মত-মতান্তর
জীবিত পারপিতারা কেমন আছেন?
পিয়াস সরকার
(৬ মাস আগে) ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবার, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৩:১৮ অপরাহ্ন

চলে গেছে পারপিতা ফাইহা। পারপিতা রাজধানীর স্বনামধন্য হলিক্রস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল। নবম শ্রেণির এই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা নিয়ে হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। হয়েছে তদন্ত কমিটি। কমিটি প্রকাশও করেছে তাদের রিপোর্ট।
আগে দেখে নেয়া যাক পারপিতা নামের অর্থ কি? পারপিতা নামের অর্থ জ্ঞান পরাকাষ্ঠা। পরাকাষ্ঠা অর্থ চরম সীমা বা চূড়ান্ত। কিন্তু পারপিতা কতোটুকু জ্ঞান আহরণ করলেন সবেতো নবম শ্রেণি। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। তাতে বলা হয়, আট মাসে আত্মহত্যা করেছেন ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী। অর্থ্যাৎ প্রতিদিন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন দেড়জন শিক্ষার্থী।
পারপিতা দেশসেরা একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। পারপিতা যখন নিজেকে শেষ করে দেবার পরিকল্পনা করেন তখন গায়ে ছিল দেশ সেরা প্রতিষ্ঠানের পোশাক। ১২ তলার ছাদ থেকে লাফ দেয়। রক্তাক্ত হয় পোশাক। যে রক্তের প্রতিটি কণায় ছিল অভিমান, অভিযোগ। এই শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে চোখ দেয়া যাক। এতে বলা হয়েছে- কঠিন প্রশ্নপত্র প্রণয়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনে ভীতি সঞ্চার করে কৌশলে শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা হতো।
আবার তদন্তকারীদের পারপিতার মা বলেন, শোভন স্যার (শিক্ষক শোভন রোজারিও) তার কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য অভিভাবকদের ফোন করতেন এবং প্রশ্নপত্র কঠিন করে প্রণয়ন করতেন, যেন শিক্ষার্থীরা তার কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হয়।
রাজধানী ঢাকা। যাদুর এ শহর রাজনীতির শহর, অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র, অফিস আদালতের শহর। আবার শহরটা শিক্ষার শহরও। এই শহরে সবই মেলে। কিন্তু মেলে না খেলার মাঠ, অবকাশের সুযোগ। পারপিতাদের টিউশনির বাইরে মেলে না নিজেকে দেবার মতো একমুঠো সময়। এই শহরে প্রতিটি ধুলিকণায় মিশে থাকে পারপিতারদের হতাশার গল্প। স্কুল মানেই যেন একটা বদ্ধ কারাগার।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল একটি অনুষ্ঠানে বললেন- দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে এক একটি আনন্দ নিকেতন। তাইতো হবার কথা। তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিভাবে একজন শোভন স্যার মানসিক নির্যাতন করেন। প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে কিভাবে করেন কঠিনতম প্রশ্ন। শোভন স্যাররা কি নিজেকে আয়নায় দেখেন না। তাদের সন্তান সমতুল্য শিক্ষার্থীদের ফেলে দেন এহেন মানসিক চাপে।
তদন্ত প্রতিবেদেনের একাংশে বলা হয়- উচ্চতর গণিত বিষয়ের দ্বিতীয় অংশের প্রশ্নপত্র এতটাই কঠিন ছিল, যা একজন শিক্ষকের পক্ষেও বোধগম্য হওয়া কঠিন। বোর্ডের প্রশ্নপত্র প্রণয়নের নীতিমালা অনুসরণ করে উচ্চতর গণিতের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি? এই প্রশ্ন করায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছিল তুলকালাম কাণ্ড। ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী এই প্রশ্ন করায় হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন তিনি। এখন শোভন স্যারদের প্রশ্ন করতে চাই- বিদ্যালয়ের কাজটা কি?
আগস্টে মৃত্যু হয় পারপিতার। যে মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। এখন জীবিত পারপিতাদের জন্য চাই সুস্থ পরিবেশ। যেখানে শোভন স্যাররা করবেন শোভনীয় আচরণ। আর অভিভাকদের বলতে চাই- চাপ কমিয়ে ফেলুন সন্তানের ঘাড় থেকে। ভালো শিক্ষার্থী হবার থেকে নিশ্চয়ই সুস্থ সবল, ভালো মানুষ হওয়াটা বেশি জরুরি।