ঢাকা, ৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শরীর ও মন

ত্বকে সোরিয়াসিস হলে

ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবার
mzamin

এক ধরনের জটিল চর্মরোগ  সোরিয়াসিস, যা অবশ্যই নিয়মিত ও সঠিক চিকিৎসা করতে হয়। জটিল চর্মরোগ সোরিয়াসিস সোরিয়াসিস একেবারে নির্মূলযোগ্য রোগ নয়, তবে চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণযোগ্য। শরীরের বিভিন্ন স্থানে সোরিয়াসিস হতে পারে। তবে মাথা, জিহ্‌বা বা লিঙ্গের অগ্রস্থান বা অগ্রত্বক, অণ্ডকোষের থলে, পিঠের ওপরের অংশ থেকে নিচের অংশ, ঘাড়, হাতের কনুই, আঙুল, তালু, পিঠ, নখ ও তার আশপাশে; পায়ের তালু, হাঁটু, হাত-পায়ের জয়েন্টে এটি বেশি দেখা যায় এবং এসব স্থান থেকে ক্রমাগত চামড়া বা আবরণ উঠতে থাকে। মানব ত্বকে বিভিন্ন প্রকারের সোরিয়াসিস দেখা যায়। যেমন-   

পেক সোরিয়াসিস: 

এটি লালচে প্রদাহজনিত এক ধরনের সোরিয়াসিস, যাতে সিলভার বা সাদা রঙের মতো আবরণ বা আঁশ ওঠে। সাধারণত হাতের কনুই, হাঁটু, মাথা ও পিঠের নিচের দিকে এই সোরিয়াসিস দেখা যায়। ইনভার্স সোরিয়াসিস : সাধারণত লালচে রঙের হয়, যার কোনো আবরণ থাকে না। অনেকটা মসৃণ ওচকচকে ধরনের হয়। ঘর্ষণ, চুলকানি ও ঘামের কারণে যন্ত্রণা হতে পারে। সাধারণত মোটা চামড়ার গভীর ভাঁজযুক্ত ব্যক্তিদের এই সোরিয়াসিস বেশি হয়। ইরিথ্রোডার্মিক সোরিয়াসিস :এটিও লালচে রঙের হয়, যা দেহের পুরো স্থানজুড়ে  দেখা যায়। চামড়া উঠতে থাকে, প্রচণ্ড চুলকানি হয়। গাট্টেট  সোরিয়াসিস : সাধারণত শিশু বা যুবক বয়সে দেখা দেয়। এটিও লাল ছোট ছোট স্পটের মতো হয়। পেক সোরিয়াসিসের মতো এতেও আবরণ ওঠে। এ ধরনের সোরিয়াসিসে ঊর্ধ্ব শ্বাসতন্ত্রের অসুস্থতা, স্ট্রেপটোকক্কাল প্রদাহ, টনসিলে প্রদাহ ইত্যাদি কিছুদিন অনুপস্থিত থেকে আবারো ফিরে আসতে পারে বা পেক সোরিয়াসিসে রূপান্তরিত হতে পারে। 

পাস্টুলার সোরিয়াসিস : 

এটা হলে চামড়া লাল হয়ে যায়, শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে সাদা পুঁজ বা ফোসকা  তৈরি করে, আবরণ উঠতে থাকে। চারদিকে লালচে ধরনের চামড়া থাকে। তবে এটি ত্বরিত ছড়ায় না এবং সহজে অন্যকে সংক্রমিতও করে না। 

সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস:

 এটা শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট আক্রান্ত করতে পারে। হাতের আঙুলের ছোট ছোট জয়েন্ট আক্রান্ত হতে পারে এবং হাত বিকৃতও করতে পারে। 

যেসব লক্ষণ দৃশ্যমান :

 শরীরের কিছু নির্দিষ্ট জায়গা, যেমন- কনুই, হাঁটু, হাত-পায়ের তলা, মাথা, পিঠ ইত্যাদি স্থান থেকে সাপের মতো চামড়া বা খোলস উঠে যায়। মাথা থেকে খুশকির মতো উঠতে থাকে। তা ছাড়া উল্টো জায়গাগুলো, বিশেষ করে শরীরের ভাঁজের মধ্যে বেশি হয়। কারণসমূহ: সোরিয়াসিস হওয়ার পেছনে বহুবিধ কারণ লক্ষ করা যায় তাই একে ‘মাল্টিফ্যাক্টরিয়ান’ বলা হয়ে থাকে।  নিম্নে কারণসমূহ তুলে ধরা হলো : 

স্থূলতা :

 ওজন বেড়ে গেলে সোরিয়াসিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে বা এই রোগ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। 

বংশগত : 

পরিবারের কারও সোরিয়াসিস হলে অন্যদেরও হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কারও যদি পিতা-মাতা উভয়ের হয়, তবে এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।  ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ : ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণের কারণে সোরিয়াসিস হতে পারে। 

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া :

 কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া  যেমন- উচ্চ রক্ত চাপের ওষুধ বিটা বকার, ব্যথার ওষুধ এনএসএআইডি (নন- স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগ), মানসিক রোগীর ওষুধ লিথিয়াম, মুখে খাওয়ার স্টেরয়েড ইত্যাদি ওষুধের ব্যবহার রোগকে জটিল করতে পারে বা বাড়িয়ে দিতে পারে। 

মানসিক চাপ : 

অতিরিক্ত টেনশন দেহের ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ সোরিয়াসিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়। 

খাদ্যাবাস :

 লাল মাংস, বিশেষ করে গরু ও খাসির মাংস বেশি খেলে হতে পারে। ধূমপান, অতিরিক্ত 

মদ্যপান : 

ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপানের প্রভাব পড়তে পারে সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল : যদি কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে, তাহলে সোরিয়াসিস রোগীদের হার্টের সমস্যা বেশি হতে পারে। এ ছাড়া ত্বকের সংক্রমণ, ক্ষত, আঘাত বা কাটা ছেঁড়া, সানবার্ন, ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি প্রভৃতি কারণে সোরিয়াসিস হতে পারে। 

চিকিৎসা :

  সোরিয়াসিস একেবারে নির্মূলযোগ্য রোগ নয়, তবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। নিয়মিত সঠিক চিকিৎসা নিলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এখন নতুন নতুন অনেক চিকিৎসা বের হয়েছে এবং এর অনেক ভালো ওষুধ আমাদের দেশেই আছে। তবে আমরা  চেষ্টা করি কম মাত্রার ওষুধ দিয়ে নিয়ম-কানুন মেনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। পরিশেষে বলতে পারি সোরিয়াসিসকে মোটেও অবহেলা করা উচিত না, শুরুতেই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা নেওয়া উচিত। 

 

লেখক: চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ ও চীফ কনসালট্যান্ট, কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার। যোগাযোগ- ০১৭১১৪৪০৫৫৮

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status