ঢাকা, ৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শরীর ও মন

শিশুর ডায়াবেটিস হলে

ডা. সৈয়দা নাফিসা ইসলাম
২২ আগস্ট ২০২২, সোমবার
mzamin

বর্তমানে শিশু-কিশোরদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ প্রবণতা প্রায় বছরে প্রায় ৩ শতাংশ হারে বেড়ে চলেছে শিশু-কিশোরদের ডায়াবেটিস। আর আক্রান্ত শিশুরা জীবনের একটি বড় সময়জুড়ে রক্তে শর্করার আধিক্যে ভোগে, পরিণত বয়সে এদের হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা, অন্ধত্ব বা পা হারানোর মতো জটিলতার আশঙ্কাও অনেক বেশি থাকে। কারণ কম বয়সে ও শিশু বয়সে যে ডায়াবেটিস হয়, তা টাইপ-১ ডায়াবেটিস নামে পরিচিত। জন্ম ও পরিবেশগত  বিভিন্ন কারণে এই ডায়াবেটিস হয়। এতে এক ধরনের ইমিউন সিস্টেম জটিলতায় দেহের অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষগুলো দ্রুত ধ্বংস হয়ে ইনসুলিন উৎপাদনের ক্ষমতা হারিয়ে  ফেলে। ফলে বাকি জীবন তাকে ইনসুলিনের ওপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকতে হয়। অবশ্য বাংলাদেশে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের প্রকোপ অনেক কম। তবে বড়দের মধ্যে দেখা যাওয়া টাইপ-২ ডায়াবেটিসও  আজকাল কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের  মধ্যে দেখা যাচ্ছে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে ইদানীং ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা অত্যধিক হারে বেড়েছে, বেড়েছে ফাস্ট ফুড,  কোমল পানীয় ও জাংক ফুডের প্রতি আসক্তি। সমানতালে কমছে খেলাধুলার বা কায়িক শ্রমের সুযোগ। 

কম্পিউটার বা টেলিভিশনের সামনে বসে সময় কাটানোর অভ্যাসও ওজন বাড়ার জন্য দায়ী। সব মিলিয়ে যে রোগ হওয়ার কথা চল্লিশ বছরে বা তারও পরে, সেই রোগে  কৈশোর বা তারুণ্যেই আক্রান্ত হচ্ছে তারা। কিছু ভাইরাস ইনফেকশনের জটিলতা হিসেবে ডায়াবেটিস হতে পারে। তাই শিশুকে অসুস্থ মনে হলে দেরি না করে  ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ওজনাধিক্য ও স্থ্থূল মেয়ে শিশুরা কৈশোরে ডায়াবেটিসের সঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম নামের আরেক ধরনের জটিল সমস্যায়। অল্প বয়সে ডায়াবেটিস হওয়ার পেছনে মাতৃগর্ভে অপুষ্টি ও কম ওজনে ভূমিষ্ঠ হওয়ার ইতিহাসও গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া জন্মগত কিছু রোগ এবং হরমোনজনিত কিছু সমস্যায় অল্প বয়সেই ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। কিছু তরুণ-তরুণী অগ্ন্যাশয়ে পাথর হওয়ার কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ফাইব্রো ক্যালকুলাস প্যানক্রিয়েটিক ডিজিজ নামে পরিচিত। তাই শিশু-কিশোর বয়সে ডায়াবেটিস বহুমাত্রিক  বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হতে পারে। 

লক্ষণসমূহ 

তৃঞ্চা বেড়ে যাওয়া, রাতের বেলায় অতিরিক্ত প্রস্রাব করা, ক্লান্ত লাগা, সঠিক খাওয়ার পরও অকারণে ওজন কমে যাওয়া, কেটে গেলে ঘা না শুকানো, মুখে অস্বাভাবিক গন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখে ঝাঁপসা দেখা, চামড়ার সমস্যা, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। 

চিকিৎসা 

এখন পর্যন্ত ইনসুলিনই শিশুদের উপযোগী একমাত্র নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ চিকিৎসা। যদিও কৈশোরে (১০ বছর বয়সের ওপর) ওজনাধিক্য বা স্থ্থূল টাইপ-২ ডায়াবেটিক শিশুকে  মেটফরমিন ওষুধ দিয়েও চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় জীবনযাত্রা ও মন-মানসিকতা, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই চলবে  রোগীর চিকিৎসা। শিশুদের চিকিৎসায় অভিভাবক, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রতিবেশী এমনকি বন্ধুবান্ধবদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একটি বিশেষ বয়সের পর ধীরে ধীরে ইনসুলিন ব্যবহার, রক্তে শর্করা পরিমাপ করা, নিজের সমস্যা ও জটিলতা দ্রুত শনাক্ত করার দক্ষতা অর্জন করতে শিশু-কিশোরদের পর্যায়ক্রমে শিক্ষিত করে তুলতে হয়। শিশুর সঠিক, পরিমিত ও সময়ানুবর্তী খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা,  খেলাধুলাসহ স্বাভাবিক জীবনযাপনে মানিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা এবং বিপদ চিনে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে পারার প্রশিক্ষণ- এ সবই চিকিৎসার আওতায় পড়ে। ডায়াবেটিস একটি জীবনব্যাপী ও দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা। তাই এ  রোগে মানসিক বিপর্যয়ের আশঙ্কাও বেশি। শিশু-কিশোরদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন, ইতিবাচক আচরণ ও সহানুভূতিশীল মনোভাব ছাড়া তাই তাদের এ অবস্থায় পূর্ণ বিকাশ অসম্ভব। 

খাবার

 যেসব খাবারে দ্রুত রক্তের শর্করা বেড়ে যায় সেগুলো যেমন- শরবত, কোমল পানীয়, চকলেট, আইসক্রিম ও মিষ্টি জাতীয় ফল এগুলো না খাওয়া। প্রতিদিন সুষম খাবার খাওয়া। যেমন- সবজি, কম মিষ্টি ফল, বিভিন্ন বাদাম, ডাল, টক দই, সাদা মাংস বা মাছ, সয়াবিন, ডিম ইত্যাদি রোগীদের জন্য ভালো খাবার। 

ব্যায়াম 

ডায়াবেটিস হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়ামের সাথে সাথে রক্তের শর্করার পরিবর্তন হয় তাই নতুন করে ব্যায়াম শুরু করলে অবশ্যই রক্তের শর্করার মাত্রা পরিমাপ করতে হবে এবং প্রয়োজনে ইনসুলিনের ডোজ পরিবর্তন করতে হবে। 

প্রতিরোধ

 টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধের উপায় এখনো অজানা। তবে সার্বিক সচেতনতা, জীবনযাপন ও অভ্যাসে ইতিবাচক পরিবর্তন কিছুটা প্রতিরোধ করতে পারে।   শৈশবে যারা ওজনাধিক্য ও স্থ্থূলতায় ভোগে, তাদের ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। সঠিক পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে শিশুদের  ছোটবেলা থেকেই সচেতন করে তুলতে হবে। বর্জন করতে হবে ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য। বাড়িতে তৈরি পুষ্টিকর খাবার ও টিফিনে তাদের অভ্যস্ত করুন, প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবারের প্রতি উৎসাহী করতে হবে। প্রত্যহ নিয়ম করে খেলাধুলা বা কায়িক শ্রম করা দরকার। 

 

লেখক: কনসালটেন্ট, শিশু বিভাগ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চেম্বার: (১) ডা. নাফিসা’স চাইল্ড কেয়ার শাহ মখদুম, রাজশাহী।  (২) আমানা হাসপাতাল, ঝাউতলী মোড়, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী। মোবাইল-০১৯৮৪১৪৯০৪৯

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status