শরীর ও মন
পেটে ব্যথা পিত্তথলির ক্যান্সার
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুর রহমান
৩১ আগস্ট ২০২২, বুধবার
সালেহা বেগম (ছদ্মনাম)। বয়স ৭২ বছর। পেটে ব্যথা। ওষুধ খান যখন পেটে ব্যথা ওঠে। গ্রামের পল্লী চিকিৎসক, ওষুধের দোকানদারদের পরামর্শে। ওষুধেই ব্যথা কমে বলে তেমন আমল দেন না। ভালোই চলছিল। সময় পার হতে থাকলো। দিন যতো পার হতে থাকলো ব্যথার তীব্রতা ততই বাড়তে থাকলো। ওষুধে আর কাজ হচ্ছে না। ব্যথা আর কমছে না। সঙ্গে আরও কিছু নতুন উপসর্গ যোগ হয়েছে। যেমন জ্বর, বমি ও বমি ভাব। জ্বর যা ব্যথার সঙ্গে যোগ হলো। প্রচণ্ড বেগে জ্বর আসে, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হয়। কয়েক ঘণ্টা থাকে। এরপর ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে। প্রথমদিকে ৫/৬ মাস পর পর ব্যথা হতো, ব্যথার সঙ্গে জ্বর আসতো। দিন যতো যেতে লাগলো অসুখের তীব্রতা তত বাড়তে লাগলো। এখন প্রতি মাসে ব্যথা হচ্ছে। প্রতি মাসে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। একটি পরীক্ষার দ্বারাই বোঝা গেল রোগটি। যা হলো আলট্রাসনোগ্রাফি।
এই আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট হলো পিত্তথলীর পাথর। আরও অনেক পরীক্ষা করা হলো। যথা লিভার ফাংশান টেস্ট, সিটি স্ক্যান, এমআর সিপি, সহ নানাবিধ পরীক্ষা। যার দ্বারা প্রমাণ করা হলো রোগটির বর্তমান অবস্থা, এর সঙ্গে ক্যানসার আছে কিনা সেটাও জানার প্রয়োজন পড়লো। আলট্রাসনোগ্রাফি ও সিটি স্ক্যান রিপোর্টের দ্বারা মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেল। রোগীটির শারীরিক অবস্থা নির্ণয়ের জন্য এবং অপারেশনের উপযোগী কিনা তা জানার জন্য আরও অনেক পরীক্ষার প্রয়োজন হলো। সবকিছু জানার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো সার্জারি করতে হবে। রোগী ও তার নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে বিষয়টি খোলামেলা আলোচনা হলো। অপারেশন ও তার ফলাফল, অপারেশন পরবর্তী জটিলতা, সফলতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে তারা সম্মতি প্রদান করার পর সার্জারি করা হয়েছে। সার্জারি করার সময় দেখা গেল পিত্তথলি পাথরে পূর্ণ।
তবে পেটে অতিমাত্রায় পানি যা আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে সামান্য বলে উল্লেখ ছিল। পেটের পেরিটোনিয়ামে মসুরির দানার ন্যায় অসংখ্য গুঠি যা প্রাথমিকভাবে মনে হবে পেরিটোনিয়াল সিডলিং, সাধারণত সেকেন্ডারি ক্যানসার বলে ধারণা করা হয়। পিত্তথলি কেটে ফেলা হয়েছে, পেরিটোনিয়ার টিস্যুর অংশ কেটে ফেলা হয়েছে, দু’টোই একত্রে বায়োপসি করা হলো। পিত্তথলির রিপোর্টে ক্যানসার যা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে বলা যায়, পেরিটোনিয়াল টিস্যুতে ক্যানসার প্রমাণিত হলো। এ রকম অবস্থার নাম এডভান্স ক্যানসার, চতুর্থ স্টেজ। সফল সার্জারি। রোগী হাসি মুখে বাড়ি ফিরেছেন। তবে সমস্যা দেখা দেবে। দ্রুত রোগী খারাপ হয়ে যাবে। রোগীকে পরবর্তী কেমোথেরাপি নিতে হবে। ফলাফল সন্তোষজনক নাও হতে পারে।
পিত্তথলির ক্যানসারে সাধারণত শুরুতেই নির্ণয়ের হার খুবই কম। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসার যখন পিত্তথলির ৪টা স্তরের প্রথম স্তরে থাকে তখন যদি ধরা পড়ে ও সার্জারি করা যায় তবে সফলতার হার খুবই ভালো। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এ পর্যায়ে রোগ ধরা পড়ে খুবই কম। আমাদের দেশের বাস্তবতা আরও খারাপ। এ ধরনের রোগীরা সাধারণত কুপরামর্শের স্বীকার। তাই সফলতা পাওয়া দুষ্কর।
লেখক: হেপাটোবিলিয়ারি প্যানক্রিয়েটিক অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। চেম্বার: লিভারগ্যাস্ট্রিক স্পেশালাইজড হাসপাতাল, বাড়ি নং-৭৫ সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। সেল-০১৮৭৯-১৪৩০৫৭, ০১৭১৫-৫১৭৬২১।