অনলাইন
‘মায়ের লাশের’ সন্ধানে ছুটছেন মরিয়ম
অনলাইন ডেস্ক
(২ বছর আগে) ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবার, ১২:০৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৬:৪৮ অপরাহ্ন

খুলনার দৌলতপুরের বণিকপাড়া থেকে নিখোঁজ রহিমা খাতুনের (৫৫) লাশ পেয়েছেন জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে মরিয়ম মান্নান ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি জানান।
এরপর আজ শুক্রবার সকালে লাশ শনাক্ত করতে ময়মনসিংহ যাবার কথা ফেসবুকে লেখেন তিনি। তিনি লেখেন- ময়মনসিংহ, ফুলপুর যাচ্ছি। আমার হতভাগিনী মা’য়ের পঁচা গলা লাশ অফিসিয়ালি বুঝে নিতে। আমার সাংবাদিক ভাইবোন এবং আমার বন্ধু, আমার শুভাকাঙ্খীদের সাথে কথা বলবো এবং প্রশাসনিক সকলের সকল প্রশ্নের উত্তর আমি দিবো আমার মায়ের লাশ অফিসিয়ালি আমার হাতে পাওয়ার পরে। কিভাবে আমার মায়ের লাশ আমি খুঁজে পেলাম সেই গল্পও আপনাদের শুনাবো, একটু সময় আমাকে দয়া করে দিন।
তিনি আরও লেখেন- আমার মায়ের চুল, আমার মায়ের কপাল, আমার মায়ের হাত আমি চিনবো নাতো কে চিনবে!
এরপর আরও একটি পোস্ট করেন তিনি। যাতে লেখেন- যারা যারা বলেছিলেন আমার মা আত্মগোপন করেছেন তারা সবাই নাক ঢাকার জন্য ব্যবস্থা করুন কারন আমার মার পঁচা গলা আর পোকায় খাওয়া লাশটা নিয়ে আমি আপনাদের কাছে সবার আগে যাবো!
এরআগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে একটি পোস্ট দেন তিনি তিনি। তাতে লেখেন- আমার মায়ের লাশ পেয়েছি আমি এই মাত্র। এর ঘণ্টাখানেক পর আরেক পোস্টে লেখেন- আর কারও কাছে যাবো না। কাউকে আর বলবো না আমার মা কোথায়। কাউকে বলবো না আমাকে একটু সহযোগিতা করুন। কাউকে বলবো না আমার মাকে একটু খুঁজে দেবেন। কাউকে আর বিরক্ত করবো না। আমি আমার মাকে পেয়ে গেছি।
তবে থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ই সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছিল ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে ফুলপুর থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছেন মরিয়ম। এ সময় অজ্ঞাত ওই নারীর পোশাকের কয়েকটি ছবি মরিয়মকে পাঠান ওসি। ওই পোশাক দেখেই অজ্ঞাত নারীর লাশকে মায়ের বলে দাবি করেন মরিয়ম। এ নিয়ে মরিয়ম ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে ওই লাশটি মরিয়মের মায়ের কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি ফুলপুর থানার ওসি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, গত ১০ই সেপ্টেম্বর সকালে থানার বহরদার বাজার থেকে অজ্ঞাত এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই নারীর বয়স ৩০ কিংবা ৩২ হবে। দাবিদার না থাকায় দুদিন পর ১২ই সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত হিসেবে লাশটি দাফন করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ডিএনএ টেস্ট করতে প্রয়োজনীয় আলামতও সংরক্ষণ করেছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমাকে কল করেছেন মরিয়ম। তখন উদ্ধারকৃত নারীর পোশাক ও আলামত সম্পর্কে জানতে চান। পোশাক ও উদ্ধারকৃত আলামতের কথা শুনে নিজের মায়ের লাশ বলে দাবি করেন। এ অবস্থায় আমি তাকে বলেছি, শুক্রবার সকালে থানায় এসে উদ্ধারকৃত লাশের সঙ্গে পাওয়া আলামত ও পোশাকগুলো দেখে তারপরই যেন লাশ শনাক্ত করে। চূড়ান্তভাবে লাশ শনাক্তে আমরা মরিয়মের ডিএনএ টেস্ট করাতে পারি।
পিবিআইয়ের খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, বস্তাবন্দি যে নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ওই থানার ওসি আমাদের জানিয়েছেন, তার বয়স ৩২ উল্লেখ করে দাফন করা হয়েছে। তবে তার ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করেছে পুলিশ। আমরা নিশ্চিত নই যে, ফুলপুরে যে নারীর লাশ পাওয়া গেছে তা মরিয়মের মায়ের। কারণ মরিয়মের মা রহিমা খাতুনের বয়স ৫৫ বছর। যদি তার মেয়ে পোশাক দেখে লাশ শনাক্ত করেও থাকেন এরপরও ডিএনএ টেস্ট করে প্রকৃতভাবে লাশ শনাক্ত করতে হবে। কারণ মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।
উল্লেখ্য, গত ২৭শে আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নামেন রহিমা খাতুন। এরপর আর তিনি বাসায় ফেরেননি। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা নিচে নেমে ব্যবহৃত স্যান্ডেল, ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতেও মাকে না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় তার স্বামীসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১৪ই সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।