শরীর ও মন
পিত্তথলির পাথর হলে
ডা. আনহারুর রহমান
২৫ আগস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবার
বর্তমানে পিত্তথলির পাথর একটি সচরাচর রোগ এবং সারা বিশ্বের মানুষের মতো আমাদের দেশের মানুষও রোগটিতে কম বেশি ভুগে থাকেন। শুরুতে রোগটির চিকিৎসা না করলে পরবর্তীতে এটির মারাত্মক জটিলতা তৈরি হয়। তাই রোগটি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা অর্জন, রোগটির জটিলতাগুলো কী কী এবং এই রোগ নিরাময়ের উপায়গুলো কী কী তা জানা খুবই জরুরি।
পিত্তথলি
পিত্তথলি আমাদের পৌষ্টিক তন্ত্রের একটি অঙ্গ যা আমাদের যকৃত বা লিভারের নিচের দিকে অবস্থান করে। এটি নাশপাতি আকৃতির মতো হয়। এ থলেটির দৈর্ঘ্য ৭ থেকে ১০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ৩ সেন্টিমিটার। পিত্তরস পিত্তথলি থেকে সিষ্টিকনালী ও পিত্তনালী দিয়ে পৌষ্টিক নালীতে আসে।
দেহে পিত্তথলির কাজ
পিত্তরস তৈরি হয় যকৃত বা লিভারে। তবে পিত্তথলিতে পিত্তরস জমা হয়। পিত্তরস আমাদের দেহে চর্বি জাতীয় খাবার হজম করে।
পিত্তথলিতে পাথর
পিত্তথলিতে পিত্তরস যখন শক্ত আকার ধারণ করে তখন তাকে পিত্তপাথর বলে। আর পিত্তরস যখন শক্ত পাথর হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে নরম বালুর মতো থাকে তখন তাকে Gallbladder sludge বলে। এটাকে এক ধরনের নরম পাথর বলা যেতে পারে।
পাথর হওয়ার কারণ
পিত্তপাথর তৈরি হওয়ার অনেক কারণ আছে। যেকোনো কারণেই হোক পিত্তথলিতে পিত্তরস কোনো কারণে যদি ঘন বা ঘনীভূত হয় তাহলে সেটা পাথরে রূপান্তরিত হয়। আর এই ঘটনাটি ঘটে বিভিন্ন কারণে- ১. পিত্তথলিতে বারংবার ইনফেকশন। ২. হরমোনের প্রভাবে মেয়েদের ক্ষেত্রে। ৩. দেহে কলোস্টেরল বেশি থাকা। ৪. হেমোলাইটিক রোগ।
আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে যারা-
সাধারণত বয়স্ক পুরুষ ও নারীরা বেশি আক্রান্ত হয়। তবে ছোট বাচ্চা ও কিশোরীদের হতে পারে। এক্ষেত্রে বাচ্চারা সাধারণত থ্যালাসেমিয়া বা হিমোলাইটিক রোগে আক্রান্ত থাকে।
ঝুঁকিতে যারা-
আমরা সাধারণত বলে থাকি 4f,fatty, female, forty age, fair মানুষের বেশি এই রোগ হয়।
সমস্যা বা জটিলতাসমূহ
প্রথম সমস্যা হলো পিত্ত পাথরের ইনফেকশন। যাকে মেডিকেল ভাষায় কলিসিস্টিইটাইটিস বলে। এ ছাড়া দেখা যায়- পিত্তথলি ফুলে যাওয়া, পিত্তথলিতে পুঁজ হওয়া, পিত্তথলিতে পচে যাওয়া, জন্ডিস হওয়া, অগ্নাশয়ের প্রদাহ, পৌষ্টিকনালির অবস্ট্রাকশন এমন কী দীর্ঘদিন পিত্তথলির পাথরের কারণে পিত্তথলিতে ক্যান্সার হতে পারে।
উপসর্গসমূহ
এই রোগটি লক্ষণ বা উপসর্গের কারণে সাধারণত ২ ভাগে রোগী আসে।
১. উপসর্গবিহীন গ্রুপ
(পাথর আছে কিন্তু ব্যথা নাই, রোগী অন্য কারণে আলট্রাসনোগ্রাম (Ultrasonogram) করেও দেখা যায় পাথর এসেছে।
২. উপসর্গযুক্ত গ্রুপ
প্রচণ্ড ব্যথা সাধারণত পাঁজরের ডানদিকে নিচে যা অনেক সময় বাম কাঁধে পিঠের দিকেও হতে পারে। বমি ও জ্বর হতে পারে। এই উপসর্গগুলো সাধারণত চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়ার পর শুরু হয়।
যে পরীক্ষার মাধ্যমে পিত্তথলির পাথর বোঝা যায়:
সাধারণত আলট্রাসনোগ্রাম (Ultrasonogram) করে whole abdormen বোঝা যায়।
পাথর হলে করণীয়:
দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এর ব্যথা হলে দু’টি চিকিৎসা নিয়ে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। ১. প্রাথমিক চিকিৎসা ও রোগীর ব্যথা কমে গেলে ৬ সপ্তাহ পর সার্জারি করাতে হতে পারে। ২. রোগী ব্যথা নিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আসলে সার্জারি করা হয়।
পিত্ত পাথরের সার্জিকেল চিকিৎসাগুলো:
পিত্তথলির পাথরের সার্জিকেল চিকিৎসাগুলো হলো পিত্তথলি কেটে ফেলে দেয়া। সেটা ২ ভাগে করা যায়- ১. পেট কেটে ২. পেট ফুটো করে (Minimal invasive technique) মনে রাখা প্রয়োজন পিত্তথলি ফেলে দিলে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ পিত্তরস তৈরি হয় লিভার বা যকৃতের মাধ্যমে।
অপারেশনের পর খাবার হজমের কোনো অসুবিধা হয় কিনা-
দেখা যায় প্রথমে চর্বি বিপাকে অস্বস্তি লাগলেও পরে আর কোনো অসুবিধা হয় না।
লেখক: লিভার, অগ্নাশয়, পিত্তথলি ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ সার্জন। চেম্বার-সেন্ট্রাল হাসপাতাল লিমিটেড, ধানমণ্ডি, ঢাকা। সেল-০১৭৭৭০৭৭৭৬৪
মন্তব্য করুন
শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন
শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]