যে সুবিধা দিয়েছে তা রক্ষা করার জন্য এই যুক্তিগুলো যদিও অকার্যকর। কারণ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রতিবাদ নোটটি হস্তান্তরের বিষয়টি এই সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অপ্রস্তুত ছিল। বিশেষত, এই সময়ে যখন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে মিয়ানমার উসকানি দিয়ে চলেছে। এটা সম্ভবত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত দেশটির সামরিক বাহিনীর উসকানিমূলক তৎপরতা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে তার সরকারকে অবহিত করতেই মিডিয়াকে এড়িয়ে গাড়িতে দৌড়ে উঠতে চেয়েছিলেন। জাতীয় সংকটের এমন একটি মুহূর্তে অবসরপ্রাপ্ত এই নৌ কর্মকর্তার কাছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিয়ে এবং মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাঠিয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে কোনো বার্তা কি দিতে পেরেছে? আগে যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়টি পেশাদারভাবে পরিচালিত হতো তখন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি অলিখিত নির্দেশিকা ছিল। যদি সে সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিদলে থাকতেন তখন পররাষ্ট্র সচিব প্রতিনিধিদলের অংশ হতেন না। এই নির্দেশিকাটির পেছনে নীতিটি ছিল সাধারণ পরিস্থিতিতেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাতে পেশাদার নেতৃত্ব ছাড়া অন্য কারও হাতে না থাকে তা নিশ্চিত করা। যদিও মিয়ানমার থেকে যুদ্ধের বর্তমান উসকানি অনেকটাই ব্যতিক্রমী। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে এতদিন বিদেশে থাকার জন্য জাতীয় নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করেছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিদলে তার বা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্থানীয় কারও থাকার কোনো বিশেষ প্রয়োজন ছিল না। প্রধানমন্ত্রী তাদের ছাড়াই সফর করতে পারতেন। কারণ, বর্তমান মুহূর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকলের চেয়ে তার অনেক বেশি কূটনৈতিক দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে। একজন অবসরপ্রাপ্ত নৌ-কর্মকর্তার হাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেটা করেছেন, তা নিয়ে অনেক কথাই বলা যায়। বাংলাদেশের অগুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি না দেখালেও পারতেন। এটা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন বা যা করেছেন তাতে কী লাভ হয়েছে জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কমেডির উপাদানে পরিণত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে তিনি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বলে অভিহিত করেন। সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহতদের উল্টো সেখানে থাকার জন্য দায়ী করেন। তিনি একইভাবে বিএসএফকে বাংলাদেশিদের হত্যার জন্য দায়ী না করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সংবেদনশীল দ্বিপক্ষীয় সমস্যাটিকে তুচ্ছ করে তুলেন। অতি সম্প্রতি ক্ষমতার পালাবদল যাতে না ঘটে সে জন্য শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ভারতের সহযোগিতা কামনা করেন। এটা এক অদ্ভুত কূটনৈতিক প্রয়াস। এটি নয়াদিল্লিও নিতে পারেনি। এটা ভারতের জন্য আত্মসম্মানেরও একটা বিষয়। যা গভীরভাবে ভারতকে বিব্রত করেছে। ভারতের দ্য স্টেটসম্যান 'A storm that could hurt ties' শিরোনামে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ভারতের কাছে তার বুদ্ধিহীন ও অমার্জিত আবেদনের জন্য চিহ্নিত করেছে। বলেছে, তার আবেদন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে নয়াদিল্লির পায়ের কাছে এনে ফেলেছে। স্টেটসম্যান ভারতের প্রতি মন্ত্রীর আবেদনকে ‘খুবই ভুল সংকেত এবং সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য’ বলে অভিহিত করেছে। প্রধানমন্ত্রীকেই এখন পরিস্থিতি সামলাতে হবে। কারণ তার মন্ত্রী অন্য কোনো বিকল্প রাখেননি। প্রধানমন্ত্রী এ সম্পর্কে কী ভাবছেন জানা যায়নি। তবে এটা বলাই যায়, ড. মোমেনের মতো বন্ধু থাকলে আর শত্রুর প্রয়োজন হবে না।
মন্তব্য করুন
প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন
প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত
ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রতিক্রিয়া/ কেবল নির্বাচনে প্রভাব নয় ভাগ্যও নির্ধারণ করবে

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]